তেঁতুল খেলে কি রক্ত পানি হয়!
অনেকেই বলে থাকেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। এ কথাটির উদ্ভব কীভাবে হল, সেটি জানি না। তবে কথাটা যে ঠিক নয়, এটা সত্য। রক্তকে পানি করে দেয়ার মতো কোনো উপাদানই তেঁতুলের মধ্যে নেই।
এবার রক্ত ও পানির আয়োনিক অবস্থাটা একটু দেখা যাক। রক্তের পিএইচ ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৪ আর পানির পিএইচ ৭। রক্ত ও পানির পিএইচ খুব কাছাকাছি মনে হলেও এ দুটির পিএইচ এক হওয়ার আশঙ্কা, অর্থাৎ রক্তের পিএইচ সহজেই কমে আসার আশঙ্কা খুবই কম। কারণ, রক্তের রয়েছে বাফার সিস্টেম। এই বাফার সিস্টেমের কাজ হচ্ছে রক্তে এসিড বা অম্ল এবং অ্যালকালি বা ক্ষারের পরিমাণের তারতম্য হলে তাকে স্বাভাবিক রাখা। এই বাফার সিস্টেম ব্যর্থ না হলে পিএইচের তারতম্য ঘটবে না। আর শরীর মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত না হলে রক্তের পিএইচের তারতম্য ঘটার আশঙ্কা কম। আর সামান্য তেঁতুলে রক্তের পিএইচ এসে পানির সমান হবে, তা কোনো ক্রমে আশা করা যায় না।
সম্পর্কিত খবর
এ ছাড়া পানির মধ্যে আছে শুধু অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। আর রক্তের মধ্যে হাইড্রোজেন-অক্সিজেন ছাড়াও প্রচুর প্রোটিন ইলেকট্রোলাইটসহ আরও অনেক উপাদান রয়েছে। কাজেই শুধু পিএইচ সমান হলেই যে রক্ত শুধু পানি হয়ে যাচ্ছে, সেটি বলা যাচ্ছে না। কারণ, পিএইচ কমলেও রক্তের অন্যান্য উপাদানও বিভিন্ন মাত্রায় উপস্থিত থাকে। যা-ই হোক, আসল কথা হচ্ছে, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয় না। এটাই ঠিক কথা। তেঁতুল খেয়ে রক্তকে পানি করা সম্ভব নয়।
পরোক্ষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল দারুণভাবে কাজে এসে থাকে। আসলে এই ফলটিতে উপস্থিত বেশ কিছু এনজাইম, কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে সুগারের কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বাড়তে থাকলে নানা কারণে রক্তে শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই তো অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করেন চিকিৎসকরা।
প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে শুধু সংক্রমণ নয়, ছোট-বড় কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।