• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নতুন বছরের আনন্দের ভাগাভাগি নতুন পাঠ্য বইয়ের সাথে

প্রকাশ:  ০৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১২
পারভেজ আহমেদ

রাস্তা দিয়ে সেদিন হাটছিলাম স্কুল ফেরত কিছু শিশুর সাথে সাক্ষাত। চোখ, মুখে এক অজানা আনন্দ নতুন বই পাওয়ার। আমরা যখন ছোট ছিলাম এই একই ক্রিয়া আমাদের মধ্যেও বিদ্যমান ছিলো। নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর পর এক অসাধারণ গন্ধ মস্তিষ্কের মধ্যে এক আনন্দের মিছিল সৃষ্টি করতো। আমাদের সময় নতুন বইয়ের সল্পতার কারণে ১ম,২য়,৩য় যারা তারা নতুন বই পেত। আর সবাই পুরনো নতুন এর সমন্বয়। এই নতুন বই পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে আমাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতো কে এক থেকে তিন এর মধ্যে থাকবে। সরকারের সব থেকে বড় সফলতা হলো বছরের শুরুতে সকল শিক্ষার্থীর কাছে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রদান। খাদিমের চা বাগান এলাকায় গিয়েছিলাম বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক যে কতটা জরুরী তা অনুধাবন করে এসেছি। ৮৫ টাকা একজন চা শ্রমিকের মজুরী জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে ক্লান্ত। যখন সে শুনলো বাগানের মধ্যে ম্যানেজার বাবু নেয়া হবে বাইরে থেকে একটা ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। আমাদের চা বাগানে কেন বাইরে থেকে ম্যানেজার পদে নেয়া হবে,তারা আন্দোলন করলো যে বাগানের ভিতর থেকেই নিতে হবে। অর্থনীতির ভাষায় একটা শর্টেজ তৈরী হলো তাদের মধ্য থেকে কে হবে? শিক্ষায় দীক্ষায় তারা অনেক পিছিয়ে।

তখন তাদের মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করলো যে আমাদের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে। তাদের স্বপ্নটা অনেক বড় না ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবী, পুলিশ অফিসার না, ছেলে বা মেয়েকে বানাবে বাগানের ম্যানেজার। অভাব অনটনের সংসার তাদের নিত্যনৈমিত্তিক জিনিস যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয়, তারমধ্যে ছেলেমেয়ের শিক্ষার খরচ চালানোটা অনেক কষ্টসাধ্য। তাই সরকার যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করে যাচ্ছে তা এইসব মানুষের জন্য আশার আলো এবং সরকারের জন্য বিশাল অর্জন। তাই বাগানের একজন সাধারণ শ্রমিক চা বাগানের ভিতরে একটা মাটির স্কুল দেখিয়ে সাহসের সাথে মনোবল নিয়ে বলে উঠলো এই সরকারের সময় আমাদের বাগানে একটা স্কুল তৈরী হবে। এইধরনের প্রত্যাশায় বুঝা যায় সরকার জনমনে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। এইগুলো খাদিম চা বাগানের একজন চা শ্রমিকের কথোপকথন। এইরকম স্বপ্ন আমাদেরকে শক্তি দেয় একটি সমাজ বিনির্মাণের কারণ একটা শিক্ষিত জাতি ছাড়া সম্ভব না একটা উন্নত দেশ গড়া। যুগে যুগে যত উন্নয়নের বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিলো সব বিপ্লবে শিক্ষিত তরুণদের অংশগ্রহণ ছিলো লক্ষণীয়। আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা নতুন বই নিয়ে বসে পরবে তাদের স্বপ্ন জয়ের মিশনে। সেই স্বপ্নে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমান সরকার বিনামূল্যে বই থেকে শুরু করে উপবৃত্তির ব্যবস্থাও করেছে যার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মানুষের অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর

    শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আজ লক্ষণীয় যে শেকল থেকে নারীকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন বেগম রোকেয়া আলোকিত করতে চেয়েছিলেন নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একটা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আপনাদের যদি একটা গাছ কাঁটার জন্য কড়াৎ দেয়া হয় আর বলা হয় যে ৫ ঘন্টার ভিতরে আপনাকে গাছটি কাঁটতে হবে আপনি কি করবেন? বেশিরভাগ উত্তর দিয়েছিলো যে আমরা গাছ কাঁটায় ব্যস্ত থাকবো।

    তিনি বলেছিলেন যে, যদি আমাকে বলা হয় তাহলে আমি প্রথমে আমি কড়াৎটাকে ধারালো করবো যখন আমার এই কাজ শেষ হয়ে যাবে তখন আমি গাছটা কাটবো। কারণ যেকোন কাজের প্রাক সূত্র হলো পূর্বপ্রস্তুতি যদি পূর্বপ্রস্তুতি ভাল হয় কাজটিও ভাল হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেই জিনিসটার দিকে নজর দিতে হবে যে পূর্বপ্রস্তুতি, কারণ পূর্বপ্রস্তুতি যদি ভাল না হয় ফলাফল হবে শূন্য যতই শ্রম প্রদান করো যতই মজুরি দাও যতই চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরবরাহ করো। আমাদের এই বিশাল অর্জন নিমিশেই ম্লান হয়ে যায় যখন পি.এস.সি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কোমলমতি শিশুদের হাতে পৌছে যায় পরিক্ষার আগের রাতে। আমাদের সকল শ্রম বিফলে যায় যখন জে.এস.সি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রকাশ হয়। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের যে শুধু দায়ভার তা নয় লজ্জা লাগে সেই সব অভিবাবকদের প্রতি যারা এইরকম অপরাধমূলক পন্থার সাথে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেন সেই শুরুর দিক থেকে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অবহেলা এবং হেয়ালীপনা আমাদের অদূর ভবিষৎ -কে হুমকির মুখে প্রেরণ করবে। একটা জাতির মেরুদণ্ড হলো তার শিক্ষাব্যবস্থা, যদি তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধবংস করে দেয়া হয় তাহলে আর ধবংস করার মতো বাকি আর কিছুই রইলো না। একটা জাতিকে ধবংস করতে হলে তার লাইব্রেরিগুলো ধবংস করলেই হয় অথবা শিক্ষাব্যবস্থার উপর আঘাত হানলেই হয়। একটা জাতির জন্য কতটুকু শক্তি বহন করে তার শিক্ষিত জনশক্তি এবং শিক্ষা ব্যবস্থা তা কল্পনার বাইরে। হিটলার তার নাৎসিবাদ প্রচারের জন্য তার শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করেছিলো নাৎসিবাদের আদর্শ এবং জার্মানির স্কুল কলেজে পাঠদান করানো হতো নাসিৎবাদ। চীনের বিপ্লবী মাও সে তুং তার বিপ্লবকে শক্তিশালী করতে দ্যা রেড বুক নামে একটা বই প্রকাশ করেছিলেন যা তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি পঠিত পুস্তক ছিলো, লাল বইটির আকার এত ছোট এবং এটা বৃষ্টিরোধী ভাইনাল প্লাস্টিক জ্যাকেট দিয়ে মোড়ার কারণ হলো এটি থাকবে সেনাবাহিনীর সামরিক পোশাকের বুকের পকেটে। কিন্তু সামরিক নির্দেশাবলী, সামরিক কৌশল ইত্যাদির। জায়গায় এই বইটি হচ্ছে আদর্শগত বিষয়ে একটি ফিল্ড গাইড। আপনার মনে যদি আদর্শগত বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়, তাহলে বুক পকেট থেকে বইটি বের করুন এবং দেখে নিন এতে কী উপদেশ দেয়া হয়েছে। লেলিন থেকে শুরু করে পৃথিবীর সকল বিপ্লবী নেতা বিপ্লব সম্পূর্ণ হওয়ার পর তাদের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে নজর দিয়েছিলেন। শতভাগ শিক্ষার হার নিশ্চিত করে, আমাদের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে এগিয়ে যেতে হবে এবং ২০২২ সালে গড়ে তুলতে হবে একটা মধ্যম আয়ের দেশ। আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন একটা স্বাধীন দেশ আর আমরা কাঁধে নিয়েছি সেই স্বাধীন দেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করার এক মহান দায়িত্ব। আর সেই দ্বায়িত্বকে যথাযথভাবে পূরণ করতে হলে উদ্ভুত উঠের পিঠ থেকে নামাতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। বের করতে হবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত সেইসব হোতাদের এবং করতে হবে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের একটি চিরস্থায়ী পরিকল্পনা। একবার একজন টিভি টক শো-তে বলেছিলেন, আমরা যখন স্কুলে যেতাম তখন স্কুলের সামনে বিশাল খেলার মাঠ দেখে আমাদের হৃদয়ের বিশালতা বেড়ে যেত। উনার কথার প্রেক্ষিতে বুঝা যায় বিল্ডিং এ বিল্ডিং এ গড়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সবার মতো উনারও একটা ক্ষোভ রয়েছে যা প্রকাশ করার জায়গা পাচ্ছিলেন না। শিক্ষাকে বাণিজ্যকরণ থেকে বিরত রাখার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকতে হবে। দুর্নীতির লাঘাম টেনে ধরতে হবে শক্ত করে কারণ শিক্ষাখাতের উপর নির্ভরশীল আমাদের পুরো জাতি এবং জাতির ভবিষৎ। যারা সংশ্লিষ্ট খাতের সাথে জড়িত তাদেরকে এই কাজ পেশা হিসাবে নয় ইবাদত হিসাবে করতে হবে । পরামর্শ নেয়া যেতে পারে বহির্বিশ্বে অবস্থানরত নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিযুক্ত আমাদের বাংলাদেশী শিক্ষকদের। দেশের মধ্যে অবস্থানরত বিশাল শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে নেয়া যেতে পারে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের ফর্মূলা ।তাহলেই সম্ভব আলোকিত দেশ, আলোকিত মানুষ, আলোকিত সমাজ।

    লেখক. পারভেজ আহমেদ। শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close