• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের স্মারক অনুষ্ঠান

কবিতাপাঠের সূচনায় সালেম সুলেরী, সমাপণীতে নির্মলেন্দু গুণ

প্রকাশ:  ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৩৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কবিতাপাঠের পাশাপাশি ছিলো চারটি বই-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান। নান্দনিক আয়োজনটির উদ্যোক্তা বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ। পাবলিক লাইব্রেরির ভিআইপি মিলনায়তনে বসেছিলো লেখক-সংস্কৃতিসেবীদের মিলনমেলা। অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারীর সভাপতিত্বে উদ্বোধক ছিলেন কবি-সাংসদ কাজী রোজী। প্রধান আলোচক শুদ্ধতার কবি অসীম সাহা। সূচনাকাব্য পাঠ করেন কবি-কথাকার সালেম সুলেরী। সমাপণী কবিতা পড়েন প্রধান অতিথি কবি নির্মলেন্দু গুণ।

আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘তর্জনীর তীর’ শীর্ষক কবিতাটি ছিলো সূচনায়। এটি পাঠকালে কবি সালেম সুলেরী পটভূমি তুলে ধরেন। বলেন, বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখি ১৯৭০-এর ২৩ অক্টোবর। বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারী জেলার ডোমারে। সেটি আমার পৈতৃকবাস, বয়েস কৈশোরে বাঁধা। বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন ৭০-এর নির্বাচনী সভায়। আঙ্গুল উঁচিয়ে তর্জনী তুলে বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই দৃশ্যপট আমার মধ্যে ছায়া ফেলে। পরবর্তীতে লিখে ফেলি ‘তর্জনীর তীর’ কবিতাটি।

সম্পর্কিত খবর

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর কবিতা পড়েন কবি নির্মলেন্দু গুণ। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছিলো প্রধানমন্ত্রীর ৭১ তম জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে কবিতা লিখেছেন কবি গুণ। ১৫ আগস্ট, পঁচাত্তরের পর ঢাকা থেকে নেত্রকোণা পলায়ন। সাধু বাবার আশ্রমে থেকে বিকল্প বঙ্গবন্ধু খুঁজতে থাকা। অবশেষে চার দশকের ব্যবধানে আরেক বঙ্গবন্ধুকে প্রাপ্তি। তিনি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার পটভূমিটি এমনটিই।

    দুটো স্মারক কবিতাই দর্শক হৃদয় দিয়ে উপভোগ করে। অনুষ্ঠানে চারটি কাব্যগ্রন্থের পাঠ উন্মোচিত হয়। প্রকৌশলী একিউএম আবু জাফর এগুলোর লেখক। বয়েস প্রবীণ হলেও লেখনীতে নবীনের ছাপ। বইগুলোর শিরোনাম বেশ দীর্ঘ। যেমন, ‘ও হে মহাজন, খুঁজি তোমায় সারাক্ষণ’। আরেকটি, ‘সমাজের সব অন্ধকার দূর হোক মুছে যাক’।

    অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্যোক্তা শামীম আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সৈয়দ শামসুল হকের কথাসাহিত্যিক-পতœী আনোয়ারা সৈয়দ হক। বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত কবি-সংগঠক আসলাম সানী। এবং চারগ্রন্থের লেখক একিউএম আবু জাফর। সম্মানিত অতিথি ছিলেন দু’জন। তিনবাংলা’র গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট কবি-কথাকার সালেম সুলেরী। ভারত-বাংলার লেখক-গবেষক মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ড. শাহাদত হোসেন নিপু। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তিনি।

    আলোচনা ছাড়াও কবিতা পাঠে অংশ নেন প্রায় ১৫ কবি। সর্বকবি হাসনাইন সাজ্জাদী, আলী নিয়ামত, মোদাচ্ছের আলী, রুহুল মাহবুব, আইরিন পারভিন, এম আর মনজুর, কুমুদিনী, মান্না রায়হান, লুৎফর রহমান, ইমরান পরশ, শাহাদত জয়, সুজন হাজং, শিশির বিন্দু, সালাহউদ্দিন তুহিন প্রমুখ।

    মধ্য অক্টোবরের আয়োজনটিতে কবিতা বিষয়ে বহুমাত্রিক আলোচনা হয়। প্রধান আলোচক কবি অসীম সাহা ব্যাকরণের কথা বলেন। গীতল ধারার বাংলা কবিতাকে অধিক পাঠ্য বলে উল্লেখ করেন। সম্ভাষক-বক্তা ছিলেন কবি আসলাম সানী। বলেন, সাহিত্য ও রাজনীতির সেতুবন্ধ চিরজীবী হোক। কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, সাহিত্যও বড়ো শিক্ষক। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন কবি-কথাকার সালেম সুলেরী। নিউইয়র্কে তিনবাংলা’র সাহিত্যসভায় কবি নির্মলেন্দু গুণের উপস্থিতির স্মৃতিচারণও করেন। বলেন, বাংলাদেশ-ভারত-প্রবাসভিত্তিক তিনবাংলা’য় অনুবাদ-বিপ্লব জরুরী। সাহিত্যচর্চায় বিশ্বমান সম্পর্কেও জোর সচেতনতা প্রয়োজন। চারটি বই-এর প্রকাশনার লেখক একিউএম আবু জাফর। বলেন, ছিলাম প্রকৌশলী, এখন লেখক সবার দোয়া চাই। উদ্বোধক কবি কাজী রোজী বলেন, অনুষ্ঠান-প্রকাশনা অনেক হলো। এবার সাহিত্য-ব্যাকরণসমেত কবিতার কর্মশালা চাই।

    প্রধান অতিথি কবি নির্মলেন্দু গুণ বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিষয়ে। বলেন, সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি মহান মুক্তিযোদ্ধা ও অকপট সত্য কথা বলেন। আমি ছাত্রজীবনে দুইবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলাম। শুনে রাষ্ট্রপতি বললেন, আমি ফেল করেছি তিনবার। এবং আমরা ফেল করেছি বলেই ‘বাংলাদেশ’ পাশ করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই সুন্দর দেশটি আমরা পেয়েছি। অনুষ্ঠান সভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী বলেন, আমরা ধন্য। কারণ বঙ্গবন্ধুর মহান কণ্ঠস্বরের স্মরণেই ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ’ প্রতিষ্ঠিত।

    # স্মারক অনুষ্ঠানে পঠিত সূচনা কবিতাটি: তর্জনীর তীর সালেম সুলেরী

    (১৯৭০-এর ২৩ অক্টোবরে মহা-মুজিবকে প্রথম দেখার পর)

    ধনুক শরীরে তার কেঁপে ওঠে তীক্ষè তর্জনীর তীর।

    পড়ন্ত রোদ্দুর গায়ে মেখে তিনি ঘোষণা করেন

    আগামী দিনের লাল ইতিহাস-

    আর কোনো শক্তি নয়,

    আগামী সূর্যের আড়মোড়া ভেঙে দিয়ে

    দেখবে নিজেরা সব আলোর নাচন পতাকায় পতাকায়।

    নতুন প্রজন্ম তার অভিজ্ঞতার খাতায়

    বারুদ মাখানো ক্লান্তি নিয়ে ঝুঁকে পড়ে ফেললো নিঃশ্বাস।

    বিশ্বাস করেছি যাকে- তাঁকে রেখেছি প্রাণের প্রহরায়।

    তাঁকে ছুঁয়েছি কৈশোরে, ডোমারের গ্রামীণ জনসভায়।

    তাঁকে মঞ্চে রেখে উনিশশত সত্তরে, সূর্য ডুবে গেলো

    যেন বাংলাদেশ হয়ে জেগে উঠবার জন্যে...।

    তাঁকে দেখেছি তখন

    হন্যে হয়ে তাকাতে, পরতে পাঞ্জাবিতে

    কালো হাতাহীন কোট,

    তারপর-

    সাদাকালো’র মিশ্রণে তিনি হয়ে গেলেন তৃতীয় বিশ্ব।

    তিল ধারণের জায়গায় দাঁড়িয়ে মেজদা’র হাতে হাত।

    বৃষ্টিস্নাত সে সেঁজুতি সন্ধ্যা, সুদিন-সন্ধান।

    গায়ের চাদরে মাথা ঢাকলেও সর্বাঙ্গ ভিজলো।

    আমি ছাতা বলে চিৎকার করবার আগেই

    জাদুকরের ভঙ্গিতে অদ্ভুত মুদ্রায় কাঁপালেন ঠোঁট।

    আমি তোমাদেরই লোক- বলতেই মঞ্চের দুরন্ত সামিয়ানা

    যেন বৃষ্টির বিপক্ষে এক বৃহত্তর ছাতা, ঢাকলো সমস্ত মাঠ।

    বিতর্ক যুগের পর কৈশোরের হাফপ্যান্ট নিয়েছে বিদায়।

    তারুণ্যের কালো চোখে বৃষ্টি এবং বিদ্যুৎ-বিদ্রোহ বিকম্পন!

    সবপেয়েছির দেশে খুঁজে ফিরি

    বিজয়ী জাতির পরাজিত নেতাদের মৃত্যুর দলিল!

    আর খুঁজি গণতন্ত্র, ঘাতক নিরোধে রক্তচক্ষু বাঙালির,

    খুঁজি সেই ধনুক শরীরে কেঁপে ওঠা তীক্ষè তর্জনীর তীর।

    # (ঈষৎ সংশোধিত)
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close