• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নারীর অধিকার দেনমোহর

প্রকাশ:  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:৩৭
পুর্বপশ্চিম ডেস্ক

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের (১০) ধারায় বলা হয়েছে– মুসলিম বিবাহের ফলস্বরূপ যেই অর্থ বা সম্পত্তি স্বামী তাহার স্ত্রীকে প্রদান করেন বা দিতে স্বীকার করেন, সেই অর্থ বা সম্পত্তিকে দেনমোহর বলা হয়। দেনমোহর বিবাহিত মুসলিম নারীর একটি বিশেষ অধিকার। এই অধিকার পবিত্র কুরআন দ্বারা স্বীকৃত। মুসলিম আইন অনুসারে একটি বৈধ বা ছহিহ্ বিয়ে হতে হলে ৫টি শর্ত পূরণ করতে হয়। দেনমোহর ৫টি শর্তের অন্যতম একটি শর্ত এবং স্ত্রীর একটি আইনগত অধিকার।

সম্পর্কিত খবর

    এই অধিকার বলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ বা সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারী হয়। দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ স্বরূপ এবং অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। দেনমোহর ছাড়া বিয়ে বাতিল না হলেও এ ধরণের বিয়ে ফাসিদ বা অনিয়মিত বা ত্রুটিযুক্ত বিয়ে। যে কোন সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা হলে বা পরিশোধ করা হলে ফাসিদ বিয়েটি বৈধ বা ছহিহ্ হয়ে যাবে। দেনমোহর বিয়ের আগে, বিয়ের সময় বা বিয়ের পর নির্ধারণ করা যায়। বিয়ের সময় যদি দেনমোহর নির্ধারিত না হয়ে থাকে, মুসলিম নিকাহ অনুযায়ী একটি শুদ্ধ বিয়ের জন্য দেনমোহর অত্যাবশ্যকীয়। দেনমোহর নির্ধারণ ছাড়া বিয়ে শুদ্ধ হবে না।

    বিয়ের সময় যদি দেনমোহর নির্ধারিত না হয়ে থাকে, অথবা স্ত্রী কোনো দেনমোহর দাবি করবে না শর্তে বিয়েটি যদি সম্পাদিতও হয়, তবুও স্বামীকে দেনমোহর দিতে হবে স্ত্রীকে। এ ক্ষেত্রে স্বামীর কোনো ধরনের অজুহাত দেখিয়ে স্ত্রীকে দেনমোহর দেওয়া থেকে বিরত থাকার আইনগত সুযোগ নেই। কোন বিবাহে দেনমোহরের কথা না থাকলেও আইন স্ত্রীকে দেনমোহরের অধিকার দেয়।

    স্ত্রীর প্রতি মর্যাদার চিহ্নস্বরূপ স্বামী উপর ইসলামী আইন এই দায়িত্ব অর্পন করিয়াছে। ইসলামে বিবাহের মর্যাদার চিহ্নস্বরূপ মোহরানা একটি আবশ্যিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, মোহরানা হল মুসলিম বিবাহের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এটা যদি বিবাহের সময় অনির্ধারিত থাকে, তবে তা অবশ্যই কোন স্পষ্ট নীতিমালা দ্বারা নির্ধারণ করতে হবে।

    দেনমোহরের প্রকারভেদ :

    সাধারণত দেনমোহর দুই ধরনের হয়ে থাকে। তাৎক্ষণিক দেনমোহর এবং বিলম্বিত দেনমোহর। তাৎক্ষণিক দেনমোহর স্ত্রী চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হয়। আর বিলম্বিত দেন মোহর বিয়ের পর যেকোনো সময় পরিশোধ করা যায়। তবে মৃত্যু বা বিয়ে বিচ্ছেদের পর দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধ করতে হয়। তখন দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ হিসেবে থাকে। তবে দেনমোহরের মূলতঃ দুই প্রকারের, যথা:

    (ক) নির্ধারিত দেনমোহর: যেক্ষেত্রে বিবাহের চুক্তিতে বা বিবাহের পূর্বে কিংবা পরে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে উহা নির্ধারিত দেনমোহর। এইরূপ দেনমোহরের জন্য কোন সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ নির্ধারিত নাই। দেনমোহর হিসাবে যে কোন পরিমাণ অর্থ নির্ধারিত হতে পারে, যদিও তাহা স্বামী কর্তৃক পরিশোধের ক্ষমতার বাহিরে, কিন্তু কোন অবস্থায়ই আইনে নির্ধারিত পরিমাণের কম হইতে পারিবে না।

    (খ) উপযুক্ত দেনমোহর: যেক্ষেত্রে বিবাহের চুক্তিতে বা বিবাহের পূর্বে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারিত হয় না সেইক্ষেত্রে স্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হিসাবে দেনমোহর পরিশোধ করার জন্য আইন দ্বারা নির্ধারণ করা হয়, তাকে উপযুক্ত দেনমোহর বলে। যখন এইরূপ কোন প্রকাশ্য শর্তে বিবাহের চুক্তি সম্পাদিত হয় যে, কোন মোহরানা পরিশোধ করা হবে না অথবা যখন কোন মোহরানার পরিমাণ ধার্য করা না হয় তখন সেই বিবাহের ক্ষেত্রে স্ত্রী ন্যায্য বা উপযুক্ত পরিমাণ মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হন।

    যদি বিয়ের সময় দেনমোহরের কি পরিমান তাৎক্ষনিক ও বিলম্বিত তা উল্লেখ না থাকে তাহলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পরিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর ১০ ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ দেনমোহর তাৎক্ষনিক দেনমোহর হিসেবে গণ্য হবে, যা চাওয়ামাত্র স্ত্রীকে পরিশোধ করে দিতে হবে।

    যেসব ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর নিকট হতে দেনমোহর পাওয়ার হকদার :

    (১) আইন অনুযায়ী দেনমোহর স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। কারণ, দেনমোহর স্ত্রীর আইনগত, একচ্ছত্র অধিকার এবং সব সময়ই স্বামীর ঋণ। দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ তাই স্ত্রী যেকোনো সময় স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করতে পারেন। এমনকি স্ত্রী তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর আগে দেনমোহর দাবি করতে পারে। কেননা স্বামীর কাছে এটা তাঁর পাওনা এবং স্বামী তখন নির্ধারিত দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য।

    (২) তালাক বা মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। স্বামীর মৃত্যু হলেও স্ত্রী দেনমোহর পাবেন। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে অন্যান্য দেনা পরিশোধের মতো স্ত্রীর দেনমোহরও পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত এ অধিকার বহাল থাকবে। প্রয়োজনে স্বামীর সম্পত্তি থেকে স্ত্রী তা আদায় করে নিতে পারবেন।

    (৩) স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দিলে স্বামীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর হলো বিয়ের শর্ত, যার সাথে তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই। বিবাহ বহাল থাকা বা বিবাহবিচ্ছেদের সাথে দেনমোহরের কোনো সম্পর্ক নেই। বিবাহ সম্পন্ন হলে উল্লেখিত দেনমোহর স্ত্রীর আইনানুগ পাওনায় পরিণত হয়।

    (৪) স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে প্রথম স্ত্রীর সম্পূর্ন দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

    (৫) যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় তাহলেও মৃত স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হবে। স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হলেও দেনমোহর দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহর পাবার অধিকারী। তারা দেনমোহর পাবার জন্য মামলাও করতে পারে।

    দেনমোহর কেন দেওয়া হয় ?

    দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার সংরক্ষনের জন্য এবং স্ত্রীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়। এটি স্বামীর উপর আইন কর্তৃক আরোপিত একটি দায়।

    দেনমোহর কি মাফ হয় ?

    স্ত্রী দেনমোহর মাফ করতে পারে। যদিও স্বামী চাইল আর স্ত্রী সাথে সাথে তা মাফ করে দিলো, বিষয়টা এত সহজ নয়। সহজে দেনমোহর মাফ হয় না। দেনমোহর মাফ করার সময় স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে।

    দেনমোহরের পরিমাণ অধিক হওয়া কি যৌক্তিক ?

    আইনে দেনমোহরের কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নাই। যে কোন পরিমাণ অর্থ দেনমোহর হিসাবে নির্ধারিত হতে পারে। দেনমোহর হলো স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অধিকার সংরক্ষনণের জন্য। দেনমোহর যেহেতু স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয় সে কারণে এর পরিমাণ এতটা কম হওয়া উচিত নয় যা স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে সহায়ক হবে না।

    দেনমোহর স্বামীর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে নির্ধারণ করতে হয়। দেনমোহর এত অধিক হওয়া উচিত নয় যা স্বামীর পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়; আবার এত কম হওয়া উচিত নয় যা স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে না। দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে স্ত্রীর পারিবারিক অবস্থান ও স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করা প্রয়োজন। সাধারণত দেখা যায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। বিষয়গুলো হলো:

    ১. স্ত্রীর পারিবারিক অবস্থা

    ২. বংশ মর্যাদা

    ৩. আর্থিক অবস্থা

    ৪. ব্যক্তিগত যোগ্যতা এবং

    ৫. স্ত্রীর পরিবারের অন্যান্য মহিলাদের (যেমন – ফুফু, বোন) দেনমোহরের পরিমাণ।

    এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেনমোহর ঠিক করা হয়। দেনমোহর একবার নির্ধারণ করার পর এর পরিমাণ কমানো যায় না তবে স্বামী ইচ্ছা করলে তা বাড়াতে পারেন।

    উদাহরণ: কাসেম ও হালিমার বিয়ের সময় দেনমোহর ধার্য করা হয়নি। হালিমার বড় বোন ও ফুফুর দেনমোহরের পরিমাণ ছিলো ত্রিশ হাজার টাকা। সুতরাং ত্রিশ হাজার টাকা বা তার কাছাকাছি পরিমাণ দেনমোহর বিয়েতে নির্ধারণ করতে হবে।

    স্ত্রী যদি স্বামীর কাছে দেনমোহর চেয়ে না পায় তাহলে কি করতে পারে ?

    দেনমোহর দাবি করার পর স্বামী তা পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকতে পারবেন এবং ওই অবস্থায় স্বামী অবশ্যই তাঁর ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন। সাধারণত বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। দেনমোহরের কিছু পরিমাণ বিয়ের সময় তাৎক্ষণিক দেনমোহর হিসেবে দেওয়া হয় এবং তা কাবিননামায় লিখিত থাকে। বাকিটা বিলম্বিত দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়।

    এক্ষেত্রে যা করা উচিত তা হলো :

    ১. স্বামী দেনমোহর দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রী তা আদায়ের জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন।

    ২. তাৎক্ষণিক দেনমোহর চাওয়ার পর স্বামী তা দিতে অস্বীকার করলে ৩ বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে তাৎক্ষণিক দেনমোহর আদায়ের জন্য মামলা করতে হবে।

    ৩. বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু সময়সীমা বাঁধা নেই ফলে স্বামী বা স্ত্রী তালাক দিলে অথবা স্বামী মৃত্যুবরণ করলে পারিবারিক আদালতে ৩ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

    ৪. তালাক হয়ে গেলে স্ত্রীকে স্বামীর দেনমোহরের টাকা বা সম্পত্তি দিতে হবে।

    যদি কোনো স্ত্রী স্বামীর কাছে নির্ধারিত দেনমোহর চেয়ে না পায়,তবে সেই স্ত্রী নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারে। যেমন –

    ৫. স্বামীর সাথে বসবাস করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে

    ৬. দাম্পত্য মিলনে অনীহা প্রকাশ করতে পারে

    ৭. পৃথকভাবে দূরে বসবাস করতে পারে ।

    এ সময় স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। এসময় কোন স্বামী যদি দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা করে, তবে তার মামলা খারিজ হয়ে যাবে, কারণ স্বামী, স্ত্রীর দাবি অনুযায়ী দেনমোহর পরিশোধ করেনি।

    দেনমোহর সংক্রান্ত মামলা কোথায় দায়ের করা যায় ?

    দেনমোহর সংক্রান্ত মামলা স্থানীয় সহকারী জজ আদালত যা পারিবারিক আদালত নামে পরিচিত, সেখানে করা যায়। এ আদালত ১৯৮৫ সাল থেকে পারিবারিক আদালত হিসেবে কাজ করছে। স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করেন সে এলাকার পারিবারিক আদালতে দেনমোহর সংক্রান্ত মামলা করতে পারেন। বিবাহবিচ্ছেদ হলে বা বিলম্বিত তালাক হলে অথবা স্বামীর মৃত্যু হলে কোনো স্ত্রী তাঁর বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে তা আদায় করতে পারেন। তবে তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

    স্বামী মারা যাবার পর স্ত্রী কিভাবে দেনমোহর দাবী করতে পারে ?

    স্বামীর মৃত্যু হলে বকেয়া দেনমোহর ঋণের মতো হয়। এটি অবশ্যই শোধ করতে হয়। স্বামীর উত্তরাধিকারীরা এটি প্রদানে বাধ্য। অন্যথায় মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে তা আদায় করা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ হিসেবে ধরা হবে।

    ১. স্বামীর মৃত্যুর পর দাফন, কাফন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি শেষ হবার পর স্বামীর অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করার সময় স্ত্রী দেনমোহর দাবী করতে পারেন।

    ২. স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।

    ৩. যদি স্বামীর উত্তরাধিকারীরা স্বামীর সম্পত্তি থেকে দেনমোহর দিতে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন।

    উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ঐ দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা দেনমোহর পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারবেন।

    স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি দখলে রেখে দেনমোহর আদায় করতে পারেন ?

    স্বামী দেনমোহর পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নিজ দখলে রাখতে পারেন। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় কোন স্ত্রী কোন সম্পত্তি দখলে রাখলে এবং স্বামীর মৃত্যু পর স্ত্রী ঐ সম্পত্তির দখল ভোগ করতে থাকলে, তার দখলটি বৈধ ও আইনসম্মত হবে। স্ত্রী দখলকৃত সম্পত্তির খাজনা, লাভ বা আয় থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে পারবে। এ সময়ে কেউ তাকে দখল থেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে, সে দখল উদ্ধারের মামলা করতে পারবে।

    কখন দেনমোহরের অর্ধেক দিতে হবে ?

    বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য মিলন অর্থাৎ সহবাসের আগে বিবাহবিচ্ছেদ হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে সম্পূর্ণ দেনমোহরের অর্ধেক পরিশোধ করতে হবে।

    মনে রাখা প্রয়োজন দেনমোহর ও ভরণপোষণ সম্পূর্ণ আলাদা। দেনমোহরের সাথে ভরণপোষণের কোন সম্পর্ক নেই। বিবাহিত অবস্থায় স্ত্রীকে ভরনপোষনের জন্য স্বামীর যে খরচ তা কোনভাবেই দেনমোহরের অংশ বলে বিবেচিত হবে না। আবার বিয়ে-বিচ্ছেদের ফলে স্বামী, স্ত্রীকে যে ভরণপোষণ দেয় তাও দেনমোহরের অংশ নয়। দেনমোহর এবং ভরণপোষণ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। একটি পরিশোধ করলে অপরটি মাফ হয়ে যায় না। বিয়ের সময় দেয়া শাড়ি, গয়না, কসমেটিকস্ কখনোই দেনমোহরের অংশ নয়। বিয়ের সময় স্বামী বা তার পরিবার কর্তৃক স্ত্রীকে দেয়া উপহার দেনমোহর হিসেবে বিবেচিত হবে না। মনে রাখতে হবে যে, উপহার উপহারই; দেনমোহর নয়।

    অনেক সময় বিয়ের কাবিন নামায় শাড়ি, গয়নার মূল্য ধরে দেনমোহরের একটি অংশকে উসুল ধরা হয়। এটা ঠিক নয়। দেনমোহর স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দেয়া কিছু অর্থ বা মূল্যবান সম্পদকে বোঝাবে, অন্য কিছু নয়। যদি কাবিননামায় দেনমোহর হিসেবে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দেয়ার কথা উল্লেখ না থাকে তবে স্ত্রীকে উপহার হিসেবে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দিলে তা দেনমোহর হিসেবে পরিশোধ হবে না। এক্ষেত্রে “দেনমোহর বাবদ” কথাটি লেখা থাকতে হবে। যেমন: জমি হস্তান্তর দলিলে “দেনমোহর বাবদ” কথাটি লেখা না থাকলে এরূপ জমি-দেনমোহর হিসেবে ধরা হবে না। স্বামী স্ত্রীকে কোনো উপহার দিলে তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে না। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারে। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে কিছু দেয়, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে।

    দেনমোহর
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close