চিনের পর এবার মমতার শিকাগোর সফর বাতিল
নিছক কাকতালীয়, না অর্থবহ? রাজনৈতিক মহলে ঘুরছে এই প্রশ্ন। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল হওয়ার পরে এবার বাতিল হয়েছে তার শিকাগো সফরও। খবর: আনন্দবাজার
আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশন। যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ১১ জুন হঠাৎ তাকে চিঠি দিয়ে ২৬ আগস্টের ওই অনুষ্ঠান বাতিল করার কথা জানায় শিকাগোর বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি।
সম্পর্কিত খবর
কেন? সোসাইটির অধ্যক্ষ স্বামী ঈশাত্মানন্দ চিঠিতে মমতাকে লিখেছেন, রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বামী অভিরামানন্দের আকস্মিক মৃত্যু (বেলুড়ে গঙ্গা থেকে ৮ জুন তার দেহ মেলে) এবং অন্য কিছু ‘অপ্রত্যাশিত অসুবিধার’ জন্য অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হচ্ছে। যদিও প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া নেওয়া থেকে শুরু করে অন্য নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছিল বলে রামকৃষ্ণ মিশনের দাবি।
এখানেই বিষয়টি খুব ‘সরল’ বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও কিছু দিনের মধ্যেই শিকাগো যাওয়ার কথা। সেখানে বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর উপলক্ষেই মোদী অন্য একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে খবর। ওখানকার কোনও একটি ‘হিন্দু’ সংগঠনের নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর সফরের গুরুত্ব ‘বাড়াতে’ মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর বাতিল করা হল বলে মনে করা হচ্ছে। মমতা সেখানে গেলে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হতে পারে বলেও অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।
রাজনৈতিক মহলে অনেকের ধারণা, মমতার সফর নিয়ে চিন যত উৎসাহী ছিল, প্রধানমন্ত্রীর দফতর সেভাবে উৎসাহী ছিল না।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এক নেতার মন্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীকে যেতে বলেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী তার সফর চূড়ান্ত করে দিল্লিকে জানিয়ে দেন। কিন্তু আড়াই মাস কেটে গিয়ে যাত্রার চার ঘণ্টা আগেও তিনি জানতে পারলেন না, কার সঙ্গে দেখা করবেন ওখানে। এটা কি খুব স্বাভাবিক?
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র অবশ্য বলছে, আসল কারণ হল চিনা প্রোটোকল। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি গেলে রাষ্ট্রীয় স্তরে চিনা প্রতিনিধিরা দেখা করেন। কিন্তু কোনও প্রাদেশিক নেতা চিনে গেলে তার সঙ্গে প্রাদেশিক নেতাই দেখা করবেন। রাষ্ট্রীয় স্তরের কেউ দেখা করবেন না। এই প্রোটোকল ভাঙতে চিন কখনও রাজি হয় না।
চিনের পক্ষ থেকে কলকাতায় লিখিত ভাবে বলা হয়েছিল, বেজিংয়ে মমতার সঙ্গে সেই দেশের কোনও ‘সিনিয়র’ রাজনৈতিক নেতা দেখা করবেন। দেখা করবেন কুনমিংয়ের মেয়রও। কিন্তু দলের কোন ‘সিনিয়র’ নেতা দেখা করবেন, তা স্পষ্ট জানানো হল না কেন, সেই প্রশ্ন এখনও তোলা হচ্ছে।
শিকাগোর ক্ষেত্রে সর্বশেষ পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। নবান্নের খবর, দিন কয়েক আগে রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে ফের জানানো হয়েছে, মমতার ২৬ অগস্টের অনুষ্ঠান ‘পিছিয়ে’ দেওয়া হয়েছে, একেবারে বাতিল হয়নি। অভিযোগ, শিকাগোয় একটি ভুঁইফোড় সংগঠন তৈরি করে স্থানীয় বেশ কিছু অনাবাসী ভারতীয় সেখানকার রামকৃষ্ণ মিশন, বেদান্ত সোসাইটিকে হুমকি দিতে শুরু করেছেন, মমতা সেখানে গেলেই তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে গো-ব্যাক স্লোগান তোলা হবে। বিক্ষোভ দেখানো হবে বিমানবন্দরেই।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী আপাতত এ নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবছেন না বলেই খবর। তিনি শিকাগো না গেলেও ওই সময় অন্য কর্মসূচিতে আমেরিকা যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন।