এক নজরে বিশ্বকাপ ২০১৮
শুরু থেকেই একের পর এক অঘটনের জন্ম দেওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ হলো। ফাইনাল ম্যাচে অবশ্য কোনো অঘটন ঘটেনি, ফেভারিট ফ্রান্স ৪-২ গোলে ডার্ক হর্স ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো জিতে বিশ্বকাপের শিরোপ। ৩২টি দলের অংশগ্রহণে দীর্ঘ একমাসের এ টুর্নামেন্টের ৬৪টি ম্যাচে ঘটেছে অনেক নাটকীয় ঘটনা, রোববার রাতে ফাইনালের শেষ বাঁশি বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যার অবসান হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হলো আবারও চার বছরের অপেক্ষা পালা।
ফুটবলের জমজমাট লড়াই এই ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর পরবর্তী আসর অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালে কাতারে। ওই বছর নভেম্বরের ২১ তারিখ বিশ্বকাপ মাঠে গড়াবে, শেষ হবে ডিসেম্বরের ১৮ তারিখে।
সম্পর্কিত খবর
স্মৃতি রোমন্থনের পাতায় জায়গা করে নেওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপের বিভিন্ন দিক ও পরিসংখ্যানে একনজর চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
চ্যাম্পিয়ান: ফ্রান্স
রানার্স আপ: ক্রোয়শিয়া
তৃতীয়: বেলজিয়াম
টুর্নামেন্টে মোট গোল: ১৬৯
ম্যাচ প্রতি গোলের গড়: ২.৬
সর্বোচ্চ গোলদাতা: হ্যারি কেন (ইংল্যান্ড/৬)
সর্বোচ্চ গোলতাদা দল: বেলজিয়াম (১৬টি)
আত্মঘাতি গোল: ১২টি
পেনাল্টি থেকে গোল: ১৬
মোট পেনাল্টি: ২১
হ্যাট্টিক : ২টি (পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ও ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন)
বড় ব্যবধানে জয় : ইংল্যান্ড ৬-১ গোলে হারায় পানামাকে।
মোট পাস: ৪৯৬৫১
ম্যাচ প্রতি পাসের গড়: ৭৭৫.৮
সর্বোচ্চ পাস: ইংল্যান্ড (৩৩৩৬)
সর্বাধিক আক্রমণ: ক্রোয়েশিয়া (৩৫২)
খেলোয়াড় হিসেবে বেশি সুযোগ তৈরি: নেইমার (২৭)
সবচেয়ে বেশি দৌড়েছেন: ইভান পেরেসিচ (৭২ কিমি)
সবচেয়ে বেশি পাস: সার্জিও রামোস (৪৮৫)
হলুদ কার্ড: ২১৯
লাল কার্ড: ৪
হলুদ কার্ডের গড়: ৩.৫
সর্বমোট দর্শক উপস্থিতি : ৩০ লাখ ৩১ হাজার ৭শ ৬৮
প্রতি ম্যাচে দর্শকদের গড় উপস্থিতি : ৪৭ হাজার ৩শ ৭১
সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতি : রাশিয়া-সৌদি আরব ম্যাচে (৭৮,০১১ জন দর্শক)
নতুন প্রযুক্তি: ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) বড় অঘটন: গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়।
পুরস্কার
গোল্ডেন বল (সেরা খেলোয়াড়) : ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মডরিচ।
সিলভার বল (দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড়) : বেলজিয়ামের অধিনায়ক ইডেন হ্যাজার্ড।
ব্রোঞ্জ বল (তৃতীয় সেরা খেলোয়াড়) : ফ্রান্সের অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান
গোল্ডেন বুট (সর্বোচ্চ গোলদাতা) : ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন
সিলভার বুট (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা) : ফ্রান্সের গ্রিজম্যান।
ব্রোঞ্জ বুট (তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা) : বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু।
ফিফার সেরা উদীয়মান ফুটবলার: ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে।
ফেয়ার প্লে ট্রফি : স্পেন
গোল্ডেন গ্লাভস (সেরা গোলরক্ষক) : বেলজিয়াম গোলকিপার থিবাউ কুর্তোয়া।
ফাইনাল ম্যাচে রেকর্ড
একাধিকবার বিশ্বকাপ জেতার তালিকায় ষষ্ঠ দল হিসেবে নাম লিখিয়েছে ফ্রান্স। আগে যে কীর্তি ছিল ব্রাজিল (৫ বার), জার্মানি (৪ বার), ইতালি (৪ বার), আর্জেন্টিনা (২ বার) ও উরুগুয়ের (২ বার)। একটি করে বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড ও স্পেন। বিশ্বকাপ জিতেছে মাত্র আটটি দেশ।
বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা কিলিয়ান এমবাপ্পের বয়স ১৯ বছর ২০৭ দিন। এর চেয়ে কম বয়সে ফাইনালে গোল করেছেন কেবল পেলে (১৯৫৮ বিশ্বকাপে, ১৭ বছর ২৪৯ দিন বয়সে)।
ফাইনালে আত্মঘাতী গোল করা প্রথম ফুটবলার মারিও মানজুকিচ। অবশ্য পরে নিজে গোল করে পাপমোচন করেছেন। চ্যাম্পিয়ন লিগ ও বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা মাত্র পঞ্চম খেলোয়াড় তিনি। আগে এই কীর্তি ছিল ফেরেঙ্ক পুসকাস, জলতান জিবর, জার্ড মুলার ও জিনেদিন জিদানের।
কোচ ও অধিনায়কের ভূমিকায় বিশ্বকাপ জেতা মাত্র দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন দিদিয়ের দেশম। এর আগে যে কীর্তি ছিল জার্মান কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের। খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকায় বিশ্বকাপ জেতা তৃতীয় ব্যক্তি ব্রাজিলের মারিও জাগালো।
তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতলেন এমবাপ্পে। পেলে জিতেছিলেন ১৭ বছর বয়সে, ইতালির জিউসেপ্পে বারগমি জিতেছিলেন ১৮ বছর বয়সে। ১৯ বছর বয়সে জিতলেন এমবাপ্পে।
এমানুয়েল পেতিতের (১৯৯৮ বিশ্বকাপ) পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা কোনো খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করলেন পল পগবা।
একই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ও বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দ্বিতীয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড় দেয়ান লভরেন। ২০০৬ সালে এই কীর্তি গড়েছিলেন থিয়েরি অঁরি। একই সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার কীর্তিতে এই দুজন ছাড়াও আছে আরিয়েন রোবেনের নাম। ২০১০ সালে এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল বায়ার্নের ডাচ তারকার।
সর্বশেষ চার বিশ্বকাপের ফাইনালেই ফরাসি ক্লাব মোনাকোর গোলরক্ষক খেলেছে। এবং হেরেছে! ২০০৬-এ ফাবিয়ান বার্থেজ, ২০১০-এ মার্তেন স্তেকেলেনবার্গ, সার্জিও রোমেরো এবং দানিয়েল সুবাচিচ।
১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম ফাইনালে কোনো দল কমপক্ষে ৩টি গোল দিল। আগের কীর্তিটাও ফ্রান্সেরই। ফাইনালে সব মিলিয়ে হয়েছে ৬ গোল। ফাইনালে ৬ গোল দেখা গেছে তিনবার: ১৯৩০, ১৯৩৮ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে হয়েছিল ৭ গোল!
এনই/