• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

জনতার প্রতিবাদে উত্তাল ফ্রান্স

প্রকাশ:  ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জ্বালানি তেলের ওপর কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার প্রতিবাদে গত দুইদিনে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফ্রান্স। তবে আন্দোলনের মুখে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার পরেও রাজধানী প্যারিসসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ পরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

রোববার (৯ ডিসেম্বর) এ আন্দোলন নতুন উদ্যমে মাথাচাড়া দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে দেশটির সরকার।

প্রায় ২ হাজার জনকে আটক করার পরেও বাঁধ মানেনি জনতা। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেটকে উপেক্ষা করে দিনভর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে, দোকানপাট ভেঙে-গুঁড়িয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে হলুদ জ্যাকেট পরা বিক্ষোভকারীদের দল। পুরো ফ্রান্স জুড়ে অন্তত দেড় লক্ষাধিক বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়।

তাঁরা জানায়, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে মোতায়েন ছিল ৯০ হাজার পুলিশ। শুধু প্যারিসেই ৮ হাজার পুলিশ ছিল। রাস্তায় টহল দেয় ১২টি সাঁজোয়া গাড়ি। তারপরেও প্যারিসে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। আগুন লাগিয়ে দেয় গাড়িতে।

উত্তাল এ পরিস্থিতি সামলাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আন্দোলন বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সেইসঙ্গে তিনি দেশের এবিষয়ে সোমবার (১০ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন।

প্রেসিডেন্টের এলিসি দফতর থেকে বলা হয়, ম্যাক্রোঁ স্থানীয় সময় রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। দেশটির সরকারি এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের কথা শুনবেন প্রেসিডেন্ট। তবে কোনও যাদুকাঠির ছোঁয়ায় ‘ইয়েলো ভেস্ট’ বিক্ষোভকারীদের সব সমস্যা উধাও হয়ে যাবে না।

দেশব্যাপী সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরুর চার সপ্তাহ পর ম্যাক্রোঁ এই প্রথমবারের মতো এ সংকট নিয়ে প্রকাশে কথা বলতে যাচ্ছেন।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গতকাল প্যারিসের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পহেলা ডিসেম্বরের তুলনায় বেশি। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, প্রতিবাদীদের দিকে রবার বুলেট ছুঁড়ছে পুলিশ। আহত হন কয়েক জন সংবাদকর্মীও। আহত হয়েছেন ১৭ জন পুলিশ অফিসার। ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে, টানা চার সপ্তাহের বিক্ষোভে বিধ্বস্ত ফ্রান্সে ‘জাতীয় ঐক্য’ ফেরানোর ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ। এদিন প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ বলেন, কোনও করই আমাদের জাতীয় ঐক্যকে ভাঙতে পারবে না। আলোচনার মাধ্যমে, কাজের মাধ্যমে এবং একজোট হওয়ার মাধ্যমে আমাদের সেই ঐক্য পুনর্গঠন করতে হবে।

উল্লেখ্য, আগামী বাজেটে জ্বালানির দাম বাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ইমানুয়েল মাক্রোঁকে শেষ জনসমক্ষে দেখা যায় গত ২৭ নভেম্বর। সে সময় তিনি বলেছিলেন, গুন্ডাদের গুন্ডামির জন্য সরকার নীতি বদলাবে না। যদিও সেই নীতি বদলাতেই হয়েছে তাকে। চাপের মুখে জ্বালানির দাম বাড়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করেছে ফ্রান্স সরকার। কূটনীতিকরা বলছেন, মাঝখান থেকে ম্যাক্রো'র কয়েক সপ্তাহের ‘নীরবতা’ দেশবাসীর ক্ষোভে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।

প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেলের উপর বাড়তি কর আরোপের পরিকল্পনা নেয়ায় চার সপ্তাহ আগে এই বিক্ষোভের সূচনা হয়। আন্দোলনকারীরা ‘ইয়েলো ভেস্ট’ পরে রাস্তায় নেমে আসেন।

বিক্ষোভের কারণে পরবর্তীতে বাড়তি কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারীরা। বরং ফ্রান্সে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে যাওয়া এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

পিবিডি/আরিফ

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ,ফ্রান্স
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close