• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণের দিন আজ

প্রকাশ:  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ, ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একের পর এক হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর রাজাকাররা। শিক্ষক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সাংবাদিক বেছে বেছে জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে বর্বর কায়দায়। দেরিতে হলেও নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখনো অনেক খুনির বিচার চলছে।এর মধ্য দিয়ে জাতি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের তখন চূড়ান্ত পর্যায়। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী প্রায় পর্যুদস্ত। তখনই ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তালিকা ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্মটি করে ঘাতক চক্র। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিজয়ী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দেয়া যাতে ভবিষ্যতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এ সময় সান্ধ্য আইনের মধ্যে রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে অপহরণ করে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

১৪ ডিসেম্বর চারদিকে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের রব, ঠিক তখনই পাকিস্তানি ঘাতকরা মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, সন্তোষ ভট্টাচার্য, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজুদ্দিন হোসেন, আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, মনিরুজ্জামান, আনোয়ার পাশা, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, রশিদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, ডা. আলীম উদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, নাজমুল হক, খন্দকার আবু তালেব, ডা. আমির উদ্দিন, সাইদুল হাসান প্রমুখ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এ ছাড়া অনেক বুদ্ধিজীবীকে তুলে নিয়ে যায়। যাদের আজ পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বরকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আজ পুরো জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে সেইসব সূর্যসন্তানকে- যাদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, আমরা পেয়েছি স্বাধীন মানচিত্র। গত কয়েক বছর ধরে ভিন্ন আবহে পালিত হয় দিবসটি। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অনেকের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে ইতিমধ্যে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী সংগঠন, নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন সংগঠনের দিনব্যাপী আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে দেশকে জ্ঞানভিত্তিক, প্রজ্ঞাময় সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বিজয়ের প্রাক্কালে হানদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এই কুখ্যাত মানবতা বিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছি। কোনো ষড়যন্ত্রই জাতিকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। দল-মত নির্বিশেষে ’৭১-এর ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত চক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এটাই হবে আমাদের অঙ্গীকার।

কর্মসূচি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এদিন সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টা ৬ মিনিটে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহিদ পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ প্রতিবারের মত এবারো দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্য সহকারে এই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ ও পালন করবে।

এ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে-সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। এ ছাড়াও এদিন বিকাল বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে দলটি। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পিবিডি-এনই

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close