• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘রাজনীতিক বড় ভাইয়ের নোংরা রাজনীতির শিকার আদনান’

প্রকাশ:  ২১ মে ২০১৮, ১৫:২৬ | আপডেট : ২১ মে ২০১৮, ১৬:৪০
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা

চট্টগ্রামের সানসাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিন (১৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি আদনান মির্জার বাবা ইস্কান্দার মির্জা বলেছেন, ‘আদনান আমার অবাধ্য ছেলে। বন্ধুদের সাথে মিশে অবাধ্য হয়ে গেছে আমার। ছেলেটি এতো নষ্ট হয়ে যাবে আামি ভাবিনি। তার বন্ধু সোহেলের সাথে মেলামেশার কারণেই আজকে আদনানকে কারাগারে যেতে হয়েছে। এছাড়া সে রাজনীতিক বড় ভাইয়ের নোংরা রাজনীতির শিকার।

তিনি বলেন, তাসফিয়া নিখোঁজের দিন আদনানকে বাসায় বন্দি করে রেখেছিল তাসফিয়ার বাবা-চাচারা। তাদের থেকে আদনানকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে এক রাজনৈতিক বড় ভাই। এত ঘটনা হয়ে যাওয়ার পরও আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।

ইস্কান্দার মির্জা বলেন, আমি আদনানকে টেলিফোন করি, তবে আদনান আমাকে জানায় গাড়ি নষ্ট হয়েছে, ঠিক করা হচ্ছে তাই সময় লাগছে। পর দিন দেখি আদনান পুলিশের হাতে গ্রেফতার।

আদনানের বাবা বলেন, আদনান আমার ছেলে হলেও তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে অন্য কেউ। ভুল পথে পা দিয়েই আজ তাকে বিপদে পড়তে হলো।

এদিকে, তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিনের দাবি, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাসফিয়ার লাশ উদ্ধারের পর পরই আদনানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকেই বিভিন্ন মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে মামলাটি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন আদনানের বাবা ইস্কান্দার মির্জা।

মোহাম্মদ আমিন বলেন, এক আসামি ধরেই ক্ষান্ত কেন পুলিশ? আরও বাকি ৫ আসামি রয়েছে। ওরা কোথায়? পুলিশ কি কিছুই জানে না! পুলিশ চাইলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে গ্রেফতার করে মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারে। কিন্তু গ্রেফতার করছে না।

প্রসঙ্গত, গত ২ মে সকালে তাসফিয়ার লাশ উদ্ধারের মাত্র চার ঘণ্টা পরই পুলিশের হাতে আটক হন বিদেশ ফেরত ইস্কান্দার মির্জার বড় ছেলে আদনান মির্জা। এরপর পতেঙ্গা থানা হাজত ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে চার দিন কাটিয়ে এখন গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে তার অবস্থান।

আগামী ৩১ মে আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তবে এর আগেই শুরু হয়েছে আদনানের বাবা ইস্কান্দার মির্জার নানামুখী তৎপরতা।

ইতোমধ্যে তিনি চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন আইনজীবী ঠিক করেছেন আদালতে রিমান্ড শুনানির বিরোধিতা করার জন্য।

এর আগেও আদনানকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে প্রায় ১৫ আইনজীবীর বিরোধিতায় আদালতের কাছে বিমুখ হয় পুলিশ। সেবার গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেই ক্ষান্ত থাকতে হয়েছে পুলিশকে। তবে প্রেমের শুরু থেকে এক মাসের উৎসবে মিলিত হওয়ার সময়কার মুখরোচক গল্প ছাড়া তার কাছ থেকে আর কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে, তাসফিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের ১৮ দিনেও আসেনি ঢাকার মহাখালী থেকে ভিসেরা ও সিআইডি প্রতিবেদন। ফলে এখনও অন্ধকারেই রয়েছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য।

তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বলেছেন, তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার নির্ভর করছে ভিসেরা রিপোর্টের ওপর তাই এই রিপোর্ট যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্দন আছে কি না বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সোমবার (২১ মে) দুপুরে নগরের চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আদালতের প্রতি আদনানের রিমান্ড মঞ্জুরের অনুরোধ জানিয়ে মোহাম্মদ আমিন বলেন, অপরাধীদের বয়স বিবেচনা না করে তাদের অপরাধ বিবেচনা করে পুনরায় রিমান্ড মঞ্জুর করে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের সুযোগ দিন।

সংবাদ সম্মেলনে তাসফিয়ার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহেদুল ইসলাম বলেন, তাসফিয়ার ময়নাতদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্ট পেলে এ মামলার রহস্য উন্মোচন হবে।

উল্লেখ্য, গত ২ মে সকালে স্থানীয়দের খবরে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজঘাটের পাথরের ওপর থেকে সানসাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের (১৬) মরদেহ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ।

সুরতহাল রিপোর্টে বলা হয়, মরদেহের এক চোখ উপড়ে ফেলা, অপর চোখ নষ্ট করে দেয়া ছাড়াও নাক-মুখ থেঁতলানো, পিঠ, বুক এবং নিতম্বে নির্যাতনের ছাপ পেয়েছে পুলিশ। তার বুকের মাঝেও নখের দাগ রয়েছে।

পরে একই দিন সন্ধ্যায় নগরের খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে আটক করে। আটক আদনান মির্জা বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মির্জার ছেলে।

এ ঘটনায় ৩ মে তাসফিয়ার বাবা বাদী হয়ে আটক আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে পতেঙ্গা থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আদনান মির্জা মামলার আসামি ফিরোজের পরিচালিত ‘রিচ কিডস’ নামের গ্যাংস্টারের (এডমিন) প্রধান। আর বাকি চার আসামি সেই গ্যাংস্টারের সদস্য- শওকত মিরাজ, আসিফ মিজান, ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম ও সোহায়েল প্রকাশ সোহেল।

তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন আসামিদের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনেছেন। -একে

তাসফিয়া আমিন,আদনান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close