• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সুবিধার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৮, ১২:৫৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

নিম্ন আয়ের দেশের স্ট্যাটাস থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা— এ তিনটি সূচকে অগ্রগতি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ সাফল্য অর্জন করেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরির পাশাপাশি অনেক বিনিয়োগ আকর্ষণের পথও মসৃণ হবে, যার সুফল দেখা যাবে পুঁজিবাজারেও। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্ক, কোটা ও জিএসপি সুবিধা হারানোর মতো কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মাল্টিপারপাস হলে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সম্পর্কিত খবর

    সূচনা বক্তব্যে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ বলেন, এ অর্জন আমাদের বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ভিত্তি তৈরি করে দিল। আমাদের আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেটি একত্রে তিনটি সূচকে উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। আমাদের এখন বাংলাদেশ সরকারের নেয়া রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

    সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান। স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস হতে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের কী কী সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এর ফলে পুঁজিবাজারে সৃষ্ট হওয়া প্রভাব নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। তিনি বলেন, মাথাপিছু জাতীয় আয় সূচকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সীমা হচ্ছে ১ হাজার ২৩০ ইউএস ডলার বা তার বেশি। সেখানে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ১ হাজার ২৩৪ ইউএস ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উত্তরণ সীমা ৬৬ বা তার বেশি, যেখানে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭৩ দশমিক ২০। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণ সীমা ছিল অন্যূন ৩২, যেখানে বাংলাদেশের মান হচ্ছে ২৫ দশমিক ২০। পুঁজিবাজারে সৃষ্ট প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি যদি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে বহাল রাখতে পারি, তবে পুঁজিবাজার নিয়ে আমাদের আশঙ্কার কিছু নেই। মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষতার উন্নয়ন এবং উৎপাদন ক্ষমতার বৃদ্ধিতে আমাদের কিছু মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। সাধারণত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশীদের পোর্টফোলিও বিনিয়োগও বাড়ে, যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিশ্বের প্রধানতম বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরকের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। এখানে তারা বিনিয়োগও করেছেন। এ ধরনের বিনিয়োগ বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা মন্দা বাজার থেকে শেয়ার কেনেন আর চাঙ্গা বাজারে বিক্রি করেন।

    প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কারণে বিশ্বব্যাংক আমাদের এ মর্যাদা দিয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, ২০২৬ সাল পর্যন্ত তারা আমাদের মূল্যায়ন করবে এবং দেখবে আমরা এ যোগ্যতা ধরে রাখতে পারি কিনা। আমাদের সামনে এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই) কম। আমাদের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে, পুঁজিবাজার সেভাবে এগোয়নি। তবে অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুঁজিবাজারের জন্য আমরা পরিকল্পনাগত যে নকশা তৈরি করেছি, তা বাস্তবায়িত হলে দেশ নিঃসন্দেহে উন্নত দেশগুলোর পথেই হাঁটবে।

    পুঁজিবাজারে অবদান রাখতে হলে দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রশিক্ষণ খাতে আমরা যথেষ্ট বরাদ্দ রেখেছি। বিএসইসির কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক আনা হবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে এ প্রশিক্ষণ নিতে হবে, যাতে তারা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। আমি আশা করব, কোম্পানিগুলো নতুন করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন অনুসরণ করার পাশাপাশি নতুন নতুন বিষয়ে গবেষণা করবে। এতে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করে তারা ভালো রাজস্ব আয় করতে পারবে। তেমনটি হলে, পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্ক, কোটা ও জিএসপি সুবিধা হারানোর মতো কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধান অনুযায়ী বাজার অভিগম্যতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো যে বিশেষ সুবিধা পেত, সেটিও আমরা হারাব। এগুলো আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগিতাগুলো আমাদের পুরোপুরিভাবে নিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকসের অগ্রগতিকে সক্রিয় রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।

    বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী পুঁজিবাজারে নতুন পণ্য প্রচলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এজন্য আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকার ১০০টি ইকোনমিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কারণে আমাদের এখানে বিনিয়োগে বিদেশীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। প্রযুক্তিগত উত্কর্ষের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রবণতায় লাগাম টানা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

    বিএসইসির কমিশনার মো. আমজাদ হোসেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নতুন পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেবার মাধ্যমে আমরা অবদান রাখছি। আর সেবার মান বাড়ানোর জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বাড়াতে হবে। এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

    উল্লেখ্য, সেমিনার শেষে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের সাফল্য উদযাপনের জন্য আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় যোগ দেন বিএসইসির সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

    ওএফ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close