• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মিষ্টির ব্যবসার আড়ালে অবৈধ সোনার কারবার

প্রকাশ:  ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৪৮ | আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে এস কে মোহাম্মদ আলী। তার ব্যবসা জীবন শুরু আলী সুইটস নামে একটি মিষ্টির দোকান দিয়ে। রাজধানীর ৭৫৪ নম্বর সাত মসজিদ রোডে সেই দোকান এখন চলছে ‘ফুলকলি’ নামে। অংশীদার নিয়েছেন তিনি। তবে মিষ্টির ব্যবসার আড়ালে তিনি করছেন অবৈধ স্বর্ণের কারবার। বিদেশ থেকে চোরাই পথে তিনি দেশে নিয়ে আসেন স্বর্ণ।

অবৈধ এই কারবারের মাধ্যমে তিনি অল্প দিনেই কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গড়েছেন নামে-বেনামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বের হয়েছে তার সম্পদের হিসাব।

সম্পর্কিত খবর

    দুদক সূত্র মতে, তাঁতীবাজারে মোহাম্মদ আলীর স্পিড মানি এক্সচেঞ্জের নামে একটি মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসাও রয়েছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে তিনি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে শেয়ার ব্যবসা করতেন। রাজউকের পূর্বাচলে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ১০ কাঠা জায়গাও রয়েছে। সিলেট শহরে ৯৫ লাখ ১১ হাজার ৩৭৫ টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন ছয় তলা একটি বাড়ি।

    ২০১৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এক অভিযানে শেখ মোহাম্মদ আলীর পল্টনের (বাসা/ফ্ল্যাট নং-৬/এ, ২৯/১) সাত তলা বাসা থেকে উদ্ধার করে পাঁচ বস্তা মুদ্রা, ৬১ কেজি ওজনের ৫২৮টি স্বর্ণের বার। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ৫০০ মানের ৩২৯৯টি সৌদি রিয়াল যার মূল্য ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার। ১ হাজার টাকা মানের ৩১ হাজার ৮০০টি নোটে ৩ কোটি ১৮ হাজার টাকা। ৫০০ টাকা মানের ৩৮ হাজার নোটে ১ কোটি ৯০ হাজার টাকা। ১০০ টাকা মানের ১ হাজার ৯০০টি নোটে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সর্বমোট ৫ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার দেশি ও ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার বিদেশি টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই সময় তার বালিশের কভার, সোফার বালিশের কভার, জাজিম তোষকের নিচে, আলমিরা ও বাসার ফলস সিলিংয়ের উপর থেকে স্বর্ণের বার ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

    এছাড়া শেখ মোহাম্মদ আলীর পুরানা পল্টনে অপর একটি (বাসা/ফ্ল্যাট নং-১১সি,২৯/১) বাসায় অভিযান চালিয়ে ১ হাজার টাকা নোটের ৪০ লাখ, ৫০০ টাকা নোটের ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে। পরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে এসকে মোহাম্মদ আলীর নামে পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

    দুদক সূত্রে জানা যায়, শেখ মোহাম্মদ আলীর দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধান ও যাচাই করার জন্য উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন ও উপ-সহকারী পরিচালক ফাতেমা সরকারকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। অনুসন্ধানকারী টিম শেখ মোহাম্মদ আলীর সম্পদ বিবরণী, আয়কর সংক্রান্ত রেকর্ড, বিভিন্ন অফিসে সার্চের মাধ্যমে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও আসামির প্রতিনিধি দ্বারা প্রেরিত রেকর্ড পর্যালোচনা করেন।

    পর্যালোচনাকালে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ১২ই জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে এস কে মোহাম্মদ আলীর নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়। যা তিনি গ্রহণ করে পরবর্তীতে একই বছরের ৩১শে আগস্ট কমিশনের সচিব বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে শেখ মোহাম্মদ আলী ৪ কোটি ৮৮ লাখ ৬৬ হাজার ১৫০ টাকার স্থাবর ও ২৫ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৩ টাকার অস্থাবর মোট ৩০ কোটি ৭৮ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৩ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দেন।

    দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে তার আয়কর নথিতে পাওয়া তথ্যাদির মিল রয়েছে। তবে আয়কর নথিতে দেখা যায়, শেখ মোহাম্মদ আলী একাধিকবার বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা/অপ্রদর্শিত টাকা এসআর মূলে বৈধ করেছেন। আর এ থেকে দুদক নিশ্চিত হয় আয়কর বিভাগে ঘোষিত সম্পদের মধ্যেও কিছু কালো, অবৈধ ও অপ্রদর্শিত টাকা ছিল যা বিভিন্ন সময়ে এসআরও মূলে বৈধ করেছেন।

    এছাড়া তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার গোপনকৃত ও জ্ঞাত আয়বহির্র্ভূত রাজউকের পূর্বাচলে ক্রয়কৃত ৩০ লাখ টাকার ১০ কাঠা জমি, সিলেট শহরে ৯৫ লাখ ১১ হাজার ৩৭৫ টাকার ছয় তলা বাড়ি, ৩০ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার সাড়ে ৬১ কেজি স্বর্ণ ও ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা ও ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার দেশি মুদ্রার হিসাব জমা দেননি।

    অসৎ উদ্দেশ্যে তিনি তা গোপন করেছেন। তার মোট ৭১ কোটি ৭০ লাখ ৭৭ হাজার ৯৯৮ টাকার সম্পদের মধ্যে ৪০ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। যা তিনি নিজ নামে অর্জন পূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

    পরে ১৩ই নভেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে এস কে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close