শহিদুলকে সঠিক কারণেই গ্রেফতার করা হয়েছে: জয়
আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করা যথার্থ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারণ তিনি সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি উসকানি দিতে পেরেছেন কারণ তার সেলিব্রেটি ইমেজ রয়েছে। উসকানির পরও তার পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরব তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।’
সম্পর্কিত খবর
মার্কিন সংবাদমাধ্যম রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসে লেখা এক নিবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন।
জয় লিখেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয়। এই ভয়ঙ্কর পরিবর্তনের জন্য দায়ীদের অন্যতম বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।’
সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভাষায়, ‘ঢাকায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর দুঃখভারাক্রান্ত ছাত্ররা সড়ক দখলে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তার দাবি তুললে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেয়। সরকার ট্রাফিক আইন জোরালো ও অনিয়ন্ত্রিত যান চালানোর দণ্ড বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অল্প সময়েই বিক্ষোভ সফলতা পায়। কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কর্মীরা কখনও কখনও ছাত্রদের পোশাক পরে ছাত্রদের বিক্ষোভের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে। তবে বিএনপির উসকানি বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি।’
জয় লিখেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে এই খেলায় অংশ নেন শহিদুল আলম আর সে কারণে সঠিকভাবেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সামাজিক ও প্রথাগত সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে ছাত্র মৃত্যুর ভুয়া তথ্য ছড়াতে থাকেন। আর এই তথ্য ক্ষমতাসীন দলের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সহিংসতায় উসকানি দেয়। তার এই ভুয়া তথ্য ছড়ানো এবং উসকানিমূলক বিবৃতির জন্য চালানো হামলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক কর্মী চিরতরে অন্ধ হওয়া ছাড়াও অনেকে আহত হয়েছেন ‘
ভিন্নমতের কারণে পুলিশ শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করেনি উল্লেখ করে জয় লিখেছেন, ‘তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সত্যিকার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যের জন্য। আলমের বক্তব্য একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে বেআইনি সহিংসতায় পরিণত করতে সাহায্য করেছে।’
‘তরুণ ছাত্রদের বিক্ষোভ দখলে নিয়ে তাদের জীবন ও অন্য অনেক বাংলাদেশির জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া রাজনীতি নয়, এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’
জয় লিখেছেন, ‘এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শহিদুল আলম স্বাধীনভাবে কথা বলে গেছেন। কখনও কখনও তিনি সরকারকে সমর্থন করেছেন আবার কখনও তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করেছে। সব বাংলাদেশির জন্য এই মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করা হয়।’
‘শহিদুল আলমকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সরকার জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেছে। সরকারের এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল। শহিদুল আলম কোনও নিপীড়িত নন। তার কার্যক্রম বিপুল সংখ্যক মানুষের ক্ষতির কারণ হয়েছে।’
নিবন্ধে জয় লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জনাকীর্ণ থিয়েটারে আগুন না থাকলে আগুন বলে চিৎকার করাও বেআইনি। আর শহিদুল আলম বাংলাদেশে একই কাজ করেছেন। আর তাকে এ অপরাধে সঠিকভাবেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।’
‘এই বছরে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুতরাং কেউই বিস্মিত হবে না যে বিরোধীরা ৩ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা ও গড় জাতীয় আয় প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলাসহ সরকারের বিভিন্ন অর্জন থেকে জনগণের মনোযোগ ভিন্ন দিকে ধাবিত করে দিতে চাইবে। বিএনপি পুনরায় সহিংসতায় উসকানি দেওয়ায় তিনি বিস্মিত হননি, তবে বিএনপি ও আলমের কার্যক্রম অগ্রহণযোগ্য ছিল। তিনি লেখেন, রাজনৈতিক দল হোক, প্রথিতযশা আলোকচিত্রী হোক আর যে-ই হোক না কেন, অন্য মানুষের ক্ষতি করার অধিকার কারও নেই।’
প্রসঙ্গত, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংসতায় উসকানির অভিযোগে গত ৫ আগস্ট নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম।
-একে