• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বিষফোঁড়া নিয়ে বেকায়দায় বিজিএমইএ

প্রকাশ:  ১৫ মার্চ ২০১৮, ১৫:৫১ | আপডেট : ১৫ মার্চ ২০১৮, ১৮:০৯
ওমর ফারুক

সময় চেয়ে রিভিউ আবেদন করা, নাকি বিষফোঁড়া ভবন ভেঙ্গে ফেলতে হবে এ নিয়ে দোটানা, সংশয় ও বেকায়দায় পড়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার এন্ড এক্সপোর্ট এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) কতৃপক্ষ। গত বছরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করার পর নিদ্দিষ্ট সময়ে ভবন ভেঙ্গে ফেলতে সংগঠনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভবন ভাঙতে আদালতের দেয়া নির্ধারিত বেঁধে দেয়া সময় শেষ হওয়ার আগেই আরো ১ বছরের সময় চেয়ে আবেদন করল তৈরি পোশাক রফতানিকারক সংগঠন বিজিএমইএ।

গত ৫ই মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৮ এপ্রিল বিজিএমইএর হাতিরঝিলের বহুতল ভবনটি ভাঙতে সাত মাস সময় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদেশে আদালত বলেছিলেন, এটাই শেষ সুযোগ। আর সময় দেওয়া হবে না। বর্তমানে আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে কাজ করছে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম।

সম্পর্কিত খবর

    জানা যায়, গত বছরের ৫ মার্চ আপিল বিভাগ বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) করা আবেদন খারিজ করে দেন। তখন ভবন ভাঙতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে আবেদন করতে বলেন। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন সরাতে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করেন। ১২ মার্চ আপিল বিভাগ আবেদন নিষ্পত্তি করের ছয় মাস সময় দেন ভবন সরাতে।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে অনেক চিন্তাভাবনা করছি ভবন ভাঙ্গা নিয়ে। তবে যেহেতু কোর্টের নির্দেশ সেহেতু আমাদের বোর্ডের সাথে আলাপ-আলোচনা করেই আদালতের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছি। তাছাড়া আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তারপর সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

    এদিকে তৈরি পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) ভবন সরানোর ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা মেনে, আইনি কোন সুযোগ থাকলে, তা গ্রহণ করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

    জানতে চাইলে সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, আদালত যেহেতু একটি রায় দিয়েছে সেহেতু আইন অনুযায়ী আমরাও সময় চেয়েছি। এর মধ্যে আমাদের ফাস্ট প্রেডিডেন্ট যারা এটার স্ট্রেক হোল্ডার আছে তাদের সাথে এবং আমাদের বোর্ডের সাথে আলোচনা করেই ভবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। আমরা আশা করি গার্মেন্টস বা আরএমজি’র বাংলাদেশের এক্সপোর্টের ৮২ শতাংশ এ সেক্টর থেকে আসে। সুতরাং ভবন ভাঙ্গার কারণে এ খাতের এক্সপোর্টের উপর যেন কোন ইপেক্ট না পড়ে সেই জন্য সরকারি এবং কোর্ট যেন সেই ব্যবস্থা নেয়।

    তিনি বলেন, এ ভবন ভাঙ্গার ব্যাপারে সরকারের সব লেভেলের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে। যে সব লেভেল সমাধান দিতে পারে সে লেভেব পযন্ত আমাদের বার্তা পৌঁছে দিলাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরাতো এ জমি প্রাইভেট কারো কাছ থেকে ক্রয় করিনি। বিজিএমইএ’র ভবনের জমিটা আমাদের এ্যালটমেন্ট দিয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তারা আমাদের এ্যালটমেন্ট দেয়ার পরে নিয়ম অনুযায়ী ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছি। আর বাকি ৫০ শতাংশ টাকা যে নিয়মে দেয়ার কথা ছিল পরিশোধ করেছি। সে অনুযায়ী আমরা এখানে এ ভবন তৈরি করেছি। আমাদের এখানে এক্সপোর্ট পরিচালনা হচ্ছে। সেই ভাবে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আমরা সবকিছু করলাম। এখানে হাতিরঝিল প্রজেক্ট আসলো পরে। আমাদেরকে ভবন তৈরি অনুমোদন হয়েছে আগে। যখন আমরা ভবন তৈরি করি তখন হাতির ঝিল প্রজেক্ট চালু হয়নি বা পরিকল্পনাও করা হয়নি। এখন ভবনটা হাতির ঝিল প্ল্যানে আসলে আমাদেরতো কিছু করার নেই।

    তিনি আরো বলেন, এটা তো আমাদের সমস্যা না । এটা আসলে সরকার এবং কোর্ট ঠিক করে নিবে কি ভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায়। তৈরি পোশাকখাতে ৮২ শতাংশ এক্সপোর্টের স্বার্থে সরকার সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবে বা কাজ করবে। এটা সাথে ফ্যাক্টরী, অনেক শ্রমিক-কর্মচারী, ব্যাক ওয়ার্ড, ফর ওয়ার্ড, ইস্যুরেন্স, ব্যাংক, এয়্যারলেন্স, হোটেল, টেক্সটাইল জড়িত। এটা নিয়ে বিবেচনা করলে অবশ্যই একটা সমাধান হবে। এটা একটি বিশ্ব ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    সংগঠনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ফাইনান্স) মোহাম্মদ নাসের জানান, ভবন ভাঙ্গলে তৈরি পোশাক খাতের বিরাট অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এতে ভিশন ২০২১ এর ৫০ বিলিয়নের টার্গেট পূরণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

    অন্যদিকে, ভবনটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নকশা অনুযায়ী করা হয়নি বলে রাজউক বলে আসছিল। তারসাথে পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংগঠনও ভবনটি ভাঙার দাবি জানিয়ে আসছিল।

    পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন থেকে জানা যায়, উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণি বা প্রকৃতি পরিবর্তনের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের জন্য বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে এবং এতে এর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

    জানা যায়, রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনা হলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে কিনা, তা জানতে চেয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন আদালত। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

    উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২ জুন বিজিএমইএর করা লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে যায় আপিল বিভাগে। ওই বছরের ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিজিএমইএ’র ১৬ তলা ভবনটি অবিলম্বে সংগঠনের নিজ খরচায় ভেঙে ফেলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে ৮ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ। এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়।

    ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে বিজিএমইএ ভবন একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এই লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। আর পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘বেগুনবাড়ি খাল’ ও ‘হাতিরঝিল’ জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। এ ক্ষেত্রে ভবন ভাঙার খরচ আবেদনকারীর (বিজিএমইএ) কাছ থেকে আদায় করবে তারা।

    ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঢাকার বিভিন্ন খালের পানিপ্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় বেগুনবাড়ি খালের পাড়ে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে ফেলার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close