• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মিনি গ্রিডের বিদ্যুতে আলোকিত হচ্ছে দুর্গম এলাকা

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৮, ১৩:৩৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চায় সরকার। কিন্তু চরাঞ্চল বা দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তৈরি জাতীয় গ্রিডে সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ এখন বসবাস করছেন অফগ্রিড এলাকায়। সরকার বলছে, বিপুল পরিমাণ এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়া হবে মিনি গ্রিডের মাধ্যমে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে এ ধরনের ১২টি মিনি সোলার গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে। আরও ১৩টি মিনি গ্রিড নির্মাণাধীন। এর গ্রিড থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ প্রতি ইউনিটে গড়ে ৩০ টাকা। বাড়তি এই দামে বিদ্যুৎ কিনেও অখুশি নয় গ্রাহক-ক্রেতারা।

সম্পর্কিত খবর

    ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল) জানিয়েছে, একটি পরিবার কেরোসিনের বাতি ব্যবহার করলে মাসে অন্তত ৬০০ টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে, একই পরিবার সোলার মিনি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিলে মাসে বিল আসে প্রায় ৪০০ টাকা। তাছাড়া সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বাল্ব জ্বালানো ছাড়াও ফ্যান চালানো যায়। টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটরও চলে এই বিদ্যুতে। জীবনমান উন্নয়নের তাগিদ থেকেই এসব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে মানুষ। আর তার জন্যই জাতীয় গ্রিডের সরবরাহ না পেলেও তারা মিনি গ্রিড থেকে বেশি দামেই কিনছেন বিদ্যুৎ।

    জানা গেছে, দেশে এখন ৬০ লাখ বাড়িতে সোলার হোমসিস্টেম রয়েছে। আরও ৪৯ লাখ বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। ২০২১ সালের আগেই এই কাজ শেষ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

    দেশের দুর্গম চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় এখনই জাতীয় গ্রিড নির্মাণ সম্ভব নয় বলেই এসব এলাকায় বিকল্প হিসেবে মিনি অফগ্রিড সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সূর্যের আলোতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে ধরে রেখে তা সরবরাহ করা হয়। এসব স্থানে উদ্যোক্তা নিজেই সরবরাহ লাইন এবং মিটার স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকেন। বিদ্যুতের বিলও আদায় করেন তিনিই।

    বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, সরকারিভাবে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) অধীনে বিদ্যুতের সুবিধাবঞ্চিত অফগ্রিড এলাকার ৪৯ লাখ ১৬ হাজার বাড়িতে সরবরাহ করা হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যবহৃত হচ্ছে ১১টি মিনিগ্রিড বা মাইক্রোগ্রিড বা ন্যানোগ্রিড সিস্টেম। দেশের অন্তত ১৬ শতাংশ এলাকা এসব অফগ্রিডের আওতাভুক্ত। এর বাইরে ভোলার মনপুরায় বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে একটি মিনি গ্রিড।

    মনপুরার মিনি গ্রিডের উৎপাদন ক্ষমতা ১৭৭ কিলোওয়াট। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছেন ৩০ হাজার মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, সৌর বিদ্যুতের কারণে তাদের জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। লেগেছে ডিশ লাইন, ঘরে উঠেছে ফ্রিজ, পাড়ার মোড়েই গড়ে উঠেছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র, চলছে স-মিল, মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ, ফার্নিচার কারখানা। ১০০ অটোরিকশাও চার্জ দেওয়া হয় ওই বিদ্যুৎ দিয়েই। কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে সোলার ইলেক্ট্রো বাংলাদেশ লিমিটেড।

    এসব মিনি গ্রিড নির্মাণের খরচের ৫০ শতাংশই আসে অনুদান থেকে। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ। আর স্বল্পসুদে প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৩০ শতাংশ ঋণ আকারে দিচ্ছে ইডকল। ইডকলের মডেল অনুসরণ করেই প্রকল্পগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

    মিনি গ্রিডে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘গ্রাহক যেখানে একেবারেই বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, সেখানে এ ধরনের প্রকল্প রয়েছে। এটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে চলছে। মানুষ তার প্রয়োজনেই এ ধরনের বিদ্যুৎ কিনছে। এতে তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটছে।’

    পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘গ্রিড লাইন দিয়ে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। কিন্তু সরকার সারাদেশকেই বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসতে চায়। তাই যেসব এলাকায় জাতীয় গ্রিড নেই, সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মিনি গ্রিডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি—দুভাবেই অফগ্রিড এলাকাগুলোকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে।’ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের অফগ্রিড এলাকার পুরোটাই মিনি গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

    ওএফ

    বাংলা ট্রিবিউন

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close