চলতি মাসে মানবসম্পদ মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান এ মাসেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন। স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে শ্রমিক নিয়োগে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে মানব সম্পদমন্ত্রী তার প্রতিনিধি দল নিয়ে সফর করবেন বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ব্যাপক অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সমস্ত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নোটিশ জারি করে মালয়েশিয়া সরকার। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পরপরই ব্যাপক আলোচনায় থাকা বাংলাদেশের শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের ব্যাপারে সোচ্চার হয় সরকার, অভিবাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সম্পর্কিত খবর
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, জিটুজি-প্লাস পদ্ধতিতে এসপিপিএ ডিজিটাল তথা অনলাইন সিস্টেম যা মালয়েশিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে কোম্পানির তথ্য, প্রাপ্ত কোটার তথ্য, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ও ডিমান্ড লেটার দেয়া ছিল। অনলাইনে দূতাবাস এটেস্টেশন করে বাংলাদেশে বিএমইটি, রিক্রুটিং এজেন্ট, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এবং নিয়োগকারী কোম্পানিকে জানানো হত। এই অনলাইন সিস্টেমে অটোমেটিক পদ্ধতিতে ১০ এজেন্সি নির্ধারিত হত। এই ১০ এজেন্টের বাইরে অন্য কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির কাজ করার সুযোগ ছিল না।
এটাকেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ‘মনোপলি’ বলে প্রেসব্রিফিংয়ে বলেছিলেন। এর ফলে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় নিয়েও ছিল নানান প্রশ্ন। এ মনোপলি যাতে না হয় এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাংলাদেশের সকল রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু মালয়েশিয়ার পূর্বতন সরকার দশ এজেন্ট ঠিক করে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দেয়। এর বিরুদ্ধে অন্যান্য এজেন্ট সোচ্চার হয় এবং হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত গড়ায়।
বাংলাদেশে থেকে আসা শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় অধিকাংশ মালিকের কাছে স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশি এজেন্টের হাতে জিম্মি হয়ে চার লাখ টাকার বিনিময়ে তারা এদেশে এসেছেন। এত টাকার বাণিজ্য, মালয়েশিয়ায় প্রচার হতে থাকে এবং সর্বশেষ মালয়েশিয়ার মন্ত্রী পর্যায়ে চলে যায়। পুরো ঘটনার তদন্তে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারার কাছে প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর পুরো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশি-মালয়েশিয়ান নাগরিক আমিন।
তবে অন্য কোনো এজেন্ট বা কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা হবে কি না বিষয়টা পরিষ্কার নয়। মালয়েশিয়ায় সক্রিয় জনশক্তি আমদানিকারকরাও সঠিক কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি এখনও। কারও ধারণা অন্য কোনো সিস্টেমে, আবার কারও ধারণা পুরনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হবে। বাংলাদেশের জনশক্তি সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও রয়েছে বিভ্রান্তি।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে পুরনো ব্যবস্থা জিটুজিতে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবছে মালয়েশিয়া। বর্তমান জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়া থেকে জিটুজি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) প্রক্রিয়া বেশি নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী বলে মনে করছে সে দেশের সরকার। সে কারণেই পুরনো পদ্ধতিতে ফিরতে চায় মালয়েশিয়া। কি-পদ্ধতিতে শ্রম রপ্তানি হবে উভয় দেশের উচ্ছপর্যায়ের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উচ্ছপদস্থ কর্মকর্তারা সেদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন দ্রুত সমাধানের। দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন চলতি মাসেই মানব সম্পদমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যাবেন।
ওএফ