• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কুবিতে বাড়ছে সংঘর্ষ, নির্বাক প্রশাসন

প্রকাশ:  ১৯ জুলাই ২০১৮, ২০:১৭
কুবি প্রতিনিধি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ছোট বড় কোন না কোন সংঘর্ষে জড়াচ্ছে শাখা ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মী। এ নিয়ে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। ঘটনাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে আসলেও তেমন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এমন সংঘর্ষ দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, কুবির শাখা ছাত্রলীগের বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ মদদে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঘটেছে তিনটি পৃথক মারধরের ঘটনা। বুধবারের মারধরের জের ধরে বৃহস্পতিবার বেধড়ক মারধরের শিকার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজল খাঁনের ছেলে ইকবাল খাঁনকে গুরুতর অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এসব সংঘর্ষে আহত হয় অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১১ তম ব্যাচের মাঈন নামে এক শিক্ষার্থীর সাথে একই বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সালমানের কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনার এক পর্যায়ে সালমান উত্তেজিত হয়ে বিভাগের সিনিয়র মাঈনের গায়ে হাত তোলে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঐ ঘটনার সমঝোতার জন্য মাঈন তার বিভাগের সিনিয়র ৯ম ব্যাচের ইকবাল খানসহ কয়েকজনের কাছে ঘটনার বিবরণ দেন। ইকবাল তার সালমানকে ডেকে এনে ঘটনা জানতে চায়। এতে সালমান উত্তেজিত হয়ে সেখান থেকে চলে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল (শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল) থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে এসে ইকবালসহ তার বন্ধুদের ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনেই বেধড়ক মারধর করে। এতে ইকবাল গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসে। পরে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে।

জানা যায়, মারধরের নেতৃত্ব দওয়া প্রত্যেকেই শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। শাখা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আহমেদ আলী বুখারী, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক মুনতাসির আহমেদ হৃদয়, উপ-মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক মো. এনায়েত উল্লাহ, সদস্য মো. মিরাজ খলিফা, ছাত্রলীগ কর্মী রাফিউল আলম দীপ্তসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ও ১২ তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা এ মারধরের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।

এছাড়া বুধবার (১৮ জুলাই) বাসে সীট রাখাকে কেন্দ্র পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলামকে ক্যাম্পাসের প্রধান গেটের কয়েক হাত দূরেই বেধড়ক মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের বশ কয়েকজন নেতাকর্মী। যাদের মধ্যে অনেকেই বৃহস্পতিবারের মারধরের সঙ্গে জড়িত।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত আহমেদ আলী বুখারী ও মুনতাসির আহমেদ হৃদয় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত বছরের ২০ডিসেম্বর শাখা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয় এবং পরবর্তীতে ১০মে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এছাড়াও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা এবং মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে নিজদলীয় নেতাকর্মীদেরও মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, যেখানে ছাত্রলীগ আমাদের সহযোগীতা করার কথা সেখানে ছাত্রলীগ নামটি আমাদের কাছে কেবলই আতঙ্কের নাম। ছাত্রলীগের এ ধরণের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীর জন্যই ক্যাম্পাসে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরের মতই নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ জানান, ‘আজকের মারধরের ঘটনাটি ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমি শুনেছি র‌্যাগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। তবে বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’

ওএফ

কুবি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close