• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নাব্যতা সংকটে ২৮ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ

প্রকাশ:  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৯
বরিশাল প্রতিনিধি

বর্ষা শেষ না হতেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ডুবোচরের কারণে নৌপথে বাড়ছে আতঙ্ক। ফলে ৬টি জেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল বিভাগের সচল নৌ-রুটগুলোতে অসংখ্য ডুবোচর, স্থায়ী চর ও শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্যতার কারণে চরম নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি বছরই সরকারিভাবে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হলেও বরাবরই তা লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে থাকে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ ক্রমেই পীড়াদায়ক হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দেয়া তথ্যমতে, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল মিলিয়ে নৌ-রুট মোট ৮৮টি। শীতকালে এর মধ্যে ৫৭টিতে মাঝারি ও হালকা নৌযান চলাচল করতে পারে। তিনটি রুটে ডুবোচর থাকলেও ডাবল ডেকার লঞ্চ চলে। বাকি ২৮টি রুট লঞ্চ চলাচলের একেবারে অযোগ্য হয়ে পড়ে।

ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-ভোলা রুটের দোতলা লঞ্চ বাদে অভ্যন্তরীণ রুটগুলোয় সাধারণত চলাচল করে এমএল টাইপ লঞ্চ (মোটর লঞ্চ)। এসব লঞ্চ চলাচলের জন্য কমপক্ষে আট ফুট পানির প্রয়োজন। আর ডাবল ডেকার লঞ্চের জন্য প্রয়োজন ১০-১২ ফুট গভীরতা। বরিশালের নদ-নদীগুলো এরই মধ্যে এ ন্যূনতম গভীরতা হারিয়ে ফেলেছে। বরিশাল-ভোলার কিছু রুট সচল আছে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে। লঞ্চ পরিবহনসংশ্লিষ্টরা জানান, অভ্যন্তরীণ এসব রুটের অনেক স্থানে পাঁচ ফুট গভীরতাও থাকে না। এছাড়া ভোলা, পটুয়াখালী, বাউফল, গলাচিপা ও দশমিনার নদীতে বহু ডুবোচর জেগেছে। দিয়ারা চ্যানেলের পানি পাঁচ-ছয় ফুটে নেমে গেছে।

এদিকে শীতকালে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, গাবখান চ্যানেলের শাখা-উপশাখায় ২০০-৩০০ জায়গায় ডুবোচর জেগে ওঠে। এছাড়া কীর্তনখোলা ও পটুয়াখালীর পায়রা আগুনমুখা, তেঁতুলিয়ার বিষখালী, ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেল ও ইলিশা নদীতেও শুষ্ক মৌসুমে অসংখ্য চর ও ডুবোচরের কারণে লঞ্চ চলাচল বিঘ্নিত হয়।

নদ-নদীগুলোর যথেষ্ট ড্রেজিং করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে- চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগও খনন করতে পারছেন না তারা। যেটুকু খনন করা হচ্ছে, তার সিংহভাগই হচ্ছে বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে। ফলে ফি-বছর একই সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে নৌ-পরিবহন বিভাগ।

বিআইডব্লিউটিএ'র ২০১৬-১৭ সালের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ড্রেজিং লক্ষ্যমাত্রা ও অগ্রগতির রিপোর্টে দেখা গেছে- ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ৪৩২ লাখ ঘনমিটার নদীপথ খননের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে খনন সম্ভব হয়েছে ১২৯ দশমিক ৮৭ লাখ ঘনমিটার। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজারের অবদান ৪১ দশমিক ৭৩ লাখ ঘনমিটার ও পাউবো বা বেসরকারি ড্রেজারের অবদান ৮৮ দশমিক ১৪ লাখ ঘনমিটার।

রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে- সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের আওতায় ২৭টি নদ-নদীর ৩৪টি নৌ-রুট থেকে আবেদন এসেছে। এর মধ্যে বরিশালের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নদ-নদী রয়েছে।

বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য স্বপন খান অভিযোগ করে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ইচ্ছামতো ড্রেজিং করে। এছাড়া খননের সময় মাটি ফেলে নদীতেই। ফলে খননের সুফল পাওয়া যায় না। সেদিক থেকে বেসরকারি ড্রেজারের কাজ ভালো বলে দাবি তার। তাছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটের ডেঞ্জার জোনখ্যাত ‘মিয়ার চর পয়েন্ট’-এর এখনো কোনো উন্নতি হয়নি বলেও উল্লেখ করেন স্বপন খান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২৪ হাজার নৌপথকে সচল করতে বলেছেন। সেজন্য পর্যায়ক্রমে কাজ করে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে ১০-১৫ বছরের আগে এ সমস্যার সমাধান হবে না বলেই মনে করেন তিনি। খননের বালি নদীতে ফেলার ব্যাপারে তিনি বলেন, নদী ড্রেজিং করে নদীতে ফেলা আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত।

/পি.এস

বরিশাল,নাব্যতা সংকট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close