ড. কামাল, মন্টু, মান্নারা তারেকের নাটাইয়ের টানে চলেন: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আজকে রাজনীতি কোথায় গেছে? কামাল হোসেন সাহেব তারেক জিয়ার নির্দেশে চলেন। মোস্তফা মহসিন মন্টু, মান্না এদের মতো নেতা আজ তারেক জিয়ার নাটাইয়ের টানে চলে, লন্ডন থেকে রশি টানে, আর লন্ডন থেকে রশি ছাড়ে।
বুধবার (১২ ডিসেম্বর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী প্রচারণা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সম্পর্কিত খবর
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি গত তিন-চারদিন ঢাকায় ছিলাম না। ফেনী, কুমিল্লা এবং আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছি। আমি শুধু আপনাদের এতটুকু বলতে পারি, যা সত্য নয় তা প্রচার করে লাভ নেই। ৩০ তারিখ তো আমরা চাপা দিতে পারবো না। যখন ফলাফল বের হবে তখনই বোঝা যাবে। এবার প্রচারণায় গিয়ে এরকম জনস্রোত আমি এর আগে কখনও নৌকার পক্ষে দেখিনি। এটা আসলেই গণজোয়ার।
তিনি বলেন, এই যে মওদুদ আহমদ সাহেব বড় বড় কথা বলেন, তিনি গত পাঁচ বছরেও তার নির্বাচনী এলাকায় যাননি। এখন নির্বাচনের কারণে তিনি যাচ্ছেন—এজন্য তাকে স্বাগত জানাই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলে তো নির্বাচন জমবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমতে হবে, না হলে নির্বাচন কিসের। উনি কিন্তু জমাতে পারছেন না, বিএনপির ভাঙা হাট কোথাও জমছে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, নোয়াখালী-কুমিল্লা এলাকায় কোনও প্রার্থী এখন পর্যন্ত মাঠে নেই, কিন্তু তারা বলছে গণজোয়ার। আমার কাছে বিষয়টি বড় হাস্যকর মনে হয়। এটা গণজোয়ার না, এটা গণভাটা। বিএনপিতে এখন গণভাটা চলছে। জোয়ারের মুখ গত ১০ বছরেও বিএনপি দেখেনি, এমনকি ছোট ঢেউ কোথাও কেউ লক্ষ্য করেনি।
কাদের বলেন, গতকাল মওদুদ আহমদ প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। আমি বিভিন্নজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি, তার জনসভার লোকসংখ্যা ১৫শ’ থেকে ২ হাজার। এটা যদি গণজোয়ার হয়, তাহলে গণজোয়ার কাকে বলে আমি জানি না। নির্বাচনি প্রচারণায় যাওয়ার সময় তাদের হাতে লাঠিসোঁটা-ককটেল এগুলো থাকে। এসবের বেধড়ক ব্যবহার করে আমাদের কিছু কর্মীকে আহত করেছে। এরপরে জনগণের প্রতিরোধের মুখে তিনি উপজেলায় একটি সভা-সমাবেশও করতে পারেননি। গণজোয়ার থাকলে তিনি জনগণের প্রতিরোধ ভেঙে সভাস্থলে পৌঁছাতে পারতেন। তিনি এত বড়মাপের নেতা যে, তার সভাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি চায়ের দোকানে বসে সাত-আটজন নিয়ে সভা করেন। নেতিবাচক জনপ্রিয়তার কারণে বিএনপির রাজনীতি দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচনে থাকুন, আপনারা সরবেন না। আপনাদের শেষ পর্যন্ত থাকা দরকার। আপনাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু সেটা ৩০ তারিখে জনগণ বুঝিয়ে দেবে। সেটা দেখার জন্য হলেও আপনাদের থাকা উচিত।
আওয়ামী লগি সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেউ কেউ মতলবে আছেন, একসময় এই অজুহাত, ওই অজুহাত দিয়ে বলবেন—নির্বাচনের পরিবেশ নেই। হারা যে কত শোচনীয় হারা হবে, সেটা আপনারা টের পাবেন। বহু আসনে ২০০৮ সাল থেকেও খারাপ অবস্থা হবে। আপনাদের সেই শোচনীয় পরাজয়ের জন্য অপেক্ষা করুন, শান্তিপূর্ণ পথে আসুন। নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ দেবেন না।
কাদের বলেন, পল্টনে যে নারকীয় তাণ্ডব তারা শুরু করেছিল, সেটা এখনও তারা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে পাঁচবালিয়া ইউনিয়নে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হানিফ নামের যুবলীগের এক কর্মীকে প্রথমে চোখের মধ্যে মরিচের গুঁড়া দিয়েছে, এরপর ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়েছে, এরপর গুলি করে তাকে স্পটে হত্যা করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিএনপি আবারও প্রমাণ করলো তারা সন্ত্রাসী দল। গতকালকে (মঙ্গলবার) যে দুটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে সে দুটি হত্যাকাণ্ড বিএনপি করেছে। এটার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে, এটা কোনও সাজানো বানানো কথা নয়। এরপরও আজকে আপনারা বলছেন সারাদেশে অত্যাচার নিপীড়ন চলছে।
তিনি আরও বলেন, মওদুদ সাহেব অভিযোগ করেছেন— আমি নাকি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও প্রটোকল ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছি। এখানে সাংবাদিকরা প্রত্যক্ষ করেছেন, আমার জনসভায় কমপক্ষে লোক হয়েছে ৭০ হাজার আর মওদুদ সাহেব যে জনসভায় যেতে পারেননি, তিনি সেখানে পথে পথে সহিংসতা চালিয়েছেন। কাজেই এখন গণভাটাকে গণজোয়ার বলছে বিএনপি। কাজেই আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি—আমি কোনও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি না। আমার সঙ্গে একজন মন্ত্রী হিসেবে ও একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যে নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা, সেই হিসাবে আমার সঙ্গে কিছু পুলিশ থাকে। নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমার গাড়ির পতাকা নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আবারও চ্যালেঞ্জ করে বলছি— এ গাড়ি সরকারি গাড়ি নয়। মওদুদ সাহেবের সঙ্গেও পুলিশ আছে, এটা তার নিরাপত্তার জন্য। তিনি মিথ্যাচার করছেন, জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। তিনি ভেবেছিলেন তার নির্বাচনি এলাকায় গেলে হাজার হাজার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে আসবেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— শমী কায়সার, শাকিল খান, তানভীন সুইটি, অরুণা বিশ্বাস, শাহরিয়ার নাজিম জয়, রোকেয়া প্রাচী, শুভ্র দেব, ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলাম আতিক প্রমুখ।
/পিবিডি/আরাফাত