কানাডায় ‘সন্ত্রাসী দল’ ঘোষণায় চুপ কেন বিএনপি?
গত ৪ মে বিএনপিকে তৃতীয়বারের মতো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা দিয়েছে কানাডার আদালত। এ সম্পর্কিত রায় কানাডা সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ২১ মে। ২২ মে সংবাদটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসে। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এই বিষয়ে এখনও নিশ্চুপ বিএনপি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য তো দূরে থাক, কোনো নেতা ব্যক্তিগতভাবেও কোন মন্তব্য করেননি।
জানা যায়, মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের এক ব্যক্তি বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর পরিচয় দিয়ে কানাডা সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ২০১৫ সালে তার স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের আবেদন প্রাথমিক অনুমোদন পেলেও গতবছর ১৬ মে তাকে ‘কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণা’ করেন দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তা। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কানাডার ফেডারেল আদালতে বিচারিক পর্যালোচনার আবেদন গত ২৫ জানুয়ারি খারিজ করে রায় দেন বিচারক হেনরি এস ব্রাউন।
সম্পর্কিত খবর
অভিবাসন কর্মকর্তা তার সিদ্ধান্তে বলেছিলেন, আবেদনকারী জুয়েল হোসেন গাজী এমন একটি সংগঠনের সদস্য, যে দল ‘সন্ত্রাসে যুক্ত বলে মনে করার যৌক্তিক কারণ আছে’। সুতরাং কানাডার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রোটেকশন অ্যাক্টের (আইআরপিএ) ৩৪(১) এর এফ ও সি ধারা অনুযায়ী তিনি সুরক্ষা পাওয়ার জন্য কানাডায় বসবাসের স্থায়ী অনুমতি পাওয়ার যোগ্য নন। পরে জুয়েল গাজীর জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদনের শুনানি করে অভিবাসন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই সঠিক বলে রায় দেয় ফেডারেল আদালত। রায়ে বলা হয়, “সতর্কতার সঙ্গে বিস্তারিত পর্যালোচনার পর ওই অভিবাসন কর্মকর্তা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, কানাডার আইন অনুযায়ী ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল বা আছে’ বলে মনে করার যৌক্তিক কারণ আছে।”
সে সময় বিএনপির নেতারা এই রায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এর পেছনে সরকারের হাত আছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে এবার বিষয়টিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে নারাজ বিএনপির শীর্ষনেতারা।
গত ২৩ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে জানতে চাইলেও তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এরপরও নিয়মিত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছেন বিষয়টি। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদসহ অনেক শীর্ষ নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখলেও এ প্রসঙ্গটি তারা এড়িয়ে গিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বিএনপির জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বাড়ছে। গত ১০ বছর বিএনপি কঠিন সময় পার করছে, কিন্তু বিএনপি ভাঙে নাই। কারা কী বলল তাতে বিএনপির কোন যায় আসে না। বিএনপি গণমানুষের দল, এই দেশে বিএনপি আছে, মানুষ যতদিন থাকবে বিএনপিও থাকবে।’
তবে কানাডা আদালতের রায়কে গুরুত্ব না দিলেও সাম্প্রতিক একটি জার্মান সংস্থার জরিপকে বেশ গুরুত্বসহকারে দেখছেন রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ওই জরিপে বলা হয়েছে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নূন্যতম শর্ত পূরণ হচ্ছে না এবং এটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় ঢুকেছে।
তার মতে , ‘কানাডা এবং জার্মানির মধ্যে পার্থক্য আছে। জার্মান সংস্থা একশ কয়েকটি দেশে জরিপ চালিয়ে বলেছে, আর অন্যদিকে এটা একটা কোর্টের রায়। দুইটা এক বিষয় না। আদালতের আদেশের চেয়ে গবেষণা সংস্থার জরিপের ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘
কানাডার আদালতের রায়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কানাডার আদালতের যে রায় দিয়েছে, সেখানে বিএনপির কোন প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তাদের বক্তব্য না শুনে এ রকম একটা রায় দেওয়া ঠিক হয়নি। কানাডার আদালতের এভাবে রায় দেয়া উচিত না। বিএনপির কোন প্রতিনিধির সাথে কথা বলে রায় দেয়া উচিত ছিল।’
এই রায়ে বিএনপির ওপর প্রভাব কি হতে পারে জানতে চাইলে এমাজউদ্দিন বলেন, ‘এসব রায়ের তেমন কোন প্রভাব নেই। কিছু দিন আগে জার্মানির রিপোর্টে সরকারের ওপর যে খুব প্রভাব পড়েছে, তাও মনে হয় না। তবে একটা দেশের একটা বড় দল সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে তাদের (কানাডার আদালতের) আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।’
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী মনে করেন, কানাডা আদালতের এই রায়ে ইমেজ সঙ্কটে পড়বে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘এই রায় রাজনৈতিক পরিসরে বিএনপির ইমেজ সংকট তৈরি করবে। দেশীয় রাজনীতিতে দলকানা কিছু রাজনীতিবিদ আছে তারা মনে করবে এটা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’ -একে