মালয়েশিয়ায় সজিবরা উজ্জল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি
দেশ নিয়ে অনেক স্বপ্ন সজিব শিকদার ও শামীম আহমদের। তাই পরিবারের অভাব-অনটনের গ্লানি ও মাতৃভূমির অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করতে ছুটে যান এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত দেশটির রাজধানি শহর কুয়ালালামপুরের বৃহৎ সুপার- শপ কেকে এবং সেভেন এলিভেনে কাজ করছেন বাংলাদেশের এ দুই প্রতিচ্ছবি সজিব আর শামীম।
সম্পর্কিত খবর
মালয়েশিয়ার এ সুপারশপ গুলোতে সজিব আর শামীমই নন। তাদের মতো আরো অনেক বাংলাদেশিরা কাজ করছেন। যারা এই সুপারশপ গুলোতে কাজ করছেন প্রত্যেকেই যেন একেকজন অনন্য বাংলাদেশ। আর এসব পরিশ্রমি কর্মীরাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবার তথা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রেখেছেন, তারাই বাংলাদেশের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
সজিবের গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার আসবাতে। বাবা শ্রিপতি শিকদার মাঠে কাজ করে সংসার চালান।
দুই বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে সজিব সবার ছোট। পড়েছেন রাজধানীর দেশে ইন্টারমেডিয়েট পাসের পর উচ্ছশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাচাতো ভাই অনুপের হাত ধরে ইনফরমেশন টেকনলজি সাবজেক্টে পড়াশুনার জন্য তিন লাখ টাকা খরছ করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়।
২০১৬ সালের পুরো বছর শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। বিধিবাম, সজিবের আর লেখা পড়া হলনা। লেখাপড়ার খরছ যোগাতে না পেরে চলতি বছরের প্রথম দিকে কুয়ালালামপুরের পুডুতে কেকে সুপার শপে ১৩ শ রিঙ্গিতে কাজে যোগ দেন। রজিবের মেধা ও মননশীলতায় গর্বিত মালিক। কাজের দক্ষতা দেখে মালিক পক্ষ রি-হিয়ারিং এর আওতায় সজিবের পারমিট করে নিয়েছেন।
বর্তমানে সজিবের বেতন মাসিক ২ হাজার রিঙ্গিত । নিজের খরছের পর উদ্বৃত টাকা বাবা-মাকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সজিব বলেন, লেখাপড়ার করার কোন কমতি ছিলনা । চেষ্টা করেছি, পারিনি। তবে বাবা মা ভাই বোনের মুখে আহার দিতে পারছি এটাই আমার সফলতা।
লক্ষীপুর সদরের ফয়েজ আহমদের ছেলে শামীম আহমেদ। ৫ ভাই এক বোনের মধ্যে শামীম সবার ছোট। ২০১৪ সালে ষ্টুডেন্ট ভিসায় এসেছেন মালয়েশিয়া। লেখা পড়ার খরছ যোগাতে না পেরে সুপার শপ সেভেন এলিভেনে কাজ করছেন। ষ্টুডেন্ট ভিসা পরিবর্তন করে ৫ মাস ধরে কাজ করছেন সেভেন এলিভেনে।
নানা দেশের কর্মিদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতায় কোনো অংশেই বাংলাদেশি কর্মীরা কম নন। শামীমের কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতায় তাক লাগিয়ে দেয় অন্যদের। এরই মধ্যে শপের কর্তৃপক্ষের মন জয় করে নিয়েছেন শামীম।
শামীম বলেন, প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগছিল। এখন ভালই লাগছে। শামীমের দুঃখ টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারলামনা। তবে পরিবারে সবার মূখে হাসি ফুটাতে এবং দেশের অর্থনীতি চাকাকে সচল করতে প্রবাসে শ্রম দিয়ে যাচ্ছি এটাঁই আমার সফলতা।
শামীম আরো বলেন, ভিন দেশের মানুষের আন্তরিকতা, অগ্রজদের স্নেহ আর বন্ধুদের ভালোবাসায় আমরা নিবিড় বন্ধন গড়ে তুলেছি। সে বন্ধনটাই আসলে একটি বাংলাদেশ।