• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সুখী হওয়ার চাবিকাটি

প্রকাশ:  ২০ মার্চ ২০১৮, ১৪:৪৬
ড.জীবেন রায়

মানুষ মাত্রই সুখী হওয়ার চাবিকাটিটি খুঁজে পেতে চায়। গরীব, ধনী কোন ফারাক নেই। ধনী মাত্রই সুখী। সর্বাংশে সত্যি নয়। বরং ধনীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অসুখী। আবার গরীব হয়েও অনেকেই সুখী। তাহলে সুখ ব্যাপারটা একেক জনের কাছে একেক রকম। জানার পরিধি অনুযায়ী সুখের পরিধিও নির্ধারিত হয়। যে কখনো ফেইস-বুকের নাম শুনেনি, বা ব্যবহার করেনি সে কখনো বুঝতে পারবে না ফেইস-বুক কতটা সুখকর ব্যবহারকারীদের কাছে। যারা কখনো স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেনি, তারা বুঝতে পারবে না কি করে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিচ্ছে এই ছোট্ট একটি যন্ত্র হাতে নিয়ে। সুখ ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আপেক্ষিক।

তবে আমাদের অনেক স্বল্প আয়ের মানুষদের সপ্তাহে ৩ বেলা খেতে পেলেই সুখী। কোন একদিন মাংস খেতে পেলেদারুন খুশী।অন্যদিকে মধ্যম আয়ের লোকজন সপ্তাহের ২ দিন মাংস, ২ দিন মাছ খেতে পেলে স্বস্থিবোধ করে। উত্তম আয়ের লোকজন সপ্তাহে ২দিন বাইরে দামী রেস্তোরায় খাবে অথবা প্রতিদিন বাসায় মাছ, মাংস, সবজী সবই থাকবে, ইচ্ছে মাফিক খাবে। পরিস্থিতির এই অবস্থাকে বলা যেতে পারে সামর্থ অনুযায়ী সুখী হওয়া।

সম্পর্কিত খবর

    অন্যদিকে সুখের একটা ভয়াবহ রূপও রয়েছে। ইহকালে নয়, পরকালে সুখ পাওয়ার জন্য অনেকেই নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও রাজি। তবে ইহজীবনে যারা মোটামুটি সুখী তারা হয়ত নিজের শরীরে বোমা বেঁধে অন্য অনেককে মেরে নিজে মরে যেতে চাবে না। আবার সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভদ্রমহিলা তার কিডনী দান করে একটা কিডনী দানের চেইন সিস্টেম চালু করেছেন। ভদ্রমহিলা নিজে শুধু সুখীই নয়, সুখ ছড়িয়ে দিয়েছেন অন্যদের ভিতরে।

    কোলকাতার বস্তির জনগনকে সেবা করে মাদার তেরেসাসব সময় হাসিমুখে থাকতো। মাদার তেরেসা তাঁর ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী দরিদ্র, অসুস্থ মানুষদের সেবা দানের মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়ার সুখ অনুভব করতেন।

    তাহলে সুখ ব্যাপারটা কি?

    এখন একজন ভদ্রলোকের নাম উল্লেখ করছি যার নামটি আগে জানতাম না। বছর দুই আগে একটি আর্টিকেল লিখতে গিয়ে রোমানরোল্যান্ডকে খুঁজে পাই।ফরাসী সাহিত্যিক। ১৯১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আমাদের কবিগুরু, রবীন্দ্রনাথ দু’বছর আগে অর্থাৎ ১৯১৩ সালে নোবেল পান। রোমানরোল্যান্ড কবিগুরু, বিবেকানন্দ এবং গান্ধীজির আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। অনেকটা সময় ভারতবর্ষে কাটিয়েছেন। ভদ্রলোক সুখী হওয়া নিয়ে সুন্দর কথা বলেছেন। সুখ নিয়ে কথা বলেছেন সর্বকালেরশ্রেষ্ট বিজ্ঞানী আইনষ্টাইনও।

    রোমানরোল্যান্ডের খাঁটি কথাটি হলো, “নিজের সামর্থ সম্পর্কে অবগত হও এবং সেভাবেই সুখী হওয়ার চেষ্টা কর”।আর আইনষ্টাইন বলেছেন, “শান্ত এবং সহজ সরল জীবন যাপনের মাধ্যমেই সুখ খুঁজে পাওয়া যায়। সুখের পেছনে অক্লান্ত বিশ্রামহীন ছূটাছূটির মাধ্যমে নয়”।

    অন্য অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিগন অথবা মোটিভেটরগন বলবেন, “ড্রিম বিগ”। অবশ্য স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি নেই, স্বপ্ন দেখতে তো পয়সা লাগেনা তবে শুধু স্বপ্ন দেখলেই চলবে না, সামর্থ আছে কিনা তাও দেখতে হবে।

    ১৯৭৯ সালে কানাডাতে পিএইচডি করতে গিয়ে প্রফেসরদের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম, নবায়নযোগ্য জ্বালানীর উপর গবেষনা করবো। মনে মনেভাবলাম বিশ্বের জ্বালানী সমস্যা আমার হাত দিয়েই দূর হবে। একদিন হয়ত নোবেল পুরস্কারটা জুটেও যেতে পারে।শেষ পর্যন্ত দু’তিনটা পাবলিকেশন করে পিএইচডি ডিগ্রিটা ঠিকই হলো, কিন্তু গবেষনা কাজটা আর বেশীদূর এগোয়নি।ভাবলাম গবেষনা করে বড় কিছু হওয়া হয়ত হবে না আমার, বিশেষতঃ ফান্ডিং নিয়ে ভাবতে হবে, গবেষনা হয়ত হবে তবে ব্রেকথ্রু কিছু হবে না, তাছাড়া ষ্ট্রেস তো থাকবেই। অতএব সিরিয়াস গবেষনার পথ ছেড়ে দিলাম। শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করেছিলাম, আবার ফিরে গেলাম শিক্ষকতায়। সুখের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতেবাংলাদেশে একদিন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান হয়ে গেলাম। সত্যিকথা বলতে কি, আমার সামর্থ আমি টের পেয়ে গেলাম। আমার পক্ষে শিক্ষাক্ষেত্রের রাজনৈতিক কলা কৌশল রপ্ত করা সম্ভব নয়। এক বছরের মধ্যেই দ্বায়িত্ব ছেড়ে দিলাম কিন্তু শিক্ষকতা ছাড়িনি।

    বুঝতে অসুবিধা হয়নি, সুখ সুখ পাখিটিকে ধরে রাখতে হলে, সামর্থের বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এই যুক্তরাষ্ট্রে অনেকবছর ধরেই শিক্ষকতা করছি। ছাত্র ছাত্রীদের বলি, ‘এ প্লাস’ পেতে চাও, ভালো কথা তবে নিজের সামর্থ সম্পর্কে অবগত হও, তারপর আশা করো। কেননা সেমিষ্টারের মাঝামাঝি এসে কোন স্টুডেন্টস যদি‘সি’ পায় তাহলে ‘এ প্লাস’ পাওয়া দূস্কর বৈকি। তবে আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি ছাত্রেরই টেলেন্ট আছে, কিন্তু কোথায়, তাই খুঁজে পেতে হবে। বিল গেইটস, মার্ক জুকারবার্গ হার্ভার্ড ড্রপ আউট হতে পারে, কিন্তু সুপার টেলেন্টেড তো বটেই।

    আবার বয়সের সাথে সাথে সুখের তারতম্য আছে বৈকি। যেমন একটি শিশুর সুখ একরকম। টিনএজারের সুখ, প্রাপ্ত বয়স্কদের সুখ কিংবা বুড়োদের সুখের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। তবে একমাত্র এক ধারার সুখের একটা লম্বা পথ রয়েছে। বলা চলে টিনএজার থেকে শুরু করে বুড়ো হওয়া পর্যন্ত সুখের ধারাবাহিকতা চলতে পারে, তাহলো সেক্স সম্পর্কিত।জীবনভর সুস্থ নৈতিক সেক্সের ভিতর থাকতে পারলে সুখ সুখ অনুভূতি থাকবে বৈকি।

    তবে জীবন থেকে সুখ যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেইজন্য সবাইকে নানাবিধইন্টারেষ্টেরঅধিকারী হওয়া উচিত। কখনো একা থাকলে যাতে ডিপ্রেশন এসে বাসা বাঁধতে না পারে। বই পড়া থেকে শুরু করে লেখালেখি, গান করা বা শুনা, পেইন্টিং, এক্সারসাইজ করা বা আড্ডা দেয়া, কোথাও বেড়াতে যাওয়া, খেলা দেখা অথবা খেলায় অংশগ্রহন করা অর্থাৎ নানাবিধ হবি অর্থাৎ সখ থাকলে জীবন কখনো বোরিং হবে না। তবে ভালোবাসার পরিবেশে থাকতে পারাটাই সুখী হওয়ার মূল চাবিকাটি।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close