মহান বিজয় দিবসের বিশেষ নাটক ‘অপেক্ষা’
আমরা ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেয়া জাতি। অথচ, এই আমরাই দেশের সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছি না। চারপাশে যেমনি ভাষা বিকৃতির হিড়িক পড়েছে তেমনি দেখা দিয়েছে মানবিক অবক্ষয় আর নীতি-আদর্শের টানাপোড়েন। প্রকৃতপক্ষে, আমরা যখন আমাদের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে পারবো, দেশকে যথার্থভাবে ভালোবাসতে পারবো কেবলমাত্র তখনই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারবো।
এমনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশেষ নাটক ‘অপেক্ষা’র প্রেক্ষাপট। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯ টায় এটিএন বাংলায় প্রচার হবে বিশেষ নাটক ‘অপেক্ষা’। নাটকটি রচনা করেছেন শফিকুর রহমান শান্তনু এবং পরিচালনা করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- সুবর্ণা মুস্তাফা, আনিসুর রহমান মিলন, দীপা খন্দকার, কাজল সুবর্ণ ও আযম খান।
সম্পর্কিত খবর
নাটকে- মাহবুব সাহেব একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। অফিসের বসের মেয়ে তার থিসিসের জন্য মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারা কোন একটি পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইলে মাহবুব তাদেরকে বাসায় নিয়ে যান, কেননা তারাই মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারা পরিবার।
পারিবারিক আয়োজনের এক পর্যায়ে মাহবুবের মা বলেন, তার স্বামী মামুন সাহেব বঙ্গবন্ধুকে খুব ভালোবাসতেন। ৭ মার্চ ভাষণের পর তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হন। কিন্তু সেই যে বাড়ি ছেড়ে তিনি চলে যান আর কখনো ফিরে আসেন নি। তিনি আদৌ বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, তাও তিনি জানেন না। তাই মৃত্যুর আগে তার একমাত্র ইচ্ছা, তার স্বামী বেঁচে আছে না মারা গেছেন এটা জেনে যাওয়া। দেশ স্বাধীনের পরে স্বামীর সন্ধানে তিনি ধারে ধারে ঘুরেছেন। কিন্তু সঠিক কোন তথ্য পান নি। তাই মনকেও বোঝাতে পারেন না। দেশ স্বাধীনের পরে তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করে ছেলেকে পড়ালেখা করাতে হয়েছে।
ছেলে আজ সফল। বড় চাকরি করে। মাঝেমধ্যেই তার জন্য ভালো ভালো খাবার নিয়ে আসে। কিন্তু তার খেতে ইচ্ছা করে না। তাকে দেশ বিদেশের সুন্দর সুন্দর জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তিনি রাজি হন না। কারণ প্রথমত, এবাড়ি ছেড়ে গেলে যদি তার স্বামী ফিরে এসে তাদের না পান তাহলে কষ্ট পাবেন।
দ্বিতীয়ত, স্বামীকে ছেড়ে কোন ভালো খাবার তার খেতে ইচ্ছা করে না, তার স্বামী ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতো। তাই তাকে ছাড়া সুন্দর প্রকৃতি তিনি কখনো দেখতে চান না। মুক্তিযুদ্ধে স্বামীহারা এক স্ত্রীর ৪৭ বছরের অপেক্ষার কথা শুনতে শুনতে উপস্থিত সবার চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। পাশাপাশি মা তাদেরকে একথাও বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরে মানুষের কিছু কাণ্ড দেখলে তার কষ্ট হয়।