• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সালমান শাহ হত্যাকান্ড

বিচারের আশায় আদালতে ভক্তদের নিয়ে সালমান শাহ'র মা

প্রকাশ:  ২৬ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:৪৪ | আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৮, ১৪:০৫
মাকসুদুল হক ইমু

বাংলা সিনেমা' যার হাত ধরে বদলে গিয়েছিল, তিনি সালমান শাহ। লাইফস্টাইল থেকে অভিনয় সবকিছু দিয়েই তিনি 'ঢাকার সিনেমায়' নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। একের পর এক সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়ে যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে তখন হঠাৎ করেই ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই নক্ষত্রের পতন ঘটে। রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে 'বাংলা সিনেমার' স্টাইল আইকন সালমান শাহ'র (চৌধুরী মো. ইমন) লাশ উদ্ধার করা হয়।

সালমান শাহ'র মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। এত সালমান শাহ'র মৃত্যুক আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

সম্পর্কিত খবর

    ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

    ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। পরে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন।

    নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) তদন্তভার দেয়। মামলাটিতে র‍্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।

    ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‍্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। ঘটনার ২০ বছর পর আলোচিত ওই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইকে।

    আজ ছিল পিবিআই এর পক্ষ থেকে সেই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে আবারো চার মাসের সাময় চেয়েছে পিবিআই। এ বিষয়ে নায়ক শালমান শাহ’র মা পূর্বপশ্চিমকে বলেন, পিবিআই ডাক্তার, ডোম এবং আরো কিছু মানুষের সাক্ষী এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সময় নিয়েছে। যেহেতু ২৪ বছর আমরা অপেক্ষা করেছি, যেহেতু ডোম এবং ডাক্তার এই দুইটা আমাদের মামলার জন্য জরুরী সে কারণে আমরা সময় দিয়েছি। আগামী ২০ আগষ্টে আবারো তারা প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ সময়ের মধ্যে তোমরা যারা ইমনের ভক্ত আছো তারা গণসংযোগ চালু রাখবে। আমি আছি তোমাদের পাশে। আমাদের আন্দোলন থেমে থাকবে না। যার যার এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় , মহল্লায় মহল্লায় একটা কমিটি গঠন করো।

    এসময় তিনি আরো বলেন, লন্ডন, ম্যানচেস্টার থেকে শুরু করে, ৮ টা জায়গায় কমিটি হয়েছে নতুন করে । বিদেশেও আমরা আন্দোলন চালু করবো। আমি অচিরেই দেশের বাইরে যাবো। বহি:র্বিশ্বে আমাদের গণসংযোগ করতে হবে। সার বিশ্বে আমার ইমনের ভক্ত আছে তার এই হত্যার বিচার চায়। সেজন্যেই আমি দেশের বাইরে যাবো এবং কয়েক জায়গায় এ নিয়ে আমার প্রোগ্রাম আছে। তোমাদের সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। তোমরা ভাল কাজ করছ এবং ভাল কাজ করবে। এভাবে সবাই সালমান শাহের নামে আলাদা আলাদা কিছু না করে আপাতত আন্দোলনকে চাঙ্গা করো। আমাদের এই আন্দোলন হত্যার সুষ্ঠু বিচার ছাড়া থামবে না।

    এসময় আলাদত প্রাঙ্গনে উপস্থিত সালমান শাহ ভক্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সালমান শাহ কে আমরা আর পাবো না। কিন্তু আমরা তার হত্যার বিচার চাই। সালমান শাহ দুনিয়া থেকে গেছে ঠিকই কিন্তু সারা বিশ্বের ভক্তদের মাঝে সে ঠিকই বেঁচে থাকবে চিরকাল। আমি জানি, আমি যদি মরেও যাই, আপনারাই এই হত্যার বিচার চালিয়ে যাবেন। আজকের পর থেকে প্রত্যেকটা জেলায় জেলায় ঐক্যজোট কমিটি তোমরা সাবমিট করবে। যোগাযোগ রাখবে। ফেসবুকের মাধ্যমে। মরক্কো আলবেনিয়া আরো অনেক জায়গায় কমিটি হবে। প্রত্যেকটি জায়গায় আমি উপস্থিত থাকবো। আমাদের আন্দোলন সফল হবে। আমরা সালমান হত্যার বিচার পাবো।

    প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে সালমান শাহের মৃত্যুর পর থেকে এটা হত্যা না আত্মহত্যা-সে বিতর্ক এখনো চলছে। জনপ্রিয় এই নায়কের স্ত্রী সামিরা চৌধুরী একে আত্মহত্যা বললেও মা নীলা চৌধুরী ও বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী তা মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। তারা তখন রুবিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। তবে এই ২৪ বছরেও এই মামলার মীমাংসা হয়নি।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close