• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সৌদি উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী, উন্নয়ন অভিযাত্রায় হাতে হাত রেখে চলতে চাই

প্রকাশ:  ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:০৪ | আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পারস্পরিক স্বার্থেই আপনাদেরকে বাংলাদেশে ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যাতে উন্নয়ন অভিযাত্রায় একে অন্যের হাতে হাত রেখে চলতে পারি। সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।

বুধবার (১৭ অক্টোবর) সকালে বাদশাহ সৌদ রাজপ্রাসাদে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সৌদি চেম্বার এবং রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্পর্কিত খবর

    সৌদি ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের লাভজনক খাতগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি উদ্যোক্তাদেরকে বিভিন্ন উদীয়মান খাত যেমন— পুঁজি বাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্য প্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বাংলাদেশ।’

    তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে হাল্কা প্রকৌশল শিল্প, ব্লু-ইকোনমি, গবেষণা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পানি ও সমুদ্রসম্পদ, অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্পে এবং সেবামূলক খাত যেমন— ব্যাংকিং এবং অর্থনীতি, লজিস্টিক এবং মানবসম্পদ খাতেও বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই।’

    প্রধানমন্ত্রী এসময় বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সব চেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকা এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিকহারে মুনাফা নিয়ে দেশে ফেরার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। যার মধ্যে রয়েছে— আইন দিয়ে সুরক্ষিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক প্রদান, বিনা শুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ, টেমিট্যান্স অন রয়্যালিটি, শতভাগ ফরেন ইক্যুয়িটির নিশ্চয়তা, লাভ এবং পুঁজিসহ বিনা বাধায় চলে যাবার সুবিধা।

    অন্যান্য সুবিধার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিত প্রাণ জনশক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশের সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে— ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইউ), অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডের বাজারে প্রবেশের সুবিধা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ এবং পানি প্রাপ্তির সুবিধাও রয়েছে। রয়েছে ভালো ক্রেডিট রেটিং, স্বল্প ঝুঁকি এবং দ্রুত প্রযুক্তির গ্রহনযোগ্যতার সুবিধা। এ সবগুলো একত্রে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মুনাফা প্রাপ্তির সুবিধাই নিশ্চিত করেছে।

    বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউট সোর্সিয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। সরকার দেশে ১০টি প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃজনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং দুই অংকের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ, হাইটেক, পর্যটন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে এ ধরনের আরও প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’

    বর্তমান সরকারের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলো (ইপিজেড) শতভাগ রফতানি নির্ভর। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে।’

    শেখ হাসিনা এই শিল্পাঞ্চলগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য দেশে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার কথাও সৌদি ব্যবসায়ীদের জানন।

    দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমরা এখনও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগগুলোর পুরোপুরি সদ্যব্যবহার করতে পারছি না।

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের পরিমাণ এখন ২৫টি প্রকল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, যার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে—কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্য এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, বস্ত্র এবং তৈরি পোশাক, চামড়া, পেট্রো- কেমিক্যাল, প্রকৌশল এবং সেবা খাত।’

    তিনি বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দু’হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছি, যেগুলো বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক তারা ব্যবহার করতে পারবেন।’

    বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান, যেটি উভয়ের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং আকাঙ্ক্ষার একই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের ব্যবসায়িক সম্পর্কের শুরু সেই সপ্তম শতকে, যখন আরবের ব্যবসায়ীরা প্রথমবারের মতো আমাদের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আসেন।’

    প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাহ এবং পবিত্র দু’টি মসজিদের খাদেম সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সেদেশে গিয়ে পৌঁছান।

    প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময় সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে সই হবে। সফরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রিয়াদে নিজস্ব জমিতে নবনির্মিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন এবং জেদ্দায় বাংলাদেশ কনসুলেট ভবনের ভিত্তি স্থাপন করবেন।

    সৌদি আরবে চলতি বছর এটি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফর। সফর শেষে আগামী শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close