• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অপারেশনের খরচ নিয়ে চিন্তিত তরিকুলের পরিবার

প্রকাশ:  ০৮ জুলাই ২০১৮, ১৫:২৫ | আপডেট : ০৮ জুলাই ২০১৮, ১৫:২৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলায় গুরুতর আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারিকের মেরুদণ্ডের হাড়ও ভেঙে গেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আনা হচ্ছে।

তার ছোট বোন ফাতেমা খাতুন রোববার (৮ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চিকিৎসক সাঈদ আহমেদ বাবুর তত্ত্বাবধানে তরিকুল গত বৃহস্পতিবার থেকে রয়েল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বাবু বলেন, তরিকুলের ডান পায়ের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙেছে কী না? তা এক্সরে রিপোর্টে বোঝা যাচ্ছিল না। এ কারণে আরও উন্নত পরীক্ষার প্রয়োজনে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তরিকুলের পায়ের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোর্শেদুল আলম জানান, ডাক্তার জানিয়েছেন পায়ের ফোলা কমে গেলে অপারেশন করা হবে।

তিনি বলেন, অপারেশন করতে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমাদের কয়েকজন বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা তুলতে গিয়েছিল। ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের বাধা দিয়েছে। ভয়ে তাই টাকা তোলা বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সাহায্য করছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অর্থ তহবিল আছে, যা ছাত্রদের অর্থেই চলে। সেখান থেকে অর্থ দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু তা তো দিচ্ছেই না, বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত কেউ তরিকুলকে দেখতে আসেননি।

এদিকে তরিকুলের চিকিৎসায় টাকা তোলার সময় ছাত্রলীগের বাধা প্রদান প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, এটি বানোয়াট কথা। ছাত্রলীগের ছেলেরা বাধা দেবে এটা হতেই পারে না।

তরিকুলের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের ফুলপুকুরিয়া সুন্দরকুল। তার বাবা খোরশেদ আলম একজন সাধারণ কৃষক। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। এর মধ্যে তরিকুল দ্বিতীয়। বড় ছেলে তাহমিদুল ইসলাম তৌহিদ বগুড়া আজিজুল হক কলেজ এবং ছোট মেয়ে ফাতেমা বগুড়া মজিবুর রহমান মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী।

অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে তরিকুলকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবে, অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে বলে আশা ছিল তার। কিন্তু পঙ্গু হবার পথে, জানেন কী হবে তার! স্বপ্নগুলো এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে।

তরিকুলের বাবা বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত আমার ছেলেকে দুবৃর্ত্তরা যেভাবে মেরেছে, তা বাবা হিসেবে আমি মেনে নিতে পারছি না। আরও কষ্ট হয়েছে যখন ছেলেটার সরকারি হাসপাতালে স্থান হয়নি; সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি তার ছেলের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

কথা বলার সময় তরিকুলের মা তাহমিনা বেগমও পাশে ছিলেন। তার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রেখেছেন, হামলাকারীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আর কোনো মায়ের যেন সন্তানের জন্য এমন আকুল হতে না হয়।

তরিকুলের স্কুলজীবনের বন্ধু মনোয়ার, প্রতিবেশী মোস্তফা পাশে ছিলেন। তারা বলেন, এ এলাকায় তরিকুল সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। কোটা সংস্কারের আন্দোলন করায় যেভাবে হামলা চালিয়ে তাকে পঙ্গু করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

উল্লেখ্য, গত সোমবার কোটা সংস্কারের দাবিতে রাবিতে পতাকা মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ। তখন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সুন্দরখোল উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলমের ছেলে তরিকুলকে বেধড়ক পেটানো হয়।

গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রামেক হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতেই তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রামেক হাসপাতাল থেকে ‘ছাড়পত্র’ দেয়া হলে ওইদনিই তাকে বেসরকারি রয়েল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

/অ-ভি

অপারেশন,খরচ,কোটা,আন্দোলন,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close