• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মা' এর জন্য দিবস কিসের!

প্রকাশ:  ১২ মে ২০১৮, ২৩:৪০
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন (মুন্নি)

আজ বিশ্ব ''মা' দিবস''। মা' হওয়ার অনুভূতি প্রতিটি নারীর জীবনে সর্ব প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ পাওয়া বলে মনে করি । মাতৃত্বের স্বাদ পৃথিবীর সমস্ত কিছুর থেকে অনেক বেশী তৃপ্তির আনন্দের আর সুখের। নিজের রক্ত মাংস থেকে অন্য আরেকটি জীবন্ত শরীর সৃষ্টির আনন্দ, আরেকটি জীবনকে পৃথিবীর আলো হাওয়ায় সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এক প্রকারের সৃষ্টিশীলতাই তো !

মা' হওয়া এতোটা সহজ কিন্তু নয়, শিশুর হাসি মাখা মুখের পেছনে মমতাময়ী মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম, না বলা আত্মত্যাগের কঠিন ইতিহাস কেবল শারীরিক নয় মানসিকও, আবেগ মিশ্রিত নিখাদ ভালোবাসায় যা নিমিষেই ম্লান হয়ে যায় । একমাত্র মা'ই তো যে ভালোবাসার কাছে সন্তানের মঙ্গল কামনায় নিজের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া, সমস্ত কিছু বিসর্জন দিতে পারে নির্দ্বিধায় ।

সম্পর্কিত খবর

    তিন পুত্রের পর আমি আমার মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান।

    আমি একাধারে আমার সন্তানদের মা এবং আমার মায়ের কন্যা। ছেলেটি দেশের বাইরে থাকে বিধায় মা', আমি এবং আমার কন্যা সন্তানটি নিয়ে বর্তমানে আমাদের তিনজনের পরিবার ।

    বাবার পরিবারে সবার ছোট এবং একমাত্র কন্যা সন্তান বিধায় আমার কিছু বাড়তি পাওনা ছিল, সকলের আদর, ভালোবাসা এবং এক্সট্রা কেয়ার । কিন্তু প্রতিটি জীবন একটি সময় প্রতিদান আশা করে, সব কিছু সাইক্লিক অর্ডারে ঘুরতে থাকে, এটাই নিয়ম। আমার এখন প্রতিদান দেওয়ার সময়।

    নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে আমি যখন আম্মাকে একটি সুন্দর দামী শাড়ী উপহার দিলাম, আম্মা বললেন, ''আরও আগে কেন বড় হলি না কিংবা আমার বয়সটা যদি আরও কম হত, কত শখই তো অপূর্ণ রয়ে গেল'' ! কন্যারা যেভাবে মায়ের শখ আর চাওয়া গুলো বুঝে পুত্রদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অতোটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, সৃষ্টিকর্তা ওইভাবেই তাঁদের ডিজাইন করে থাকেন । মাঝে মাঝে ভাবি সৃষ্টি কর্তার কেন এই কার্পণ্য কিংবা নারী আর পুরুষের চিন্তার বিভেদ ! হালকা করার জন্য আমি হেসে উত্তর দিলাম, ''কে বলেছে, আমি আর ভাইয়েরা তো মানুষ হয়েছি, আমরাও তো তোমার এক একটা শখই ছিলাম ''। মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে-মেয়ের পেছনে তাঁদের মানুষ করার স্বপ্নের পেছনে পিতা-মাতার ছোট বড় অনেক শখই বলী চড়াতে হয়, কিন্তু আমরা কজনাইবা তা মনে রাখি কিংবা বুঝার চেষ্টা করি।

    জীবন চলার পথে দেখেছি, হত দরিদ্র পরিবার থেকে কষ্ট করে উঠে আসা একমাত্র মানুষ হওয়া ছেলেটি বড় হওয়ার পর নিজের পরিবারকে সমাজের সামনে আনতে গৌরবের পরিবর্তে লজ্জা বোধ করেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজের বিবাহিতা স্ত্রী ধনী ঘরের দুলালীর অসম্মান না হয় ভেবে সদা সতর্ক থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে কন্যারা স্বামীর সংসারে অসুস্থ মা'কে সেবা যত্ন করার সুযোগ পায় না কারণ মুসলিম আইনে পিতা-মাতার সম্পত্তিতে একজন পুরুষ সমান দুজন নারী । সমাজে প্রচলিত ধারণা হল পুত্র সন্তানেরাই পিতা-মাতার দেখ ভাল করবে কিংবা সমস্ত দায়িত্ব নিবে।

    শিক্ষিত স্বাবলম্বী অনেক মহিলাকে বলতে দেখেছি, '' ভাইয়েরা দেখবে সবকিছু, সমস্ত দায়িত্ব নিবে, আমিতো পরের ঘরের বউ ''। হতে পারে চিন্তার দৈন্যতা কিংবা অপারগতা অথবা আলস্য করে নিছক দায়িত্ব এড়ানো । অদ্ভুত লেগেছে আমার কাছে, সন্তান মানুষ করার সময় কি মাতা পিতা কম আদর করে মানুষ করেছেন ! তবে কি স্নেহ, আদর, ভালোবাসার চেয়েও সম্পত্তি বেশী মূল্যবান !

    আমি যখন আমার ষোড়শী কন্যাকে বুকের মধ্যে নিয়ে আদর করি, আবেগে লেপটে ধরি, আমার কন্যা আপ্লুত হয়, বিগলিত হয়ে আরও বেশী এলিয়ে দেয় নিজেকে, ভাবি আমার মায়ের বুকেও একদিন আমি এমনই লেপটে থাকতাম। ছোট বেলার প্রতিটি পরীক্ষার সময়, অসুস্থতার সময়ে মায়ের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মুখ আমার চোখে ভাসে।

    পারুক আর নাইবা পারুক প্রতিজন সন্তানই চান তাঁর পিতা-মাতা ভালো থাকুন, সুখে থাকুন, সুস্থ থাকুন । গ্রামে, বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা হাসপাতালের বিছানায় একা পরে থাকা মাতা-পিতার অসহায় সন্তানেরা জীবনের বাস্তবতায় হয়তো তাঁদের ঠিকমত দেকভাল করার সুযোগ পান না কিন্তু ভালোবাসেন না এই কথাটির সাথে একমত হতে পারি না কিছুতেই । আমি কোন সন্তানকেই অতোটা স্বার্থপর ভাবতে রাজী নই কারণ জীবনের সমস্ত সৌন্দর্য তখন নিষ্প্রভ মনে হয়, নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ জাগে ! যেই সন্তানের জন্য এতো আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থ-নির্লোভ ভালোবাসা সেই সন্তান এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে না কিছুতেই।

    আমার মা' বিছানায় শয্যাশায়ী, উঠে বসতে কষ্ট । দিনমান ভাবি আমি আমার মায়ের চতুর্থ সন্তান, আমার তো মাত্র দুটি। আমার এমন অবস্থা হলে ওরা কেমন করে সামাল দিবে ! জানি, আমার জন্ম না হলেও হয়তো আম্মা এমন আদরেই থাকতেন, হয়তোবা আরও বেশী ভালোই থাকতেন, তবুও নারীর মন আনমনে কত কথাই না মনে করে।

    জন্ম মুহূর্ত থেকে মৃত্যু অবধি যে মা' এর ভালোবাসার আঁচল ছাড়া সন্তানের এক মুহূর্তও বিষাদে ছেয়ে যায় সেই মা' এর আবার দিবস কিসের, প্রতিটি দিন প্রতিটি ক্ষণই তো ''মা' দিবস'' !

    লেখকঃ সম্পাদক , পূর্বপশ্চিম বিডি নিউজ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close