• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কয়লার অভাবে বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রকাশ:  ২৩ জুলাই ২০১৮, ০৯:৩৭ | আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৫:৫৬
দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের সীমাহীন দায়িত্বহীনতায় জ্বালানি সংকটে পড়ে দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৩টি ইউনিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

রোববার (২২ জুলাই) রাত ১০টা ২০মিনিটে তিনটি ইউনিটের চলমান একটি ইউনিটও কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।

বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সংরক্ষণ) মাহবুবুর রহমান ইউনিট বন্ধের সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। তবে কবে নাগাত পুনরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হবে তা তিনি বলতে পারেন নি।

এদিকে, বড়পুকুরিয়া খনির কোল ইয়ার্ড থেকে প্রায় ১লাখ ৪২হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি খনি কর্তৃপক্ষ সিস্টেম লস হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেস্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া খনির উপর নির্ভর করে খনির পার্শ্বে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ও ১২৫ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিট রয়েছে। কেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদনে থাকলে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১ নং ইউনিটটি বড় ধরনের (জেনারেল ওভারহোলিং) মেরামতের জন্য কয়েকমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ২ নং ইউনিটটি কয়লা সংকটের কারণে গত ২৯ জুন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়লা সংকটের কারণে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩ নং ইউনিটটি কয়েকদিন ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে অবশেষে গত রাতে সেটিও বন্ধ হয়ে গেল।

সূত্রমতে, বাস্তবে না থাকলেও বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ কাগজে কলমে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুদ দেখিয়ে পিডিবি’র সঙ্গে প্রতারণা করে। খনি কর্তৃপক্ষের উপর আস্থা রেখে পিডিবি দেশের বাইরে থেকে কয়লা আমদানির না করায় প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেল। এর ফলে দেশের উত্তর জনপদের লোকজনকে এখন বেশ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে।

এদিকে, বড়পুকুরিয়া খনির কোল ইয়ার্ড থেকে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি খনি কর্তৃপক্ষ সিস্টেম লস হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেস্টা করছে। বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উৎপাদন, বিপণন ও নিজস্ব ব্যবহার নিরুপণের জন্য উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) জোবায়ের হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

সূত্র মতে, ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর বড়পুকুরিয়া খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে চলতি বছরের ২৭ জুন পর্যন্ত কয়লা উৎপাদন করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ২০০৬ সাল থেকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে বিক্রি করা হয় ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। এছাড়া ইটভাটাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয় ৩৩ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। খনি কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ ব্যবহার করে ১২ হাজার মেট্রিক টন। সিস্টেম লস দেখানো হয় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। যার পরিমাণ উধাও হয়ে যাওয়া কয়লার সমপরিমাণ অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে খনি সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন।

কয়লা অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় খনির ইয়ার্ড থেকে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ায় বা হিসাবের গরমিলটি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার পেট্রোবাংলা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

এছাড়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে ওএসডি করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত করা হয় এবং মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়। সেই সঙ্গে বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব আলী খান চৌধুরীকে।

একইসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে ।

এ ব্যাপারে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির এলাকায় বর্তমান কৃর্তপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্ঠা করা হলে কেউ কথা বলেনি আর খনি এলাকার নিরাপত্তা কর্মীরা প্রধান ফটকের ছবি তোলা আর খনিতে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে ।

/পি.এস

দিনাজপুর,বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close