• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

কিশোরীরাই তৈরি করছে ন্যাপকিন

প্রকাশ:  ০১ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:৪৭
মোহাম্মদ সাকিব চৌধুরী

একটু স্বাবলম্বী হতে কেউবা ঘরের কাজ শেষ করে এসে আবার কেউ বা স্কুল কলেজে ক্লাসের শেষে কিংবা বন্ধের দিনে ব্যাতিক্রমর্ধমী প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট গ্রামের ১৫ জন কিশোরী। তাদের সকলের বয়স ১৬ থেকে ১৯ এর মধ্যে । প্যান ইন্টারন্যানাল নামে একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় তারা গড়ে তুলেছে ন্যাপকিন তৈরির একটি মিনি কারখানা।

আসমানি নাম দিয়ে তৈরিকৃত স্যানেটারি ন্যাপকিন প্যাকেটজাত করার পর বিক্রিয় প্রতিনিধি মাধ্যমে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের উপজেলা গুলোতেও সরবাহ করা হচ্ছে । গত এক বছর ধরে উপজেলার গ্রামীণ শহর পাকেরহাটে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ন্যাপকিন উৎপাদন করে আসছে তারা।

সম্পর্কিত খবর

    কারখানাটির ভেতরে সরোজমিনে দেখা যায়, কেউ মেঝেতে বসে তুলা ছিড়ছে, কেউ সেই তুলাগুলোকে কাপড়ে মুড়িয়ে রাখছে আবার কেউবা সেই কাপড়কে সেলাই মিশিনের সাহায্যে সেলাই করছে। সেলাইয়ের পর প্যাকেটজাত প্রক্রিয়ার জন্য দুজন কিশোরীকে দেখা যায়।

    জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে এসে এই করখানায় মোট ১৫ জন কিশোরী কাজ করে, তাদের সবাই স্কুল কলেজের ছাত্রী। প্রতিদিন গড়ে ১২০-১৫০ টি ন্যাপকিনের প্যাকেট তৈরি হয় এই মিনি কারখানাটিতে। প্রতিটি প্যাকেট তারা বাজারে বিক্রি করেন ৬০ টাকা । আর প্রতিটি প্যাকেট তৈরি করতে একজন কিশোরী মজুরি হিসাবে পায় ১৫ টাকা। দৈনিক ৩ ঘন্টা করে কারখানায় কাজ করে কিশোরীরা।

    কারখানাটিতে কাজ করা উর্মি(১৭) নামে এক কিশোরী পূর্বপশ্চিমবিডিকে জানান, পড়াশুনার পাশাপাশি এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সে নিজের পাড়াশুনার খরচ চালায় এবং বাকি টাকা পরিবারের জন্য মায়ের হাতে তুলে দেয়।

    কারখানাটির আরেক উৎপাদন কর্মি সাবিনা ইয়াজমি পূর্বপশ্চিমবিডিকে জানান, শুরুতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়লে এখন মানুষ তাদের এই উদ্যেগকে ভাল চোখে দেখছে।

    স্কুলে ক্লাস শেষ করে এসে সপ্তাহে ৫ দিন বিকেল বেলা এই কারখানায় ৩ ঘন্টা কাজ করে বলে খোলা কাগজকে জানান,অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী মাহফুজা আক্তার নামে একজন।

    একজন ঔষধের দোকানের মালিকের সাথে কথা হলে তিনি পূর্বপশ্চিমবিডিকে বলেন, আসমানি নামে ন্যাপকিন প্যাকেটটি আমাদের এলাকায় তৈরি হলেও বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

    কয়েকজন মধ্য বয়সী নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় ভাবে তৈরি এই ন্যাপকিনের গুনগত মান অন্যান্য নামকরা ব্যান্ডের ন্যাপকিনের মতই বরং তুলনামূলক এটার দাম কিছুটা কম।

    কারখানাটির প্রধান উদ্যেক্তা সেলিনা আক্তার পূর্বপশ্চিমবিডিকে জানান,তাদের তৈরি ন্যাপকিনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। এখানে কাজ করার মধ্য দিয়ে কিশোরীরা যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে অন্য দিকে এসব কিশোরীদের দেখে অন্যরা আত্মর্নিভরতার পথে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

    গ্রামীণ র্পযায়ে স্বাস্থ্য সাম্মত স্যানেটারি ন্যাপকিন শতভাগ নারীদের ব্যবহার করতে উৎসাহ প্রদান, পিরিয়ডের সময় কিশোরীদের স্কুল কলেজে অনুপস্থিত রোধে এবং দারিদ্য পরিবারের বাল্য বিবাহে ঝুঁকির্পূণ কিশোরীদের র্কমস্থানের ব্যবস্থায় এই মিনি কারখানাটি অগ্রানী ভূমিকা পালন করছে বলে অভিমত প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কর্তাব্যাক্তিদের।

    এই মিনি কারখানাটি নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উদ্যেক্তা সেলিনা আক্তারে পূর্বপশ্চিমবিডিকে আরো বলেন, আমরা দ্রুতই কারখানাটিকে অবকাঠামোর দিক দিয়ে বড় করার চেষ্ঠা করতেছি এবং এখানে যাতে করে আরো অনেক কিশোরী কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

    কারখানাটিতে আরো আর্থিক বিনিযোগ বাড়ালে এবং কারখানাটি বড় করলে গ্রামীণ পর্যায়ে অনেক কিশোরী আত্মর্নিভর হবে এবং স্যানেটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে সচেতন হবে এ অভিমত এলাকার সচেতন মহলের।

    /মজুমদার

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close