• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বলি হবেন কত বাংলাদেশি!

প্রকাশ:  ২০ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:১৭
সৈয়দ মোকছেদুল আলম

নিউইয়র্ক থেকে ৩৭ বছর পর দেশে ফিরবেন বাংলাদেশি রিয়াজ তালুকদার। কিন্তু তাঁর মনে কোন আনন্দ নেই। শুধুই হতাশা আর নিরুপায় কান্নার নীরব বিসর্জন। কেন?

২০ নভেম্বর। তাঁকে ডাকা হয় ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস পুলিশ-আইস দপ্তর কার্যালয়ে। সেখানেই তাঁর দেশে ফেরার চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক হবে। আর যদি তা হয়, দুই সন্তান আর ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীকে রেখেই দেশ ছেড়ে যেতে হবে।

সম্পর্কিত খবর

    ৫০ বছর বয়সেও রিয়াজ তালুকদার মূল ধারার কিছু গণমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এই কথাগুলোই জানান।

    প্রভাবশালী গণমধ্যম এই বিষয়ে আবেদনময় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্কের সর্বাধিক প্রচারিত টেলিভিশন চ্যানেল ‘নিউইয়র্ক ওয়ান’ রিয়াজ তালুকদারকে নিয়ে দিনভর প্রতিবেদন প্রচার করেছে । সেখানে দেখা গেছে, রিয়াজ তালুকদার ও তাঁর স্ত্রী আর দুই সন্তান কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। এর আগে জ্যাকসন হাইটসে কিছু মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক আর তার অভিবাসন নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে এ পরিবারটিকে বিচ্ছিন্ন না করার আকুল আবেদন তুলে ধরেন।

    “দেখুন এ মানুষটির বিরুদ্ধে গত ৩৭ বছরে একটিও ফৌজদারি প্রতিবেদন নেই (ক্রিমিনাল রিপোর্ট)। তার সন্তানেরা এই দেশে পড়ছে। আইন ভাঙার কোনো রেকর্ড নেই। সে নিয়মিত সরকারকে কর প্রদান করছে। তবুও কেন, তাকে চলে যেতে হবে এ দেশ থেকে? যেখানে দেশে তার জীবন শঙ্কার মধ্যে কাটবে, ছেলে মেয়েরা পিতাকে হারিয়ে পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে!’ রিয়াজ তালুকাদরের আইনজীবী অ্যাডওয়ার্ড কুসিয়া এক নাগাড়ে এইসব যুক্তি দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ।

    ১৯৮০ সালে সেখানে যান রিয়াজ তালুকদার। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২০১০ সালে তার বিতাড়নের আদেশ হয়। কেউ তখনো গ্রিন কার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত না। ১৯৯০ সালে দেরিতে আবেদনকারীদের জন্য গ্রিন কার্ড আবেদনের নিয়ম চালু হয়। রাজনৈতিক আশ্রয়ের রীতি মেনে সেটাতে আবেদন করেন রিয়াজ। তবে, আইনজীবীর দেওয়া কাগজপত্রে গোঁজামিল; সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। কিন্তু এর পরিণতি তাঁর পরিবারের জন্য কতটা বিচ্ছেদ-যন্ত্রণার হতে পারে জানা ছিল না তালুকদারের।

    তালুকদারের মত লাখ লাখ মানুষ এখনো বসবাস করেন নিউইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১০ সালে একবারা যখন ইমিগ্রেশন পুলিশ তার দরজায় কড়া নাড়ে তখন প্রথমবার জানতে পারেন, দেশে ফিরতে হবে। নিয়মানুযায়ী সন্তানদের লেখা পড়া ও দেশে আইন ভাঙার রেকর্ড না থাকা পরিবারগুলো আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা পাওয়ার বিধান করেন ওবামা তাঁর আমলে। সেই জোরেই এতদিন ইমিগ্রেশন দপ্তরে হাজিরা দিয়ে কেটেছে। বড় আশা ছিল, তাাঁর বড় সন্তান রাফির বয়স এখন ১৭। বয়স ২১ বছর হলে রাফি বাবার জন্য সহজেই গ্রিন কার্ডের আবেদন করতে পারবে। সেই আশা-স্বপ্ন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়বে ভাবলেই হলুদ সর্ষে ফুল দেখেন রিয়াজ।

    ২০ নভেম্বর, ম্যানহাটনের ফেডারেল প্লাজা। ইমিগ্রেশন পুলিশ দপ্তরে রিয়াজ হাজিরা দিতে যাবেন। প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে স্থানীয় কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের। কোন কোন সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশি কেউ। ডেসিস রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং- ড্রাম সেসব সংগঠনের একটি। এদের দেওয়া তথ্য হচ্ছে, রিয়াজ তালুকদারের পক্ষে প্রায় সাত হাজার অনলাইন আবেদন জমা হয়েছে। তারা দাঁড়াবে প্রতিবাদ করতে। কিন্তু প্রশাসন না চাইলে হয়তো রিয়াজের দেশে প্রত্যাবর্তন ঠেকানো যাবে না।

    মাস দুয়েক আগে এমন ১১ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। তালিকায় রিয়াজ তালুকদারের মতো আরও অনেকেই আছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বলে কথা। কোনো বাছ-বিচার হচ্ছে না। বিতাড়নের আদেশ থাকলেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে দেশে।

    এই অনিশ্চিৎ জীবনের খড়্গ রিয়াজ তালুকদারের মত কত বাংলাদেশির সব তছনছ করে দেবে কে জানে? আর এ রকম পরিস্থিতি আমরা কিভাবে সামাল দেব তা ভাবার সময় এখনই।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close