• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি না: শেখ হাসিনা

প্রকাশ:  ২১ জুলাই ২০১৮, ১৭:৫২ | আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৮, ১৯:১৮
বিশেষ প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি না। তাই যতক্ষণ নিঃশ্বাস অাছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যেতে চাই। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এটাই আমার জীবনের একমাত্র চাওয়া। কেবল ঘুমানোর সময়টুকু ছাড়া প্রতিটি মুহূর্ত আমি কাজ করি দেশের মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। এর বাইরে আমার আর কোনও কাজ নেই।

শনিবার ( ২১ জুলাই) বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের দেয়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘এ মনিহার আমায় নাহি সাজে’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতার এ লাইনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই । আমি শুধু চাই বাংলার মানুষ কী পেল। এই অর্জন সেসব নেতাকর্মীর, যারা দলের জন্য রক্ত দিয়েছেন, আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন। মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ করাই আমার স্বপ্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমার লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, এ সংবর্ধনা আমি উৎসর্গ করছি বাংলার মানুষকে। আজকে দেশ যা কিছু সম্মান অর্জন করেছে তার সবই বাংলার মানুষের প্রাপ্য। আমি জনগণের সেবক। জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণ কতটুকু পেল সেটাই আমার কাছে বিবেচ্য বিষয়। এর বাইরে আমার আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।

একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের ঠিকানা দিয়েছেন, নিজস্ব অস্তিত্ব দিয়েছেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন। অথচ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বাংলার ইতিহাসে রচিত হয় এক কলঙ্কিত অধ্যায়। শেষ করে দেওয়া হয় ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনকে। অথচ বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেলেন ভোট ও ভাতের অধিকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সৌভাগ্য আমি তার সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আমার মায়েরও অবদান রয়েছে। আমার মা সংসারটাকে একা সামলিয়েছেন। তিনি তো দেশের কল্যাণ ছাড়া কিছু চাননি। কিন্তু তাকেও প্রাণ দিতে হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল এই দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। তাই মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি বন্দর এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন, খাদ্য উৎপাদনে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে আমাদের অনেক কিছু দিয়েছিলেন। তিনি মাত্র ৯ মাসে বাংলাদেশকে একটি পরিপূর্ণ সংবিধান দিয়েছিলেন। শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছিলেন। জাতির পিতা ৯ মাসের মধ্যে জাতিকে যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানকে লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করে ক্ষমতাকে নেওয়া হয় সেই ক্যান্টনম্যান্টে। তারা ক্ষমতাকে উপভোগ করেছে। প্রতারণা করেছে জাতির সাথে। এসব অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী উচ্ছিষ্টভোগীরা এলিট শ্রেণি হয়েছে। বিত্তশালী হয়েছে। এ দেশে বারবার ক্যু হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯টা ক্যু হয়েছে এই দেশে। আর স্বাধীন বাঙালির জনগণের ক্ষমতাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ক্যান্টনম্যান্টে।

জাতির পিতার খুনি ও যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মধ্য দিয়ে দেশ কলুষমুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমরা চাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। যেদিন বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে, সেদিন নিজেকে সার্থক মনে করবো। ‌

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছি। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। কারণ নির্বাচন ঠেকাতে পারলে আবার অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু দেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা বিএনপির এসব জ্বালাও পোড়াও ঠেকিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। আবার বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এ দেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বিএনপি আবার মাঝ পথে সেটিকে বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা দ্বিতীয় দফায় আবার ক্ষমতায় আসে। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই আমাদের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অথচ এই খুনিরা দম্ভভরে বলেছিল তারা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭৫ সালের আগে বাঙালি ছিল বীরের জাতি। আর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই বাঙালি হলো খুনি জাতি। কলকাতায় আমরা যে বাসায় ছিলাম সেখানে এক কাপড় বিক্রেতা আসতেন তিনি আমাদের বললেন আপনারা কীসের জাতি? যিনি আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তাকে হত্যা করল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আমরা আমাদের সম্মান হারিয়েছি।

৭৫ পরবর্তী ক্ষমতাভোগীরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যস্ত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এ দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে কোনো কাজ করনি। কিছু সুবিধাভোগির জীবন উন্নত হয়েছে কিন্তু বাংলার মানুষের ভগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমাকে ৭৫ পরবর্তী অনেক ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়েছে। কিন্তু পিছপা হইনি। জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, দিনের ২৪ ঘণ্টা থেকে আমি নিজের জন্য মাত্র ৫ ঘণ্টা নিয়ে থাকি, এটা আমার ঘুমানোর সময়। এর বাইরে প্রতিটি মুহূর্ত আমি কাজ করি দেশের মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। এর বাইরে আমার আর কোনও কাজ নেই। আমি কোনও উৎসবে যাই না। আমি কোথাও যাই না, কিচ্ছু করি না। সারাক্ষণ আমার একটাই চিন্তা, আমার দেশের উন্নয়ন, দেশের মানুষের উন্নয়ন। সারাক্ষণ চেষ্টা করি, কোথায় কোন মানুষটা কী অবস্থায় আছে, তার খোঁজখবর রাখতে।

সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ। বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বস্তিবাসীর জন্য ঘরে ফেরা কর্মসূচি, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। ১৪ লাখ প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হচ্ছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করবো। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’, ২০৪১ সালে আমরা সেই বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।

২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী পালনসহ ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

ভারতের আসানসোলের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি অর্জন, মহাকাশে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পাঠানো, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে এ গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীরর সভাপতিত্বে মঞ্চে সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবর্ধনার শুরুতে পরিবেশন করা হয় গণসঙ্গীত। বেলা সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিনি অতিথি মঞ্চে আসন নিলে অভ্যর্থনা সঙ্গীতের পাশাপাশি জাতীয় ও দলীয় পতাকা নেড়ে স্বাগত জানানো হয় শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ‘শেখ হাসিনা, তোমার জন্য বাংলাদেশ ধন্য’ এই শিরোনামে একটিসহ দু’টি গান পরিবেশন করেন শিল্পী মমতাজ। দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরে পরিবেশন করা হয় ‘আমার প্রিয় বাংলাদেশ’।

সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, লাল-সবুজের রঙিন পোশাক পরে জনসভায় যোগ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জয় বাংলা ও শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নামে নানা স্লোগানে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয় গোটা এলাকায়।

প্রধানমন্ত্রী,গণসংবর্ধনা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close