• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

উপজেলা নির্বাচনে আ’লীগের প্রস্তুতি

হাইব্রিড ও কাউয়াদের জন্য দুঃসংবাদ!

প্রকাশ:  ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৪:০৩ | আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৪:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য সমাপ্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনের রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যেই বেজে ওঠেছে উপজেলা নির্বাচনের ঢোল। ফেব্রুয়রির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করা হবে। মার্চ মাসে পাঁচটি ধাপে স্থানীয় সরকার পরিষদের এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। সংসদ নির্বাচনের বিপুল বিজয়ের পর টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের আনন্দে না মজে, উপজেলা নিবাচনে সবার আগে মাঠে নেমে পড়েছে ক্ষমতাসীনরাই। সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলাতেও নজিরবিহীন সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে চায় তারা। তবে এ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।

এরই মধ্যে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে হাইব্রিড এবং উড়ে এসে জুড়ে বসা ‘কাউয়া’দের মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিতদের। অন্তত ১২ বছর আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলে, তার মনোনয়নের সম্ভাবনা কম।

টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন আওয়ামী লীগ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বর্ণযুগ পার করছে। যে কোনো দল সুসময়ে থাকলে সেখানে সুবিধাবাদী সম্প্রদায় ভিড় করে। আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন সময় এদের ‘কাউয়া বলে উল্লেখ করেছেন। দল কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি পড়লে এইসব সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবাদীদের খুঁজেও পাওয়া যায়। তাই আগামী দিনের মুখোমুখি হতে উপজেলা নির্বাচনে হাইব্রিড এবং উড়ে এসে জুড়ে বসাদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিতদের। অন্তত ১২ বছর আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলে, তার মনোনয়নের সম্ভাবনা কম। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য জনমত জরিপ চালাবেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকেও মতামত নেবেন।

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার পর্যায়ের এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভীষণ উজ্জীবিত। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে এমপি পদে মনোনয়নবঞ্চিতরা এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার পাবেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

উপজেলা নির্বাচনের আগে দলে অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করা হবে জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা অন্যদল থেকে লোক এনে প্রার্থী করতে চাই না। যেহেতু জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করেছে, তাই অন্যদলের সুযোগ সন্ধানীরা মনে করতে পারে, মনোনয়ন পেলেই উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইসচেয়ারম্যান হওয়া যাবে। এই সুযোগ সন্ধানী কাউয়াদের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের এককভাবে করার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী।’ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে মাঠ জরিপের ভিত্তিতে। গতবারের মতো এবার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনমত জরিপের মাধ্যমে জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করবেন। এর আগে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা সংগ্রহ করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় একই তথ্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ চট্টগ্রাম ও সিলেট, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঢাকা ও ময়মনসিংহ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক রংপুর ও রাজশাহী, আবদুর রহমান বরিশাল ও খুলনা বিভাগের প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকতে পারেন। দায়িত্বপ্রাপ্তরা সার্বক্ষণিকভাবে দলের জেলা এবং উপজেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।

চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সহায়তা দেবেন আট সাংগঠনিক সম্পাদক। এর মধ্যে আহমদ হোসেন সিলেট, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ময়মনসিংহ, বি এম মোজাম্মেল হক রংপুর, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বরিশাল, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম চট্টগ্রাম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন খুলনা, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাজশাহী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢাকা বিভাগের কার্যক্রম দেখভালের বেলায় সহায়তা দিতে পারেন।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। উপজেলা পরিষদ আইন অনুসারে উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে এবং নতুন গঠিত উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা গঠনের পর ৩৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গতবারের উপজেলা নির্বাচন আইনত নির্দলীয় হলেও এবার হবে দলীয় প্রতীকে। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে উপজেলা পরিষদের প্রার্থী মনোনয়নের এক বিশাল কর্মযজ্ঞও শুরু করতে হবে। সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি কমিশন আগে থেকেই নিয়ে রেখেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই ১৯ জানুয়ারি আগের নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয় ধাপে ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়।

এনই

আওয়ামী লীগ,উপজেলা নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close