• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এনআইডি সেবা বন্ধ ১২ দিন

প্রকাশ:  ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনা নোটিসে গত ১০ জানুয়ারি থেকে বন্ধ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা। সার্ভার বন্ধ থাকায় এই ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ এই সেবা নিতে পারেনি।

অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানানোর প্রয়োজনই মনে করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিনা নোটিসে ইসি প্রায় ১১ কোটি নাগরিকের তথ্য সম্বলিত সার্ভারে ত্রুটির কথা বলে সেবা বন্ধ রেখেছে।

আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) এনআইডি শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে এনআইডি সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কবে সার্ভার চালু হবে তা তাদের জানানো হচ্ছে না।

এতে করে মাঠপর্যায়ের অফিসসহ আগারগাঁওয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে বিভিন্ন স্থান থেকে সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা পড়ছেন ভোগান্তিতে।

আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেয়া হয়। সেখানে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের ভিড় দেখা যায়। সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেন।

ইসি সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ এনআইডি সেবা নিয়ে থাকেন। গত ১০ জানুয়ারি সার্ভারের কাজ চলছে উল্লেখ করে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয় ইসির ইন্টারনাল ওয়েবসাইটে। তবে সেখানেও কবে থেকে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু হবে তা উল্লেখ নেই।

ফিরে যাওয়াদের মধ্যে অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন জরুরি ভিত্তিতে এনআইডি সংগ্রহ করতে। তাদের তারাই বিপত্তির মধ্যে বেশি পড়েছেন। অনেকে আবার পেনশন, মৃত্যুসনদ সংগ্রহের মতো জরুরি কাজও করতে পারছেন না।

সেবা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে চারবার এসেও সেবা পাইনি। কবে কার্ড নিতে পারবো সে তথ্যও কেউ দিতে পারছেন না। আবার ইসির কল সেন্টার থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

ফিরে যাওয়াদের মধ্যে অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন জরুরি ভিত্তিতে এনআইডি সংগ্রহ করতে। তাদের তারাই বিপত্তির মধ্যে বেশি পড়েছেন। অনেকে আবার পেনশন, মৃত্যুসনদ সংগ্রহের মতো জরুরি কাজও করতে পারছেন না।

জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে আসা এমন ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, একটা নোটিশ দেওয়া হলেও আমরা জানতে পারতাম। এভাবে হঠাৎ বন্ধ রেখে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলা ঠিক হয়নি।

মানিকগঞ্জ থেকে হারানো এনআইডি তুলতে আসা দিলীপ কুমারের সঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হারানো এনআইডি পেতে জিডি করে টাকা জমা দিয়েছি। গত সপ্তাহে এলে পরের সপ্তাহে আসতে বলা হয়। আজ (সোমবার) এসেও কার্ড পেলাম না। বলা হচ্ছে, সার্ভারে সমস্যা। সার্ভার কবে ঠিক হবে, কার্ড কবে পাব, আল্লাহই ভাল জানেন।’

দিলীপ কুমার বলেন, এখন ব্যাংক থেকেও টাকা তুলতে গেলে এনআইডি লাগে। অথচ সেটি নিতে পারছি না। কমিশনের হেল্পলাইন ১০৫ এ ফোন করলে সারাক্ষণ ব্যস্ত দেখাই। ধরলেও সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারে না। টাকা খরচ করে আজ সরাসরি এসেও খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। এর চেয়ে কষ্টের আর কি আছে?

নিজ এলাকায় সেবা না পেয়ে জামালপুর সদর থেকে কয়েকদিন যাবৎ ইসিতে ঘুরছেন মো. আশরাফ আলী। তিনি বলেন, এনআইডি হারিয়ে ফেলেছি। কোনো ফটোকপিও নেই। এনআইডি নম্বরও মনে নেই। কার্ড তোলার জন্য জিডি করতে পারিনি। ফলে কার্ড তোলার জন্য আবেদনও করতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, ছোটখাটো ব্যবসা করি। সরকার থেকে কিছু অনুদান পাব। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। নতুন করে অ্যাকাউন্ট করতে পারছি না, এনআইডি নেই বলে। বারবার ঘুরে নিজেকে চরম অসহায় লাগছে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এটার বিষয়ে আমি আপডেট না। তাই এটা নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না। সার্ভার একটা টেকনিক্যাল বিষয়। ইচ্ছা করলে কেউ ডাউনও করতে পারে, ইচ্ছা করলে কেউ আপও করতে পারে। ইচ্ছা করলে এগুলো করা যায়। এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন এ বিষয়ে বলেন, সার্ভারে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের ডেটা আছে। পার্লামেন্ট ইলেকশন গেলো, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নতুন যারা ভোটার হচ্ছেন তাদের কাজ করা, তারপর মাইগ্রেশন হচ্ছে সেগুলোর কাজ করা। সবগুলোই কিন্তু এই সার্ভারের মাধ্যমে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সার্ভারে আমাদের কয়েকটি সার্ভিস প্রয়োজন হয়। একটা হলো ওরাকল সার্ভিস। যেটি আমেরিকা থেকে আমাদের সার্ভিস দিয়ে থাকে। তারপর বিপিএন, এএফআইএস আছে। ওরাকল থেকে যে সার্ভিসটি আমরা নিচ্ছি এ সার্ভিসটিতে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। আমাদের একটি রিকভারি সার্ভারও আছে। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে ওই সার্ভারেও কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের যে টেকনিক্যাল টিম আছে তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর প্রায় ১০৩টি কোম্পানি এরমধ্যে ডেলকো কোম্পানি আছে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আছে, এসব সেবা চালু রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

শুধু নতুন ভোটার হওয়া, বায়োমেট্রিক এটি এখনও আমরা আপ করতে পারিনি। আর আমাদের মাঠ পর্যায়ে উপজেলা বা থানা যে সার্ভিসটি আছে এটি আমরা আপ করতে পারিনি। আমাদের টেকনিক্যাল টিম যেটি জানিয়েছে মধ্যে এটি আপ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। আর এটি হলে আগের মতোই সব সার্ভিস পাওয়া যাবে।

এনআইডি সেবা যে বন্ধ রয়েছে নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো প্রয়োজন ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ঘোষণা দিয়েছি। উপজেলা বা ইলেকশন কমিশনের ইটিআই ভবনে এ বিষয়ে নোটিশ করা আছে। যারা সার্ভিসটা নিতে আসবেন তাদের জানানোর জন্যই এটি অফিসগুলোতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সমস্যার কারণ সম্পর্কে বাতেন বলেন, সার্ভারের মেয়াদের একটা বিষয় ছিল। প্রতিনিয়ত আমাদের ভোটার হচ্ছে, কারেকশন হচ্ছে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে হতে এতো বেশি মাইগ্রেশন হচ্ছে। এজন্য ডেটা সার্ভারের স্পেসেও প্রভাব পড়ছে। এজন্য আমরা আরেকটি প্রজেক্ট নেওয়ার কথা ভাবছি। যেটাতে ডেটার জন্য স্পেস বাড়ানো হবে এবং আমাদের যে সার্ভিসগুলো আছে সেগুলো আপডেট করা হবে। ওখানে সার্ভার কেনার এবং আপডেটের বিষয়ও আছে। এটি সম্পন্ন হলে আমরা আরো অনেক বেশি নিরবিচ্ছিন্ন সার্ভিস দিতে পারবো বলে আশা করি। এক মাসের মধ্যে প্রজেক্ট প্রোপোজাল যাবে। বাকিটা সরকারের উপর নির্ভর করবে।

এক মাসের মধ্যে প্রজেক্ট প্রপোজাল যাবে। বাকিটা সরকারের উপর নির্ভর করবে বলেও জানান তিনি।

এতে কত টাকা লাগতে পারে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে মার্কেট ভেল্যু বেড়ে গেছে। তারপর আমাদের স্পেস বাড়বে। এটি এখনো ঠিক করা হয়নি। হলে আপনাদেরকে জানানো হবে।’

পিবিডি/আরিফ

এনআইডি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close