• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তাপ্রাপ্তি

দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে যুক্ত হচ্ছে গ্রামীণফোন ও রূপালী ব্যাংক

প্রকাশ:  ১৬ জুলাই ২০১৮, ১৬:৪৮
বিজনেস ডেস্ক

কর্মক্ষেত্রে হতাহত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে গঠন হয় বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন। তবে এ তহবিলে অর্থ জমা শুরু হয় ২০১৩ সালের জুলাইয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা বোর্ড গঠনের পর। এ পর্যন্ত তহবিলে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকা জমা হলেও শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৪ কোটি টাকা। প্রতিদিন শত শত আবেদন জমা হলেও সেগুলো বাছাই ও সংশোধনের পর চেকের মাধ্যমে সহায়তা প্রাপ্তিতে দেখা দিচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা। এ সমস্যা নিরসনে আবেদন ও সহায়তা প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে গ্রামীণফোন ও রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস শিওরক্যাশ। সূত্র: বর্ণিক বার্তা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, কল্যাণ তহবিলে সহায়তার আবেদনে অনেক সময় ত্রুটি ধরা পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে নকল আবেদন শনাক্ত হয়। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে প্রান্তিক শ্রমিকরা অনেকেই আবেদন করতে পারেন না। আবেদন গ্রহণ ও সহায়তা অনুমোদন হলেও দেখা দেয় দীর্ঘসূত্রতা। এ কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল ও অনলাইন ব্যবস্থাপনায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াটিতে যুক্ত হবে গ্রামীণফোন ও রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস শিওরক্যাশ।

চলতি মাসে অনুষ্ঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ১৮তম বোর্ড সভায় গ্রামীণফোন ও রূপালী ব্যাংককে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের আলোচনায় বলা হয়, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমা হওয়া আর্থিক অনুদানের আবেদনে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে বেশকিছু আবেদনপত্র বাতিল করতে হয়। এসব আবেদন কেন বাতিল করা হলো তা এসএমএসের মাধ্যমে আবেদনকারীকে জানিয়ে দিতে গ্রামীণফোনের সঙ্গে একটি চুক্তি করা যেতে পারে। যেসব আবেদন গৃহীত হবে, তাও একই প্রক্রিয়ায় জানিয়ে দেয়া হবে। এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনা হয়েছে এবং প্রতিটি এসএমএসের জন্য ৩৫ পয়সা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে বলে গ্রামীণফোন জানিয়েছে।

রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রসঙ্গে আলোচনায় বলা হয়, রূপালী ব্যাংকের সেবাটি শিওরক্যাশ নামে পরিচিত। শিওরক্যাশ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে একটি সহজ অটোমেটেড মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট সেবার প্রস্তাব দিয়েছে। যার মাধ্যমে ফাউন্ডেশন থেকে শ্রমিক ও শ্রমিকের পরিবারকে অনুদানের অর্থ আরো দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, প্রতিদিন শত শত আবেদন জমা হচ্ছে, বাছাই করা, ভুল-ত্রুটি সংশোধন, আবার অনেক সময় নতুন করে আবেদন গ্রহণ করে চেকের মাধ্যমে সহায়তা প্রদানে জটিলতা তৈরি হচ্ছে এবং সময় বেশি লাগছে। অনলাইন সিস্টেম চালু হলে এ কাজটি দ্রুত এবং আরো স্বচ্ছ হবে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, সফটওয়্যারের কাজ সম্পন্ন হলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে সহায়তার আবেদন অনলাইনে নেয়া হবে। এতে আবেদন গ্রহণ ও বাছাই কার্যক্রম সহজ হবে। শিওর ক্যাশের মাধ্যমে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে আবেদনকারীর হাতে সহায়তার অর্থ পৌঁছানো সম্ভব হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে বিতরণ করা অর্থ পোশাক শিল্প ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা পাচ্ছেন। এর মধ্যে নির্মাণ খাত, চাতাল, তামাক, পাথরভাঙা খাতের শ্রমিক ও গৃহকর্মীও আছে। তহবিল সম্পর্কে অনেক শ্রমিক এখনো অবগত নন। আবার যথাযথভাবে নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করে সহায়তা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটিও কিছুটা সময়সাপেক্ষ।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ডা. এ এম এম আনিসুল আউয়াল বলেন, আমরা যত আবেদন পাই, কমিটির মাধ্যমে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি আরো সহজ ও স্বচ্ছ করতে ডিজিটাল ও অনলাইন ব্যবস্থা প্রণয়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অর্থ প্রাপ্তির আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, তহবিলটির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আমরা অনেক প্রচারণা চালাচ্ছি। যত আবেদন আসছে তা যেন দ্রুত মীমাংসা হয়, সেই চেষ্টা করা হয়। তবে অনেক সময় নকল আবেদন জমা পড়ে। এজন্যই যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সচেতন হতে হয়।

বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী গঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী যাদের কোম্পানি মূলধন ২ কোটি টাকার উপরে অথবা মোট সম্পত্তি ৩ কোটি টাকার উপরে হলে বছর শেষে যে লভ্যাংশ ঘোষণা হয়, সেই লাভের শতকরা ৫ ভাগ শ্রমিক কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। বছর শেষে লাভের ৫ ভাগের এক দশমাংশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন-২০০৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিক ও তার পরিবারের কল্যাণ সাধন, অসুস্থ/অক্ষম বা অসমর্থ শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য প্রদান, দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে তার পরিবারবর্গকে সাহায্য প্রদান, শ্রমিকদের জীবন বীমা করার জন্য যৌথ বীমা ব্যবস্থার প্রবর্তন করাসহ শ্রমিকের পরিবারের মেধাবী সদস্যকে শিক্ষার জন্য বৃত্তি কিংবা স্টাইপেন্ড প্রদান করা ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, তহবিল থেকে অর্থ প্রাপ্তির আবেদন প্রক্রিয়াটি অনেকটাই আমলাতান্ত্রিক। অর্থ বিতরণের সময় যাচাই-বাছাই করবে সেটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত কিন্তু আবেদনের সময় সরকারি প্রতিনিধিদের সুপারিশ নিয়ে আবেদন করতে হয়। এ কারণে প্রান্তিক শ্রমিকরা অনেকেই আবেদন করতে পারছেন না। সবচেয়ে বড় কারণ তহবিলটি সম্পর্কে অনেক শ্রমিকই জানেন না। আসলে তহবিলের অর্থ বিতরণটা ব্যক্তি-কেন্দ্রিকের চেয়ে প্রতিষ্ঠান-কেন্দ্রিক হলে বেশি ভালো হতো। কয়েকটা হাসপাতালকে যদি তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়, যেখানে শ্রমিকরা গেলে তহবিল থেকে সাহায্য দেয়া হবে। জেলাভিত্তিক স্কুল লক্ষ্য হতে পারে, যে অঞ্চলে শ্রমিক বেশি সেসব অঞ্চলের স্কুল হতে পারে। যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা যেতে পারে।

ওএফ

ব্যাংক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close