নিম্নমানের চাল ও গম নিয়ে আবারো অভিযোগ পুলিশের
পুলিশ সদস্যদের চাল ও গম সরবরাহ করা হয় সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে। ভর্তুকিমূল্যে দেয়া এসব চাল ও গমের মান নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো এ-সংক্রান্ত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, কঠোর পরিশ্রম শেষে নিম্নমানের এসব খাবারের কারণে পুলিশ সদস্যদের মনোবলের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।
একই অভিযোগ করে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশের প্রায় সব ইউনিট। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রতি মাসে ছয় টন চাল তেজগাঁও সিএসডি গুদাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। অক্টোবরের চাল উত্তোলন করতে গেলে সিদ্ধ চাল অপ্রতুল থাকায় আতপ চাল নেয়ার জন্য গুদাম কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করে। চালের প্রয়োজন থাকায় নিরুপায় হয়ে অক্টোবরে এক টন আতপ চাল উত্তোলন করা হয়। কিন্তু এ ধরনের চালের ভাত খেতে অনীহা প্রকাশ করেন পুলিশ সদস্যরা।
সম্পর্কিত খবর
চালের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে আরো কিছু সমস্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা চাল অত্যন্ত নিম্নমানের। এসব চাল লালচে বর্ণের ও মোটা। পাশাপাশি এ চালে অধিকাংশ সময় পোকা পাওয়া যায়। কখনো কখনো চালে ফাঙ্গাস, ময়লা ও কাঁকর থাকে। এছাড়া সরবরাহকৃত চালে মরা চালের পরিমাণ বেশি থাকে।
চালের পাশাপাশি অভিযোগ আছে গম নিয়েও। এ সম্পর্কে চিঠিতে বলা হয়েছে, সরবরাহকৃত গমে অধিকাংশ সময় পোকা থাকে। গমে প্রচুর ময়লা ও ছত্রাক থাকে। ময়লা ও কাঁকরযুক্ত গম ভাঙানোর পর ভ্যাপসা গন্ধ পাওয়া যায়। ওই গমের আটা দিয়ে রুটি তৈরির পর তা কালো রঙ ধারণ করে এবং এর স্বাদ তেতো হয়।
পুলিশ সদস্যদের অভিযোগের পর নমুনা পরীক্ষায়ও নিম্নমানের চাল ও গম সরবরাহের প্রমাণ মিলেছে। জানা গেছে, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে গত সেপ্টেম্বরে নমুনাস্বরূপ চাল ও গম উত্তোলন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর। ওই নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চাল ও গমের মান বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি। ফলাফলে দেখা যায়, বিএসটিআই অনুমোদিত মানদণ্ড অনুযায়ী এসব চাল গ্রেড-৩ ও গম গ্রেড-২-এর অন্তর্ভুক্ত।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা অনেক সময় দৈনিক ১৬-১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করেন। কাজের পরিধি বিবেচনায় তাদের মধ্যে উন্নত মানের খাবার বিতরণ জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিউটিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের খাবার ব্যারাক থেকেই সরবরাহ করা হয়। দুপুরের খাবার রান্না করা হয় বেলা ১১টায়। আর রাতের খাবার রান্না করা হয় বিকাল ৫টার মধ্যে। ওই খাবার যখন তাদের কাছে পৌঁছে, ততক্ষণে ভাত নরম হয়ে যায়। আর রুটির ক্ষেত্রে সমস্যা আরো প্রকট হয়। স্বাদহীন ও লাল বর্ণের গমের আটা দিয়ে তৈরি করা রুটি পুলিশ সদস্যদের কাছে পৌঁছার আগেই শক্ত হয়ে যায়।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, রেশন সরবরাহের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি প্রথা অনুসরণ করে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। ওয়ারেন্টি প্রথা বলতে গুদামে যে খাদ্যশস্য আগে আসবে, সেটি আগে সরবরাহ করা হবে। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাত-আট মাস আগের চাল ও গম পুলিশকে রেশন হিসেবে নিতে হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে পুলিশের রেশনিংয়ে ওয়ারেন্টি প্রথা বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছিল পুলিশ। ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিল করা না হলেও ওই চিঠির জবাবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুলিশের জন্য উন্নত মানের চাল ও গম সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিল ব্যতীত পুলিশকে উন্নত মানের চাল ও গম দিতে আপত্তি জানিয়েছে। পরে বিষয়টি নজরে এনে বাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ভর্তুকিমূল্যে সংগ্রহ করা চাল ও গম পুলিশের সব ইউনিটের সদস্যসহ এনএসআই, এসএসএফ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের রেশনিদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। এসব ইউনিটসহ পুলিশের মোট ১২২টি ইউনিট থেকে মতামত নিয়ে জানা যায়, ওই চাল ও গম অতি নিম্নমানের। এ অবস্থায় পুলিশ বিভাগের প্রতিটি স্তরে একটি নেতিবাচক ধারণা জন্মাচ্ছে যে, ওএমএস কার্যক্রমের যে চাল সরবরাহ করা হয়, একই চাল পুলিশের জন্যও খাদ্যগুদাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। খাদ্যগুদামের চাল ও গমের গুণগত মান গুদামে থাকা অবস্থায়ই নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিল করা হলে রেশন হিসেবে উন্নত মানের চাল ও রেশন সংগ্রহ করা যাবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (লজিস্টিক) মো. রেজাউল করিম বলেন, চাল ও গম নিয়ে বেশ কয়েকটি ইউনিট থেকে অভিযোগ এসেছে। এগুলো চিঠি আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। শিগগিরই বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ব্রাজিল থেকে দুই লাখ টন পচা ও পোকায় খাওয়া গম আমদানি করা হয়। পরে ওই গম ভর্তুকিমূল্যে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সরবরাহ করা হয়। সে সময়ই পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর নিম্নমানের এসব গম গ্রহণে আপত্তি জানায়।