• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ

প্রকাশ:  ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:২৯ | আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪১
লক্ষীপুর প্রতিনিধি

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। লক্ষীপুরের কমলনগর ও রামগতিসহ উপকুলবাসীর এক শোকাবহ দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে দেশের উপকুলীয় অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়েছিলো উপকুলের প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। এদের মধ্যে এ দু’উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

এতে গৃহহারা হয়েছিলেন কয়েক লাখ লোক। পানিতে ভেঁসে গেছে লাখ লাখ গবাদিপশু ও ঘরবাড়ি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এতো প্রাণহানির ঘটনা এ দেশে আর কখনো ঘটেনি। সেই দিনের ভয়াবহ দুর্যোগের কথা মনে পড়লে আজও উপকুলীয় এলাকার মানুষের মন ও পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ‘আঁতকে’ ওঠেন উপকুলীয় এলাকার মানুষেরা। প্রায় পাঁচ দশক আগের স্মৃতি এখনো যেনো তাদের চোখের সামনে ভাঁসছে। এলাকা ভারী হয়ে ওঠে স্বজন হারানো মানুষদের বেদনায়।

প্রতি বছরের এই দিনে উপকুলীয় এলাকার মানুষ সেই হারিয়ে যাওয়া লোকজন আর ভয়াল স্মৃতি স্মরণ করে থাকেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেই ভয়ানক দিনের শুরু থেকে আকাশ ছিলো মেঘাচ্ছন্ন, সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো। সন্ধ্যার দিকে প্রবল বাতাসের শো শো শব্দে জনজীবন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। রেডিওতে ৮নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো বারবার। কিন্তু উপক‚লীয় অঞ্চলে রেডিও না থাকায় সাধারণ মানুষ জানতে পারেননি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগাম বার্তা। গভীর রাতে ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার (১৩৮ মাইল) বেগে ঝড়ো হাওয়ার সাথে পাহাড় সমান পানির স্রোতে পুরো উপকুলীয় জনপদ ভেঁসে যায়। যা হানা দেয় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সব ক’টি জেলাতেই। ঘটে যায় দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস। লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যায় গোটা উপকুল। চার দিকে লাশ আর লাশ; লাশের গন্ধে মানুষ লাশের কাছে পর্যন্ত যেতে পারেননি। ৩ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক এলাকায় লাশও মাটি দেয়া যায়নি।

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এ দুর্যোগে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসেব বের করা না গেলেও বেসরকারি হিসেবে ১০ লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে সরকারি হিসেবে প্রাণহানির সংখ্যা বলা হয়েছে ৫ লাখ, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ লাখ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু ৭ লাখ ৮ হাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ হাজার পাঁচশ’টি। ক্ষতিগ্রস্ত উপকুলীয় এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয় লক্ষীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, কক্সবাজার ও পিরোজপুর জেলা।

এই দিনে উপকুলবাসী হারানো স্বজনদের জন্য দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও কুরআনখানিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

এদিকে, ভয়াল ১২ নভেম্বরকে ‘দুর্যোগ দিবস’ ঘোষণার দাবি করে প্রতি বছর বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র-‘র্ডপ’ বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করে আসছে। প্রতি বছরের মতো এবারও র্ডপসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা সভা এবং নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণের আয়োজন করেছে।

/পি.এস

লক্ষীপুর,ভয়াল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close