• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চাকরি না পেয়ে একসঙ্গে দুই বন্ধুর আত্মহত্যা

প্রকাশ:  ২১ জুন ২০১৮, ২১:১৯
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা

মৃতদেহের পাশে বিষের খালি বোতল। নিহতদের মুখ দিয়ে তখনও বের হচ্ছে ফেনা ও লালা। তাদের পকেটে চিরকুট, তাতে লেখা, ‘তোমাদের অনেক জ্বালিয়েছি, কষ্ট দিয়েছি। আর কষ্ট দিতে চাই না। বিদায় পৃথিবী।’

এই অবস্থায় ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রাম থেকে রিপন হোসেন (২৩) ও আব্দুল আওয়াল (২২) নামে দুই বন্ধুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাহাদুরপুর প্রাইমারি স্কুলের পাশের সালতার মাঠ থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সম্পর্কিত খবর

    পূর্বপশ্চিম বিশ্বকাপ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন।

    নিহত রিপন হোসেন বাহাদুরপুর গ্রামের গুল বক্সের ছেলে ও আওয়াল হোসেন একই গ্রামের বিশারত হোসেনের ছেলে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ধারণা, হতাশা ও বেকারত্বের কারণে তারা আত্মহত্যা করেছে।

    হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, সকালে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পান মৃত দুই যুবকের মুখ দিয়ে ফেনা ও লালা বের হচ্ছে। পাশে বিষের বোতল পড়ে আছে। এতে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারা আত্মহত্যা করেছেন।

    তিনি বলেন, নিহত রিপনের পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। পরিবারের উদ্দেশ্যে তাতে লেখা আছে, ‘তোমাদের অনেক জ্বালিয়েছি, কষ্ট দিয়েছি। আর কষ্ট দিতে চাই না। বিদায় পৃথিবী।’

    হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল রানার ভাষ্য, রিপন ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। আওয়াল একই দলের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।

    বাহাদুরপুর গ্রামের সামাজিক দলের নেতা মতিয়ার রহমান জানান, রিপন জোড়াদহ কলেজে পড়তেন। ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর বন্ধু আওয়ালের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান। তারা দুজনই খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। সব সময় একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। ছাত্ররাজনীতিও করতেন একসঙ্গে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে তারা দুজনই নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেও তাদের পাননি। রাতে তারা বাড়ি ফেরেননি।

    তিনি জানান, ঢাকায় গিয়ে চাকরির কথা বলে দুইজনই তাদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেন। এর মধ্যে রিপন নেন ৮ লাখ টাকা ও আওয়াল নেন ৪০ হাজার টাকা। পরে ঈদে বাড়িতে এসে তারা জানান, তাদের চাকরি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাবা মার সঙ্গে তাদের মনোমালিন্য হয়।

    এ ঘটনায় তারা দুই বন্ধু বিষপান করতে পারে বলে মতিয়ার রহমান জানান।

    এদিকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।

    পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, এটা একটি ব্যতিক্রমধর্মী আত্মহত্যার ঘটনা। বাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার পর চাকরি না পেয়ে বিবেকের তাড়নায় দুই বন্ধু ফসলে ব্যবহারের শক্তিশালী বিষ মার্সাল পান করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে।

    এসপি আরও বলেন, আত্মহত্যা ঝিনাইদহের মানুষের একটি সামাজিক ব্যাধি। তারই ধারাবাহিকতায় দুই যুবক এই পথ বেছে নিয়েছে, যেটা মর্মান্তিক ঘটনা। মরদেহের ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close