দিনভর শাহবাগ, বসুন্ধরা ও রামপুরায় সংঘর্ষ
নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া পুলিশের হাতে আটকও হয়েছেন কয়েকজন।
শাহবাগে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ: নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস ও শাহবাগ এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ফাঁকা গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও চার শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
সম্পর্কিত খবর
সোমবার (৬ আগস্ট) বিকেল তিনটার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে আসতে থাকলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এসময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। জলকামান দিয়ে পানি ছোড়ে। পরে লাঠিপেটা শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছে।পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে। আটককৃতদের একজনের নাম হোসাইন ইশাদী মাহমুদ। অন্যদের নাম জানা যায়নি।
সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় পুলিশের অবস্থান ছিল। বেলা একটার দিকে ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রীয় মসজিদ পর্যন্ত এসেছে মিছিল আসলে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়।
বেলা তিনটার দিকে মিছিলটি শাহবাগমুখী হলে থানার সামনে এসে বাধার মুখে পড়ে। পুলিশি বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে যায়।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে মিছিলটি রোকেয়া হল, ভিসি চত্বর, কলাভবন, বাণিজ্য অনুষদ প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। পরে বিকেল তিনটার দিকে মিছিলটি শাহবাগে গেলে সংঘর্ষ বাধে।
রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে হামলা: রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে সকালে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে বাইরের কিছু ছেলে হঠাৎ ক্যাম্পাসের গেটের বাইরে থেকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করলে পালিয়ে যায়। এরপর ছাত্ররা বাইরে মিছিল করলে পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে। পরে ছাত্ররা ভেতরে চলে অসে। এখন ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছাত্ররা মিছিল করছে। আইডি কার্ড ছাড়া কউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ বাইরে অবস্থান করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্রী জানান, সকাল থেকে ক্যাম্পাস শান্ত ছিল। রুটিন অনুযায়ী সব বিভাগে ক্লাস হচ্ছিল। সোয়া ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে হঠাৎ ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয় এবং লাঠি দিয়ে গেটে আঘাত করে হামলাকারীরা। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীরা গেট বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, হামলাকারীরা স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী।
এই ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গুলশান বিভাগের এডিসি আব্দুল আহাদ জানান, পুলিশের ওপর হামলা করার কারণে অনেককে আটক করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তাদের সবাইকে থানায় পাঠানো হয়েছে।
এরপর বিকাল ৫ টার দিকে পুলিশ সদস্যরা মাইকে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা পুলিশ সদস্যদের ওপর তেড়ে আসতে থাকে। পরে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তিন ছাত্রকে আটক করে পুলিশ।
বসুন্ধরা আবাসিকে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ, ইনডিপেন্ডেন্ট ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষার্থী এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (৬ আগস্ট ) দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা শুরু হয়। এরপর থেকে বসুন্ধরা এলাকার ভেতরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে বসুন্ধরা গেটের ভেতরে আটকে পড়া লোকজন সতর্কতার সঙ্গে বের হয়ে আসছেন।
স্থানীয় সুত্র জানায়, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্রথমে একত্রিত হয়। পরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গ্রামীণফোন অফিসের সামনে থেকে তারা পুলিশের ওপর প্রথমে হামলা চালায়। পরে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, বসুন্ধরা গেটের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তারা অবস্থান নিয়েছিল ছিল যেন কোনও বিশৃঙ্খলা না হয়। পরে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। পরে হামলাকারীরা বসুন্ধরার গেটের ভেতরে ঢুকে পড়লে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তবে কারা হামলা করেছে তা তারা এখনও জানেন না।
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান বেলাল আহমেদ বলেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি।
তারা কারও কথা মানছে না। এই ঘটনার কারণে আমরা নিজেরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি।
এদিকে আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররাও ক্যাম্পাসের ভেতরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশ অবস্থান করছে।
/রবিউল