• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

কেমিক্যাল পান করে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

প্রকাশ:  ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১০:৩৯ | আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১১
আব্দুল বাতেন, গোদাগাড়ী (রাজশাহী)

রাজশাহী নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত একটি ওষুধ কম্পানীর কারখানায় কর্মরত কেমিক্যাল পান করে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আরো ৭ জন আশঙ্কাজন অবস্থায় রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

একই গ্রামের চারজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো গ্রামে শোকেয় ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামটিতে ঢুকতেই অজস্র লোকের চোখে পানি দেখা যায়। আর দলে দলে মৃত্যু মুখটি শেষ বারের মত দেখতে ভিড় জমিয়েছে বাড়িগুলোতে।

সম্পর্কিত খবর

    অসুস্থতরা জানান, রাজশাহীর সপুরা বিসিক শিল্প এলাকার টিম ফার্মা নামের একটি ওষুধ কারাখানায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অতিরক্ত কাজ করার সময় এক ধরনের কেমিক্যাল একজন কর্মচারী পান করতে বলেন। এতে তারা কিছুটা স্বস্তি পান। পরে রাতে একটি বোতল নিয়ে বেশি পরিমাণে পান করেন তারা। এতেই ঘটে বিপত্তি।

    বৃস্পতিবার সকালে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের চব্বিশনগর ডাইংপাড়া গ্রামের তফিজুলের ছেলে বকুল (৩৬) ও একই গ্রামের ইউসুফের ছেলে তৌহিদুল (২৩)।

    নিহতের বাড়ীতে যখন চলছে শোকের মাতম ঠিক দুপুর ২ টায় একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে দুলাল হোসেন (২৫) নামের আরেক শ্রমিক মৃত্যু খবর এলকায় আসলে পুরো গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে যায়।

    হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর শ্রমিকরা হলেন, গোদাগাড়ী উপজেলার জামিল উদ্দিন, পারভেজ হোসেন, খানজাহান, মিনরুল , মোশাররফ হোসেন, এবং অয়েন। এদের মধ্যে টুলুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানযায়।

    চব্বিশ নগর ডাইংপাড়া গ্রামে নিহত শ্রমিক তৌহিদুলের বাড়ী গিয়ে দেখা যায় মা তহুরা বেগম একমাত্র সন্তান কে হারিয়ে অঝড় নয়নে পানি বেড়ে পড়ছে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন আমার সন্তান আর ফিরে আসবে না, আমার একমাত্র ধনকে হরিয়ে ফেললাম এখন কি করে খাব কি নিয়ে বাঁচব এভাবে কাঁদতে কাঁদতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছে মা তহুরা বেগম।

    এসময় গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ইসহাক, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার (সহকারি কমিশার ভূমি) সানওয়ার হোসেন, রিশিকুল ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু গেলে পিতা ইউসুফ আলী ও মা তহুলা বেগমের বুক ফাঁটা কান্না সকলের নয়ন ভাসিয়ে দেয়। আশে পাশের পুরো লোকজন তাদের সাথে না কেঁদে পারছে না।

    তৌহিদুলের চাচাতো বোন নাজমার সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমার চাচা-চাচীর একটি মেয়ে শ্যামলী ও একমাত্র সন্তান তৌহিদুল। তৌহিদুলের বিয়ে হয়নি। মাত্র দুইমাস আগে তৌহিদুলের বড় বোন শ্যামলী (২৫) পিতার বাড়ী বেড়াতে এসে সাপের কামড়ে মারা যাই। আজ আবার একমাত্র ছেলেকে হারাতে হলো তাহলে এর চাইতে আর মর্মান্তিক কি হতে পারে।

    বৃদ্ধ পিতার মুখে কোন কথা নেই যেন পাগলের মত এদিক ওদিন যাচ্ছে। সব মিলিয়ে নিহদের বাড়ীতে যেন এক হৃদয় নিদাড়ক অবস্থা বিরাজ করছে।

    আরেক নিহত শ্রমিক বকুলের বাসা গিয়ে দেখা যায় মৃত দেহটি পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য ভূটভূটিতে রাখা আছে আর পরিবারের লোকজন দু চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। বকুলের দুটি ভাই তিনি ছোট অভাবের সংসার।

    দুপুর ২ টার পর দুলালের খবর আসলে তাঁর বাড়ী গিয়ে দেখা যাই অসুস্থ্য বাবা ভ্যানে বসে আনমনা হয়ে বসে আছে কাছে গিয়ে কথা বলতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে হাউমাও করে কাঁদতে লাগলো। আর দুলালের ফুফুরা একে অপরকে জড়িয়ে কেঁদেই চলেছে । দুলালের মা দুলালী বেগম ছেলে অসুস্থ্য হওয়ার সাথে সাথেই রাজশাহী মেডিকেলে ছুঁটে গেছেন।

    উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইসহাক বলেন একটি গ্রামে তিন জনের মৃত্যু এবং আরো ৭ জন অসুস্থ্য হয়ে পড়াই যেন গ্রামটিতে হাহাকার উঠেছে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। তিনি বলেন একসময় কলেরা রোগের কথা শুনতাম একটি গ্রামে হলে সবাই আক্রান্ত হতো আজ মনে হচ্ছে সেই দৃশ্য দেখতে হলো। স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম টুলু বলেন আমি সকাল হতেই এইগ্রামে আছি সকল কিছু দেখা শুনা করছি । এই গ্রামের দৃশ্য দেখে খুবই কষ্ঠ হচ্ছে।

    এদিকে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি হিপজুর আলম মুন্সি জানান।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close