৭ দফা দাবিতে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা সংশোধনের দাবিতে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধ কর্মসূচি পালন করেছে ।এতে সংগঠনের দাবি তুলে ধরছেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
কর্মসূচিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকরা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সম্পর্কিত খবর
দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন সম্পাদক পরিষদের সাধারন সম্পাদক ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। দাবিগুলো হলো, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩, ৫৩ ধারা অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে। পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোন ক্ষেত্রে তাদেরকে শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেয়ার অনুমতি দেয়া যাবে কিন্তু কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন- এ আইন নিয়ে এখনো আলোচনার সু্যোগ আছে। আমরা এ প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানাই। আমরাও আলোচনায় বসতে চাই। তবে আলোচনার নামে কোনো প্রহসন মানা হবে না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যমে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের কেবল নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে, কিন্তু কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা তখনই কোনো বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন তারা সেই সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন সেটা প্রকাশ হলো সে বিষয়ে (প্রতিষ্ঠান) যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে না।
মাহফুজ আনাম বলেন, সংবাদমাধ্যমে কম্পিউটার জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে। সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ও যথাযথ আইনি পক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না। সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা ঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এ লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করতে হবে।সম্পাদক পরিষদের সাত দফা দাবি‘বর্তমান সরকারের পাশ করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্বার্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এ আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে সেগুলো সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।’ উল্লেখ করেন সম্পাদক পরিষদের এ সাধারণ সম্পাদক।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সংবাদ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সমকাল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ।
সাংবাদিক মহল ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের আলোচনার মধ্যেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ পাস হয়। এ আইনের বহুল আলোচিত ৩২ ধারাসহ নয়টি ধারা নিয়ে সাংবাদিক সমাজ আপত্তি জানিয়ে আসছে।
এসব ধারা রেখে আইনটি বাস্তবায়ন হলে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি’ হয়ে উঠবে আপত্তি জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ এর আগেও মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছিল। তখন মানববন্ধন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন আইন, তথ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। সেখানে গণমাধ্যমের আপত্তিতে থাকা ধারাগুলো আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
এরপর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আইন প্রসঙ্গে বলেন, যাদের অপরাধী মন নেই, তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নোংরামি ঠেকাতেই এ আইন করা হয়েছে।