• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

কমিউনিটি ব্যবসায়িদের বৈঠক

"মালয়েশিয়ায় স্বল্প খরচে কর্মী আনার প্রত্যয়"

প্রকাশ:  ২১ মে ২০১৮, ১১:০০ | আপডেট : ২১ মে ২০১৮, ১১:০১
আহমাদুল কবির (মালয়েশিয়া)

মালয়েশিয়ায় কমিউনিটি ব্যবসায়িদের বৈঠক। "স্বল্প খরচে কর্মী আনার প্রত্যয়"ব্যক্ত করেছেন তারা। রোববার রাতে কুয়ালালামপুরের জ্বালান ইম্বি রসনা বিলাস রেস্টুরেন্টে চলমান জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানী নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্টিত হয়।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে অবৈধভাবে লোক আনা, জিম্মি করা, বেতন থেকে টাকা খাওয়া, দাস করে রাখা বন্ধ হওয়াতে দীর্ঘদিন ধরে হাসিনা সরকারের সমঝোতা জি টু জি প্লাস বন্ধ করার জন্য দলমত নির্বিশেষে একটি চক্র সক্রিয় ছিল। সরকার পরিবর্তনের কারণে তারা এখন পুরনো সুযোগ খুজতে ব্যস্ত। অপর দিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ বিজনেস কমিউনিটি দলমত নির্বিশেষে কুয়ালালামপুর, বুকিত বিনতাং জালান ইমবির রসনা বিলাস রেস্তোরায় মিলিত হয়ে স্বল্প খরচে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার জন্য সভা করেছে।

সম্পর্কিত খবর

    বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা মকবুল হোসেন মুকুলের সভাপতিত্বে ও ব্যাবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান বাদলের সঞ্চালনায় এই বৈঠকে সর্বস্তরের কমিউনিটি ব্যাবসায়ীরা উপস্থিত থেকে তারা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।

    যদি সুষ্ঠু ধারা বজায় রেখে কম খরচে (৪০- ৬০ হাজার টাকায়) লোক আনতে পারে তাহলে গরীব লোকেরা বেচে যায় বলে মনতব্য করেছেন অনেকে। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ১০ লাইসেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ৩৭ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১০ কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট অসহায় শ্রমিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি প্রায় ৩ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানী হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। শ্রমিক রপ্তানিকারকদের পাস কাটিয়ে এ প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যু দেখিয়ে এই সিন্ডিকেট অসহায় শ্রমিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মেডিকেল অনলাইন করতে ৬০০০ টাকা, পাসপোর্ট ফেরত নিতে গেলে ৬০০০ টাকা, ফ্লাইটের সময় কন্ট্রাক পেপারে সাইনের জন্য ৪০০০ টাকা জোর পূর্বক আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না।

    মালয়েশিয়ার (এসপিপিএ) কোম্পানির কথা বলে ১০ কোম্পানির সিন্ডিকেট ভিসা প্রসেসিং খরচ বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে জোর পূর্বক আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় বেড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকার উপরে পড়ে যাচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে মালয়েশিয়ার প্রতি এক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বৈঠকে উপস্থিত সকলের মতামত নিয়ে ৫ টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। (১) আমিন গং এর ১০ কোম্পানির সিন্ডিকেটকে প্রসেসিং খরচ বাবদ ৫০০০ রিঙ্গিত প্রদান করা হবে না। (২) খুব শীঘ্রই কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশনে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। (৩) মাইগ্রেশন খরচ কমাতে হবে। (৪) সকলেই মালয়েশিয়ার আইন মেনে চলবে। (৫) নতুন কোন সিন্ডিকেট মেনে নেয়া হবে না।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, মালয়েশিয়ার কলকারখানায় লোক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এরা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বা মিডিয়া হিসেবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন কাজ করে আসছে এবং অনেকেই ধনী হয়েছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এদের নিকট বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা যে চলমান লোক নিয়োগ বন্ধ যাতে না হয় এজন্য তারা কাজ করবেন।

    অনেকে বলছেন, জি টু জি র মাধ্যমে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় বাংলাদেশ হতে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করে যে দৃষ্টান্ত সরকার স্থাপন করেছে তা বাস্তবায়ন করে দেখাবেন তারা। প্রত্যাশা করা যায় চল্লিশ হাজার না হোক ৬০ হাজার টাকায় কর্মী আনবে। তাহলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নেয়া হবে। এটা শুধু প্রবাসী নয় সকল বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যাশা। জাতি তাকিয়ে আছে আদম ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত এই প্রবাসী বীরেরা কী ৪০-৬০ হাজার টাকায় লোক নিতে পারবেন?

    আওয়ামীলীগ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, ' একটি চক্র মুনাফা করেছে আর একটি চক্র এখন কর্মী আনা বন্ধ করার জন্য চক্রান্ত করছে। তারা চাইছে লোক নিয়োগ বন্ধ করে হাসিনা সরকারের দূর্নাম করতে। যাতে সামনের নির্বাচনে প্রভাব পরে। আমরা তা হতে দিব না। স্বল্প খরচে লোক এনে সরকারের উদ্দেশ্য সফল করা হবে।'

    বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাদলুর রহমান খান বলেন, ' সিন্ডিকেট আমাদের লোকগুলোর রক্ত চুষে খেয়েছে। সাধারন মানুষ ঘর, জমি, গরু ছাগল বিক্রি করে ধার দেনা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করেছে। আমরা চাই স্বল্প খরচে কর্মী আসুক।' ডাঃ মাহাথির: প্রবাসীর আশা।

    পদ ছেড়ে দিয়ে পুনরায় জনরায় নিয়ে ফিরে আসা যেমন চমক তেমনি আগামীতেও আরো চমক অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে তিনি কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। এশিয়ান দেশগুলোর সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সরকারের প্রতিশোধ গ্রহণ আচরণের বিপরীত ঘোষণা দিয়েছেন। যা প্রবাসীদের জন্য সুখবরই বটে।

    বাংলাদেশ হতে ১৯৭৬ সাল থেকে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া। কর্মী নিয়োগে বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও অনাচার সর্বজনবিদিত। সর্বশেষ থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশের জংগলে প্রাপ্ত বাংলাদেশের মানুষের দেহাবশেষ প্রমাণ করেছে মালয়েশিয়ায় প্রেরণের ভয়াবহতা। বাংলাদেশ হতে মালয়েশিয়া আদম পাচার চক্রের যে ভয়াবহ শক্তিশালী রুপ প্রকাশ পেয়েছে তা পুনরায় ফিরে আসুক তা বাংলাদেশের জনগণ চায় না।

    একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের মানুষ জিম্মি করে, হাত পা বেধে, অত্যাচার করে, অংঙ্গ চ্ছেদ করে, অনেক ক্ষেত্রে হত্যা করে অর্থ আদায় করা হতো। এখন আবার তারা সক্রিয় হতে সচেষ্ট। চলমান লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হলে আবারো সে ধরনের কাজ করা হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এদেরও শায়েস্তা করতে হবে। কর্মীদের অবৈধ করে তাদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া, পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে আনা, ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবহার করে হয়রানি করা, বৈধ কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, ইত্যাদি কাজ এখনো চলমান আছে। প্রবাসীরা ও কমিউনিটির নেতারা ব্যাপকভাবে আশাকরে এসব বন্ধ হবে। কিন্তু সম্প্রতি সোশ্যাল ও সংবাদ জগতে যেভাবে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধাচার করছে তাতে নিজেদের চরিত্র নিজেরাই উন্মোচন করছে, এককথায় নিজের সর্বনাশ নিজেরাই করছে মর্মে আশংকা করা হচ্ছে।

    মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচন ও নতুন সরকার আসা নিয়ে যত ধরনের কৌতুহল, অতিপ্রতিক্রিয়া, মনগড়া কথা, রাতারাতি বিরুদ্ধাচারণ, অপপ্রচার ইত্যাদি করছে তা মালয়েশিয়ায় অবস্থিত অন্যকোন দেশের প্রবাসীরা করেনি। সম্প্রতি নেপালের সংবাদে দেখা গেছে মালয়েশিয়ার নতুন সরকারের কাছে নেপালের সরকার সুবিধা পাবে এমন আশা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কার বিরুদ্ধে কত লিখতে পারে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কি লজ্জা শরম নাই, নিজেদের যত দূর্বলতা নিজেরাই প্রকাশ করে। মালয়েশিয়ায় প্রচুর ট্যুরিস্ট আসে এবং পনেরো টা দেশের কর্মী কাজ করে তারা কেউই বাংলাদেশের মত এমন সংবাদ করে না। বাংলাদেশের এক প্রবীণ সাংবাদিক বলেছেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের লোক আছে কিন্তু সাংবাদিকরা মালয়েশিয়া নিয়ে এতো মাতোয়ারা ও অতিউৎসাহী কেন? নিশ্চিত বলা যায় এদের পিছন থেকে কেউ চালায়! এরা সাংবাদিকতার কলংক'।

    আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, 'সাধারণত নির্বাচন হোক আর যাই হোক কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রবাসীদের চুপ থাকতে হয়, কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা অতিমাত্রায় অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাতোয়ারা। এর পরিণতি ভাল হতে পারে না'। এভাবেই নতুন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টারতদের লালসায় নষ্ট হচ্ছে প্রবাসীদের ভাগ্য।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close