ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের শুরু
ঢাকে পড়বে কাঠি। বাজবে শঙ্খ। ঘণ্টা আর কাঁসর। উলুধ্বনিতে মুখরিত হবে চারপাশ। উৎসবের সাজে মণ্ডপে মণ্ডপে নামবে ভক্তদের ঢল। ধূপ-আগরবাতির গন্ধ মোহিত করে তুলবে আঙিনা। বর্ণিল সাজসজ্জা, হইচই আর মহা ধুমধামের যেন শেষ নেই। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সোমবার (১৫ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। রোববার (১৪ অক্টোবর) সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পাঁচ দিনের এ উৎসব শেষ হবে শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে সারা দেশে এখন উৎসবের আমেজ বইছে। পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিনে ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ষষ্ঠী তিথিতে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব।
দুর্গোৎসব চলাকালে প্রতিদিনই সব মণ্ডপে অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হবে। এছাড়া, মণ্ডপে মণ্ডপে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টায়। বুধবার (১৭ অক্টোবর) মহাঅষ্টমীর পূজা আনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায় এবং ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৩০মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৭টায় পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টায়। পরে প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এ উৎসব।
রামকৃষ্ণ মিশনের মৃদুল মহারাজ বলেন, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটক (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ শোক হানাহানি মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। যার ফলে জগতে মরণব্যাধি এবং প্রাণহানির মত ঘটনা বাড়বে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ২৭২টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ১৯৫টি বেশি। ঢাকা মহানগরীতে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৩৪টি, যা গত বছরের তুলনায় ৪টি বেশি।
/অ-ভি