• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নিরক্ষর রোহিঙ্গাদের হাতে ইংরেজি ব্যানার তুলে দিলো কে?

প্রকাশ:  ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৪৯ | আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গাদের প্রবল আপত্তির মুখে স্থগিত হয়ে গেছে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। গত ১৫ নভেম্বর থেকেই রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন না যাওয়ার পক্ষে রীতিমতো বিক্ষোভ করেছিল তারা। এতে অনির্দিষ্টকালের জন্য থমকে গেছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। বিক্ষোভের সময় তাদের হাতে দেখা গিয়েছিল ইংরেজীতে লেখা অসংখ্য ব্যানার-প্ল্যাকার্ড। এরপর থেকেই প্রশ্ন ওঠে, নিরক্ষর রোহিঙ্গাদের হাতে এসব প্ল্যাকার্ড তুলে দিলো কারা? কার ইন্ধন রয়েছে এর পেছনে?

মাস কয়েক আগে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত রোহিঙ্গা নিবন্ধন প্রকল্পে দেখা গিয়েছিল, রোহিঙ্গারা নিজেদের তথ্যগুলো ঠিকমতো দিতে পারছে না, নিজেদের নামটাই ঠিকমতো লিখতে পারে না বেশিরভাগ লোক। তারা কীভাবে এত সুসংবদ্ধভাবে ইংরেজী ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে ফেরত যেতে আপত্তি জানাচ্ছে!

মানবিকতার খাতিরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার, ধর্ষণ, লুন্ঠন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের খাবার, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেছে এদেশের সরকার।

তবে এত কিছুর পরেও অসংখ্য রোহিঙ্গা স্থানীয়দের জমিজমা নষ্ট করছে, তাদের ক্ষেতের ফসল চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, দেহ ব্যবসা, এমনকি বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। আর এদের ব্যবহার করছে কিছু স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী লোকজন।

রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, এনজিওসহ বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার ছদ্মবেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে পাকিস্তান ভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠন। আল খিদমত ফাউন্ডেশন নামের ওই সংগঠনটিকে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র আল কায়দার সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করেছিলো।

সূত্র জানায়, কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই ২০ জন পাকিস্তানির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই সংস্থাটির কার্যক্রম চলছে। নির্দিষ্ট কোন অফিস না থাকলেও বিভিন্ন রোহিঙ্গার বাসাকে তারা অস্থায়ী বসতি হিসেবে ব্যবহার করছে।

এসব কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গাদেরকে এদেশে স্থায়ীভাবে রেখে দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষতিতে যাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট রয়েছে, তারাই রোহিঙ্গাদের ইন্ধন দেয়ার পেছনে জড়িত কিনা।

অশিক্ষিত রোহিঙ্গারা যেখানে নিজেদের ভাষাই লিখতে-পড়তে পারে না, সেখানে মার্কার পেন দিয়ে ইংরেজিতে লেখা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে সুসংগঠিত ভাবে আন্দোলন করছে কী করে? যদিও ‘অশিক্ষিত প্রমাণ করতে’ ব্যানারে কিছু কিছু বানানে ভুল করা হয়েছে। যেমন- Justic (সঠিক- Justice), মিয়ানমার বানানও ভুল লেখা প্ল্যাকার্ডে। অথচ লেখাগুলো দেখলেই বোঝা যায়, সেটি অত্যন্ত অভ্যস্ত হাতে লেখা।

সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসন রুখতে রোহিঙ্গাদের ভয় দেখানো হয়েছে যে, মিয়ানমারে ফেরত গেলে তাদের আবার হত্যা, নির্যাতন করা হবে, ধর্ম পরিবর্তন করানো হবে, আগুনে পোড়ানো হবে ঘরবাড়ি। আর বাংলাদেশে থাকলে ধর্ম এবং সন্মান নিয়ে থাকতে পারবে, বিদেশী সাহায্যও সবসময় পেতে থাকবে। আর এসব প্রমাণে রোহিঙ্গাদের হাতে নগদ অর্থও তুলে দেওয়া হচ্ছে।

ফলে, একদম শেষ মূহুর্তে এসেও ভেস্তে গেছে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। এভাবে কূটনৈতিকভাবে সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টায় রয়েছে একটি বিশেষ গোষ্ঠী-সেটা স্পষ্ট।

/আরাফাত

রোহিঙ্গা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close