উৎপলের পর সিজারকে নিয়েও অন্ধকারে পুলিশ
রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান সিজার নিখোঁজের ঘটনায় কূলকিনারা করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই অবস্থা এক মাসেরও বেশি সময় আগে নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিক উৎপল দাসের। দু’টি পরিবারেই তাদেরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে চান তারা।
গত কয়েক বছর ধরেই গুম না নিখোঁজের ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা চলছে দেশ-বিদেশে। এসব ঘটনার জন্য বিরোধী দলগুলো সরকারি সংস্থাগুলোকে দায়ী করে আসলেও সরকারি বাহিনীগুলো কাউকে তুলে নেয়ার কথা স্বীকার করেনি।
সম্পর্কিত খবর
বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত তিন বছরে তিন শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশের স্বজনরা নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে র্যাব বা পুলিশ এসব অভিযোগ স্বীকার করেনি। অবশ্য সিজার বা উৎপল-কারও পরিবার এই ধরণের কোনো অভিযোগ করেনি।
আইন অনুযায়ী কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। জানাতে হয় তাদের স্বজনদেরকে, সুযোগ দিতে হয় আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের।
কিন্তু উৎপল বা সিজারের ক্ষেত্রে এই ঘটনার কোনোটিই ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তারা আটক করেনি আর উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
গত ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান সিজার। এই ঘটনায় তার বাবা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু সিজারকে উদ্ধার অভিযানে কোনো বলার মতো অগ্রগতি নেই।
জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে সিজারের ব্যাপারে তার বাবা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরাও সেটি তদন্ত করছি। তবে তার ব্যাপারে অন্য কোনো তথ্য নেই আমাদের কাছে।
সিজার দক্ষিণ বনশ্রীর বাসায় তিনি বাবা-মা, বোন এবং কন্যা সন্তানের সঙ্গে বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তার।
বিশ্বায়ন, ইসলাম, জঙ্গিবাদ নিয়ে নানা গবেষণা করছিলেন এই শিক্ষক। তার এসব কাজের সঙ্গে তার অন্তর্ধানের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার আছে।
সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন বলেন, সিজার সব সময় সরকারের পক্ষেই লেখালেখি করেছেন। এছাড়া সে জঙ্গিবাদের ব্যাপারে একামেডিক লেখাপড়া করেছে। তার কোনো কর্মকাণ্ডে কারও সঙ্গে শত্রুতা থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। তার সাবেক স্ত্রীও এমনটা করবেন বলেও বিশ্বাস করি না। সত্যিই তার নিখোঁজ হওয়াটা বিস্ময়কর।
সিজারের বাবা জানান, নিখোঁজ হওয়ার দিন তার সাড়ে পাঁচ বছরের নাতনি আরিআনাকে নিয়ে শপিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সিজার না শিশুটিকে মিথ্যা বলছেন তারা।
সিজারের বাবা বলেন, আমরা আরিআনাকে বললাম, ‘তোমার বাবা বিদেশে চলে গেছে। তখন আরিআনার প্রশ্ন ছিল, কেন আমার বাবা বিদেশে গেল? কেন আমাকে না বলে বিদেশে গেল?
বেশ কিছু দিন ধরেই সিজার অজানা আতঙ্কে ছিলেন বলে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে জানিয়েছিলেন। তিনি হলেন জায়েদুল আহসান পিণ্টু। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক। তিনি তার ফেসবুকে বিষয়টি প্রকাশ করেছেন।
পিণ্টু লিখেন, মুবাশ্বার হাসান সিজার সপ্তাহখানেক আগে ফোন করে জানালো খুব আতঙ্কে আছে, কিছুদিন আগেও ভুয়া পরিচয়ে দু’টি ছেলে তার বাসায় ঢুকতে চেয়েছিল। আমি তারে বললাম বাসায় সিসি ক্যাম লাগাতে। সেটাও করল। দোয়া চাইল। সাবধানে থাকতে বললাম। আমি কাউন্টার টেররিরজম ইউনিট প্রধানকেও বিষয়টা জানালাম। সিজার ওর পরিবারের সদস্যদেরও বলেছিল কোনো বিপদে পড়লে যেন তারা আমাকে জানায়। ওর ছোট বোন ভোরে যখন ফোন করে বলে ভাইয়া নিখোঁজ, তখন নিজেকে বড় অসহায় লাগল।
এ বিষয়ে জানতে জনাব পিণ্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাড়তি আর কিছু না জানিয়ে বলেন, আমি যা জানি ফেসবুকে লিখে দিয়েছি।
অপেক্ষায় উৎপলের পরিবার
গত ১০ অক্টোবর নিখোঁজ হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি ডট কমের সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস। এ ঘটনায় তার বাবা চিত্তরঞ্জন দাস মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তার অফিসের পক্ষ থেকেও মতিঝিল থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। কিন্তু একমাসের বেশি সময় পার হলেও উৎপল দাসের কোনো সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ।
উৎপল দাসের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ছেলের কোনো সন্ধান পাইনি। আমরা আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি আপনারা দ্রুত আমার ছেলেটা খোঁজার জন্য সহযোগিতা করেন।
তিনি জানান, আমাদের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ, শত্রুতা নেই। তাই কেউ আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে বা তুলে নিয়ে গেছে- এমন সন্দেহও করতে পারছি না।
জানতে চাইলে মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রাব্বানি বলেন, এখন পর্যন্ত উৎপল দাসের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি।