• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে নিহত ১০, নেপথ্যে ঢালু প্রবেশ পথ

প্রকাশ:  ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৩০ | আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৮
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের জামালাখান এলাকার রীমা কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথ মূল সড়ক থেকে দশ ফুট ঢালু। ফলে উপর দিক থেকে আসা মানুষের স্রোতের চাপে পড়ে নিচের দিকের মানুষ হতাহত হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার পূর্বপশ্চিমকে এ কথা জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত খবর

    তিনি বলেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা। মূল রাস্তা থেকে ১০ ফুট নিচে অবস্থিত রীমা কমিউনিটি সেন্টার। গেট দিয়ে ঢোকার রাস্তাটি এতো ঢালু হওয়ায় উপর দিকের দিকের লোকজনের চাপে নিচের দিকের সামনের লোকজন নিচে পড়ে যায়। তাই এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এটি কোন ধরণের নাশকতা নয়। অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

    তিনি আরও বলেন, নিহতদের শরীরে কোনো ধরণের ধারালো কিছুর আঘাত পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ হয়েই তারা মারা গেছেন।

    এদিকে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে নিহতদেও মধ্যে সাত জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- কৃষ্ণপদ দাশ (৪০), সুবীর দাশ (৫০), ঝন্টু দাশ (৪৫), প্রদীপ তালুকদার (৪৫), লিটন দেব (৫৩), ঘনা শীল (৬০), দীপঙ্কর দাশ রাহুল।

    নিহতদের মধ্যে দীপঙ্কও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের ২০১৪-২০১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অর্ধশত মানুষ। সোমবার দুপুরে নগরীর জামালখান সংলগ্ন রীমা কমিউনিটি সেন্টারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

    পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাত তিনটায় চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে মারা যান চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরিবারের পক্ষ থেকে সোমবার কুলখানি আয়োজন করা হয়। এ জন্য নগরীর ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয় মেজবানের। জামালখানের রীমা কমিউনিটি সেন্টারে অমুসলিমদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। ওই কমিউনিটি সেন্টারে ১২টার পর থেকে খাবার পরিবেশন শুরু হয়। টানা দুইঘণ্টা শৃঙ্খলার সাথেই খাবার পরিবেশন করছিল কমিউনিটি সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

    দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ করেই মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এ সময় কমিউনিটি সেন্টারের উঠানে রাস্তার উপর থেকে আসা মানুষের চাপে ঘটনাস্থলেই আহত হয় ৫০ জন। তাদের উদ্ধার করে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় জামালখান-আসকারদীঘি পাড় সড়কে তীব্র যানজটের ফলে আহতদের মেডিকেল নিয়ে যেতে কিছুটা সময় লেগে যায়।

    সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দুই তলা ভবনের রীমা কমিউনিটি সেন্টারের নিচ তলায় গাড়ি পার্কিং। অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা দ্বিতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলা থেকে নামার সময়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিকেল ৪টার দিকে রীমা কমিউনিটি সেন্টারের উঠানে শত শত জুতা, স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখা যায়।

    রীমা কমিউনিটি সেন্টারের স্বেচ্ছাসেবক অনুপ দাস জানান, দুপুর ২টার পর কমিউনিটি সেন্টারের উঠানে হাজারো মানুষ ভিড় করে। এ সময় দোতলা থেকে তাড়াহুড়ো করে একদল নামার সময় নিচের দিকে লোকজন পদদলিত হয়ে চাপা পড়ে যান। ফলে এতো মানুষ হতাহত হয়।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বলেন, রীমা কমিউনিটি সেন্টার থেকে আনা আহতদের মধ্য থেক ১০জনকে মৃত ঘোষণা করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাকি আহতদের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মস্তিষ্কে আঘাত নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন তিনজন।

    এদিকে নিহতদের দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মেডিকেলে তিনি নিহতদের দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাকে দ্রুত বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

    মেডিকেলে প্রবেশের আগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, বাবার মৃত্যু শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকটি নতুন শোক চট্টগ্রামের মানুষের মনকে ভেঙে দিয়েছে। এ শোক সইবার মত নয়।

    নিহতের পরিবার ও আহতদের সহায়তা

    নিহত ১০ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী।

    এছাড়া আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নিহতদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচও তিনি বহনের ঘোষণা দেন।

    চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া ও আহতদের ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close