রাবিতে ছাত্রজোট ও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাণিজ্যিক ধারার ‘দহন’ সিনেমার প্রদর্শনীর প্রতিবাদ করায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
শনিবার (০১ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
সম্পর্কিত খবর
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। হামলার ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে একজন সাংবাদিকও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন।
আহতরা হলেন- রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হাসেন মিলন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিল হোসেন, প্রচার সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মোহন্ত, ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ইসরাফিল, কর্মী রাশেদ রিমন, কর্মী আশরাফুল আলম। এদের মধ্যে মিঠুনের হাত ভেঙ্গে গেছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মারধরের শিকার সাংবাদিক হলেন- আলী ইউনুস খান হৃদয়। তিনি খোলা কাগজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
অপরদিকে মারধরকারীরা হলেনÑ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুস্ময়, ইমরান খান নাহিদ, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ শ্রাবণ, কর্মী শেখ সিয়াম, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজাসহ বহিরাগত বেশ কয়েকজন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ‘দহন’ সিনেমাটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এর প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকেই রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেন।
প্রদর্শনী শুরুর মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেন।
তবে আন্দোলন অব্যাহত রাখলে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শাকিলা খাতুনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন প্রক্টর। পরে প্রক্টর সিনেমার দর্শকদের
মিলনায়তনে প্রবেশ করতে বললে আন্দোলনকারীরা দর্শকদের বাধা দেন। এ সময় প্রক্টরের সামনেই আন্দোলনকারী কয়েকজনের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতা সুস্ময়, নাহিদ, ফেরদৌস, শ্রাবণসহ বহিরাগত কয়েকজন।
তারা বিক্ষোভকারীদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রজোট নেতা মিঠুনকে রাস্তার ওপর ফেলে সুস্ময় এলোপাতাড়ি লাথি দিতে থাকে এবং পা দিয়ে মাথা রাস্তার ওপর চেপে ধরে রাখে। সাংবাদিক ইউনুস তাদেরকে আটকাতে গেলে সুস্ময় তার কোমড়ে লাথি দেন। ঘটনাস্থলে প্রক্টর, পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা এগিয়ে আসেননি।
ছাত্রজোটের কর্মী শাকিলা খাতুন বলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নির্দেশেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। প্রক্টর সেখানে উপস্থিত থাকলেও সে এগিয়ে আসেননি। তিনি আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।
সাংবাদিক আলী ইউনুস খান হৃদয় বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করতে দেখে, আমি ছবি তুলতে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকলেও ছাত্রলীগ নেতা সাবরুন জামিল সুস্ময় আমাকে লাথি মারে।’
জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ওই সময় আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের গায়ে হাত তুলেছিলো। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে আটকাতে গিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।’
তবে ছাত্রজোটের কোনো নেতাকর্মী প্রক্টরকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেনি বলে জানান প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি আন্দোলনকারীদের বোঝাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। আন্দোলনকারীদের মধ্যে এক মেয়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রক্টরের উপস্থিতিতেই মারধরের বিষয়ে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।’
প্রসঙ্গত, জাজ মাল্টিমিডিয়া দহন সিনেমাটি প্রদর্শনীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনটি ভাড়া নেয় জাজ। আগামী ১-৬ ডিসেম্বর সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে বলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক পেইজে প্রচারণা শুরু করে।
বিষয়টি জানার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।
/আরিফ