নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত আদেশপ্রাপ্ত হননি: অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এটা তো স্যাটেল ম্যাটার, কোনো ব্যক্তি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কাজেই আমি তো প্রথম থেকেই বলে আসছি, কোনো আদালত এ রকম আদেশ দিতে পারেন না। যে আদেশের ফলে সংবিধানের একটি বিধান অকার্যকর হয়ে যায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের বিষয়ে মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
সম্পর্কিত খবর
মাহবুবে আলম বলেন, বেগম জিয়ার পক্ষে তিনটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। গতকাল সারাদিন ওই পিটিশনের ওপর শুনানি হয়েছে। আজ আদেশে দুজন বিচারপতির মধ্যে একজন বিচারপতি রুল, স্টে ও ডিরেকশন দেয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। অন্য একজন বিচারপতি তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু দুজন বিচারপতি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি, সেজন্য এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি পরবর্তী বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। অর্থাৎ আইনগত অবস্থা যেটি দাঁড়ালো সেটি হলো, নির্বাচনে নিয়ে এখন পর্যন্ত উনি (খালেদা জিয়া) কোনো আদেশপ্রাপ্ত হননি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি মনে করি যে, কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া যায় না।
বিএনপি নেতা ইকবাল মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়ন গ্রহণে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনারা অনেক আগেই দণ্ড স্থগিতের জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই পিটিশন হাইকোর্টে এলাও হয়েছে, এই যুক্তিতে একটি বেঞ্চ তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আদেশ দিয়েছেন।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা কীভাবে নির্বাচন করছেন- জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, নাজমুল হুদার ব্যাপারে আমি জানি না, কোন যুক্তিতে তাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে! তার কাগজপত্র না দেখে আমি কোনো কথা বলতে পারব না। কিন্তু যে কাজগপত্রগুলো আমার সামনে আছে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে, তিনি তো দণ্ডপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি এবং এখনও তিনি দণ্ডভোগ করছেন। তার ব্যাপারে কোনো তর্কের অবকাশ নেই। যেহেতু এখন বিচারাধীন আছে আমি এর বেশি কিছু বলব না।
তিনি আরও বলেন, তবে আমার অভিমত হলো, সাংবিধানিক যে বিধি-বিধান আছে, সেটা হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে যদি নির্বাচন করতে দেয়া হয় তাহলে টোটালি সংবিধান লংঘন হবে।
গত বছর ১০ নভেম্বর ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে সাজা দিয়ে রায় হয়। এরপর চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। ওই রায়ে বলা হয়, রায়ের কপি পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তার মানে তিনি দণ্ডিত, এরপরও তার মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া সংবিধান লংঘন হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তার কাগজপত্র না দেখে আমি বলতে পারি না। কোনো ব্যক্তি যদি সংক্ষুব্ধ হন তিনি আদালতে আসতে পারেন। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তিকে যদি নির্বাচন করার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়, এ আদেশে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে আসতে পারেন। তার কারণ, সাংবিধানের বিধি-বিধান সমুন্নত রাখা সকলেরই দায়িত্ব। এটা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। আমি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলব।
খালেদা জিয়ার এ আবেদনের বিষয়ে শুনানি দ্রুত শেষ করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিশ্চয়ই প্রধান বিচারপতি দ্রুত শুনানির আদেশ দেবেন। যত তাড়াতাড়ি এ বেঞ্চ আদেশে স্বাক্ষর করে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাবেন, আশা করি প্রধান বিচারপতি তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করতে পারবেন কিনা- সে বিষয়ে মঙ্গলবার বিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিভক্ত এ আদেশ দেন।
পিবিডি/এসএম