• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ফাস্টফুডে অ্যারোসল, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৮, ১১:১৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

মশা মাছি তাড়াতে গিয়ে খোলা মেলা পরিবেশেই ফার্স্ট ফুডের খাবারের দোকানগুলো অ্যারোসল ছিটানো হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, অ্যারোসলে পোকা মারতে এমন এক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা খাবারে মিশলে খাবারকে বিষাক্ত করতে পারে।

আর এই খাবার খেলে কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু বিষয়টির প্রতি ভোক্তা বা দোকান কর্মীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    অথচ প্রতিটি অ্যারোসলের কৌটায় বাংলা এবং ইংরেজিতে এর ব্যবহারবিধি লেখা আছে, কোথায় এবং কী পরিবেশে এটি ছিটানো যাবে না, ছিটানোর পর কী করতে, তবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া থাকে। কিন্তু সেগুলো সচারাচর মানুষ পড়ে দেখে না।

    অ্যারোসলের গায়ে লেখা আছে, কোনোভাবে এটি গলায় গেলে পাকস্থলী পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মাত্রাতিরিক্ত জলীয় পদার্থ নির্গত না হয়। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শও আছে অ্যারোসলের গায়ে।

    বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিচার্স ইনস্টিটিউট-বিএআরআই এর বিজ্ঞানী দেবাশীষ সরকার এক গবেষণা করতে অ্যারোসলের বিপজ্জনক ব্যবহার দেখতে পান। ক্ষতিকর হলেও আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্ব না দেয়া বিষয়টির প্রতি ব্যবস্থা নিতে নগর কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন।

    দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘ফাস্ট ফুডের দোকানে খাবার খোলামেলাই থাকে। এই অবস্থায় অ্যারোসল স্প্রে করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

    সম্প্রতি নগর ভবনে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার তাগাদা দেন এই বিজ্ঞানী। আর মেয়র খোকন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এর জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়ারও আশ্বাস দেন। তিনি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালকে বিষয়টি নোট নিতেও বলেন।

    শীত শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে মশার উৎপাত। বাড়িঘর তো বটেই জন সমাগমের স্থানগুলোতেও ছোট্ট কীটের বড় যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। আর মশা থেকে বাঁচতে যেসব উপাদান ব্যবহার করে নগরবাসী, তার একটি অ্যারোসল।

    দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘কীটতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নানা বিষয়ের সঙ্গে ফাস্টফুডের বিষয়টি খেয়াল করি। এসব দোকানে বার্গার, রোল, নুডুলসসহ প্রায় সব খাবারই খোলা অবস্থায় থাকে। সেদিন দেখি আমার সামনেই দোকানে অ্যারোসল স্প্রে করছে।’

    ‘খোলা অবস্থায় অ্যারোসল কেন স্প্রে করছে জানতে চাইলে বলে, মশা মাছি মারার জন্য। এতে যে ক্ষতি হয়, সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই নেই।’

    এই গবেষকের সঙ্গে কথা বলার পর নগরীর গুলিস্তান, শাহবাগ, মালিবাগ এলাকায় বিভিন্ন দোকানে গিয়ে তার অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল দেখা যায়।

    মালিবাগের স্টার ফাস্টফুডের এক বিক্রয়কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দোকানের মধ্যে মশা মাছির উৎপাতের কারণে আমরা মাঝে মাঝেই অ্যারোসল স্প্রে করি। তাতে মশা বা মাছি খাবারে পড়তে পারে না। তবে এতে কোনো ক্ষতি হয় কি না তা আমি বলতে পারব না।’

    অ্যারোসলের গায়ে এটি ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও সেগুলো কখনও পড়ে দেখেননি বলে জানান ওই দোকান কর্মী। জানান, কখনও ক্ষতির বিষয়টি ভেবে দেখেনি।

    দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘অ্যারোসল স্প্রে করার শর্ত আছে। ঘরে স্প্রে করার পর বিশ মিনিট সেখানে থাকা যাবে না। অথচ সেই খাবারের দোকানে অ্যারোসল স্প্রে করছে।’

    অ্যারোসলের গায়ে সতর্কবার্তা হিসেবে লেখা আছে, খাদ্য, কাপড়চোপড় ও বাসনকোসনের ওপর অ্যারোসল দেয়া যাবে না। স্প্রে করার পর ২০ মিনিট ঘরে থাকা যাবে না কোনোমতেই।

    বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘ফাস্টফুডের দোকানে যে অ্যারোসল ব্যবহার হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

    কারণ ব্যাখ্যা করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অ্যারোসলের মধ্যে পাইরেথ্রিন থাকে যা লিভার এবং কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য হুমকি, শিশুর বয়স যত কম হবে, ক্ষতি তত বেশি হবে।’

    বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিচার্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী দেবাশীষ সরকার জানান, তারা অ্যারোসেলের ক্ষতিকর ব্যবহার দেখেছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসেও। ভেতরে যাত্রী বসা অবস্থাতেই বাসে অ্যারোসল ব্যবহার করতে দেখেছেন তারা। এ নিয়ে যাত্রীরা যেমন সচেতন নয়, তেমনি কোনো ভাবনা নেই বাসের কর্মীদের মধ্যেও।’ সূত্র: ঢাকাটাইমস

    /এসএম

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close