‘অপরাধী’ আরমান আলিফের প্রতারণা!
সম্প্রতি ‘অপরাধী’ শিরোনামের একটি গান সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে। তবে সবাই গানটি ফান করে গাইতে গাইতেই ইউটিউবে ২০ মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ উঠেছে জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে ‘অপরাধী’ গানের কন্ঠশিল্পী আরমান আলিফ বেশকিছু প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাতিয়ে নেন টাকা ।
যশোরের মোহাম্মাদ আবু সাঈদ নামের শিল্পী ও মিউজিক পরিচালক আরমান আলিফের প্রতারণার স্বীকার হন।
সম্পর্কিত খবর
আরমান আলিফ প্রসঙ্গে আবু সাঈদ মুঠো ফোনে জানান, ‘আমি মূলত গানের পাশাপাশি কলকাতায় আমাদের দেশের শিল্পীদের নিয়ে ষ্টেজ প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করে থাকি। ওপার বাংলায় ‘অপরাধী’ গানটি যখন তুমুল আলোচনায় ঠিক তখন সেখানের কয়েকজন অ্যারেঞ্জার আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং এই গানের শিল্পীকে দিয়ে স্টেজ শো করানোর কথা বলতে বলেন।
আমিও ভাবলাম আমাদের দেশের ছেলে যেহেতু; নাম তো আমাদের দেশেরই হবে। তখন আমি আরমান আলিফের সাথে যোগাযোগ করে বললাম আপনি কি কলকাতায় শো করবেন? প্রতিটি শো ৩০ হাজার টাকা করে। সে বললেন সব কিছু ঠিক থাকলে অবশ্যই করব। আর তুমি যখন ইন্ডিয়ার শো গুলো কর। সেহেতু আমার সকল শো’ এর দায়িত্বগুলো তুমি নাও।
পরে তাকে আমি জানাই প্রথম ১০টি শো’র জন্য বাংলা টাকা ৫৫ হাজার করে দিবে এবং বাকী ১০ টি শো’র বাংলা টাকা ৭ হাজার করে। সে জানায়, ঠিক আছে আমি কাজগুলো করব, তুমি কাজ গুলো ধর। তারপর বসুন্ধরার পিছনে তাদের বাসায় গিয়ে আরমানের সাথে কথা বলি এবং তার সাথে সকল কথা শেষ করে কলকাতার অ্যারেঞ্জারদের বাংলাদেশে আসতে বলি। তারা আসার পর ফকিরাপুল ‘প্রীতম ইন’ নামের একটি হোটেলে তার সাথে কলকাতার অ্যারেঞ্জারদের সাথে আরমান আলিফের যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
এখানে একটা কথা বলে রাখি, কলকাতা থেকে প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জাররা ঢাকায় আসার আগেই আরমান আলিফ আমাকে বলে সে তার ব্যান্ডদলের জন্য গিটার কিনবে। কলকাতার লোকদের বলো আমাকে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দিতে।
যেহেতু তখনও আমাদের চুক্তি হয়নি তাই আমি কলকাতার এ্যারঞ্জারদেরকে একরকম মিথ্যা কথা বলে ৫৫ হাজার টাকা আনিয়ে সেই টাকা দিতে সাইন্সল্যাবে একটি গিটারের দোকানে যাই। সেখানের মোবাইলে তোলা ছবিও আমার কাছে আছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি টাকা ফেরত না পেলে আমি তার নামে মামলা করব এবং সে যে ‘প্রিতম ইন’-এ নেশা করে মাতলামি করেছে, সেগুলোর ভিডিও আমি ইউটিউবে ছেড়ে দিবো’।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন জানান, আরমান আলিফের বাড়ী নেত্রকোনায়। অন্য একটি কাজে সুনামগঞ্জে যাওয়ার পথে এই গানটির কথা আমি জানতে পারি। পরবর্তিতে তাকে ঢাকায় নিয়ে এসে ঈগল মিউজিকের 'পিআর' শুভ ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। পরে ঈগল মিউজিকের ব্যানারে গানটি প্রকাশ হয়। অডিও কোম্পানির সঙ্গে গানটির চুক্তিপত্রে লেখা ছিল- গান হিট হোক আর ফ্লপ হোক, পরবর্তিতে এ ব্যাপারে আর কোন কথা যেন না হয়। ঠিক পরের দিন গানটি ঈগল মিউজিকের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে মুক্তি দিলে দুইদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আসামে গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এবং গানটি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা মজা করে গেয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করলে তা দ্রুত দেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে।
ঈগল মিউজিক তাদের প্রতিটি গানের ১ কোটি ভিউ সেলিব্রেশন করে থাকে। এ গানটির ১ কোটির সেলিব্রেশন করার প্রস্তুতি নিতে নিতে গানটির ভিউ ২ কোটি ছাড়িয়ে যায়। পরে তারা ২ কোটিই সেলিব্রেশনই করে। এরপরও গানটি প্রতিনিয়ত ভিউ বাড়তে থাকে।
পরবর্তিতে ঈগল মিউজিকের লোকেরা তাকে আর তার মাকে ঢাকায় নিয়ে এসে ঢাকার থাকার ব্যবস্থা, দামি মোবাইল ফোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা করে দেয়। এমনকি তাকে একটি স্টুডিও করে দেয়ারও প্রস্তুতি নেয় ঈগল মিউজিক। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ করেই সে ঈগল মিউজিকের কাছে আরও টাকা দাবি করে। সেই থেকেই তার উপর ঈগল মিউজিকের সকল আস্থা হারিয়ে যায় এবং তাকে ঈগল মিউজিক থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সেই অপরাধী গানটির ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন-
/এ আই