যে কারনে সোফিয়া বাংলাদেশে এসেছিলো
বাংলাদেশে এসে আমার দারুণ লাগছে। আমি যে পোশাকটি পরে আছি তার নাম জামদানি। এটি তোমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। শুধু তাই নয় এর পেটেন্টও তোমাদের। ’ চাপা হলুদ রঙের নকশা করা জামদানি আর সাদা ওড়না আচ্ছাদিত নারী কণ্ঠে কথা শুনলে বোঝার উপায় নেই এটা কোনো যন্ত্রমানবীর মুখের কথা। অবাক হলেও ঘটনা সত্যি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপূর্ব সমন্বয় সামাজিক যন্ত্রমানবী রোবটটির নাম ‘সোফিয়া’।
গত ৬ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলার চমক ছিল এই রোবট। বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি, মুখভঙ্গি আর সরস জবাবে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের আগমনী বার্তা দিতে এসেছিল সোফিয়া। নতুন এই প্রযুক্তি থেকে জ্ঞান আহরণ করে আমাদের দেশের প্রযুক্তি এবং রোবট তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধনই ছিল সোফিয়াকে নিয়ে আসার মূল উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, যন্ত্রমানবী সোফিয়া হচ্ছে রোবটিক্স আর নতুন প্রযুক্তির অভিনব সংযোজন।
সম্পর্কিত খবর
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বার্তা হচ্ছে সোফিয়া। তাই আমরাও চাইছিলাম আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করুক এবং উৎসাহিত করুক। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগে বিভিন্ন ধরনের গবেষণাগার তৈরি করে দিচ্ছি যাতে করে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী গবেষণা করতে পারে এবং উদ্ভাবন করতে পারে। সেই ধারবাহিকতায় সোফিয়াকে আনা হয়েছিল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলার চমক হিসেবে। রোবট সোফিয়ার নির্মাতা ড. ডেভিড হ্যানসন বলেন, আমি ২৬ বছর হলো এ ধরনের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরির চেষ্টা করছি। আর সোফিয়াকে তৈরি করতে সময় লেগেছে তিন বছর। আগামী বছরের জানুয়ারিতে পা লাগিয়ে সম্পূর্ণ করা হবে সোফিয়াকে। বাংলাদেশের রোবটিক্সে উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, রোবট সোফিয়া তৈরির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আউটসোর্সিং মার্কেটেই পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ চাইলেই প্রাযুক্তিক বিষয় শিখে নিয়ে এ ধরনের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরি করতে পারে। বিশ্বে এখন সুপার রোবট তৈরি হচ্ছে। এ প্রযুক্তিগুলো চর্চা করে উন্নত প্রযুক্তির রোবট বাংলাদেশেই নির্মাণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। বিদেশে তারা সফটওয়্যার এবং আইটি সেবা রপ্তানি করছে। যন্ত্রমানবী সোফিয়া কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে খুব দ্রুত যে কোনো বিষয় শিখে ফেলতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারে। বক্তার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারলেও হাঁটাচলা করতে পারে না রোবট সোফিয়া। এখনো পা সংযোজন করা হয়নি রোবটটিতে। এ ব্যাপারে ড. ডেভিড হ্যানসন বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে পা সংযোজন করা হবে সোফিয়ার।
সে অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলছে। এদিকে সোফিয়াকে দেখতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনতার ঢল নেমেছিল। সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার নজর ছিল রোবট সোফিয়ার দিকে। তবে সবচেয়ে ভিড় ছিল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য নিবন্ধন করতে বলা হয়েছিল।
নিবন্ধনের প্রথমদিনেই এক হাজার ৫০০ আবেদন পড়লে ওইদিন বন্ধ করা হয় নিবন্ধন কার্যক্রম। অংশগ্রহণকারী কোঠা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় নিবন্ধন। নিবন্ধন করতে না পারলেও দর্শনার্থীরা রোবট সোফিয়াকে দেখতে ভিড় করেন প্রতিটি গেটে। পরবর্তীতে অংশগ্রহণকারীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হলে মুহূর্তে জনাকীর্ণ হয় হল অব ফেম। অনুষ্ঠানে আসা তরুণরা কাছে থেকে সোফিয়াকে দেখে এবং তার নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে তথ্য পায় নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে। তরুণদের এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে দেশের প্রযুক্তি খাত এবং রোবটিক্স নির্মাণকে এগিয়ে নেবে এ আশা আয়োজকদের।