• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নতুন এমপিওভুক্তির প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু

প্রকাশ:  ০৩ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট ওর্ডার) প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশোধিত এমপিও নীতিমালার খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত হয়ে আসার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন চাওয়া হবে। এরপর যাছাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের টানা আন্দোলন শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই কার্যক্রম শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কারণে এমপিও প্রত্যাশীদের যাছাই-বাছাই করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি)।

সম্পর্কিত খবর

    এ মুহূর্তে থোক বরাদ্দ পেলে দুই থেকে আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারে। ছয় মাস পর ২০১৮-২০১৯ সালের বাজেটে আরও আড়াই হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

    জানা গেছে, সংশোধীতে নীতিমালা অনুযায়ী ভালো ফল, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি বিষয় মূল্যায়ন করে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচন করা হবে। ২০০৯ সালের ১৬ জুন সর্বশেষ নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর আর কোনো উদ্যোগ ছিল না। বর্তমানে সারাদেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

    এমপিও সংক্রান্ত মাউশির করা প্রস্তাবে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, সারাদেশের এমপিওবিহীন সাত হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা লাগবে। এর মধ্যে এক হাজার ২২৭টি নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২১৯ কোটি ৭১ হাজার ৩০০ টাকা, এক হাজার ৮৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩৬৮ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা, এমপিওভুক্ত তিন হাজার ২৭৫টি নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিকে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ টাকা, ৫১৮টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জন্য ৩৫৭ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা এবং এমপিওভুক্ত এক হাজার ৩৩টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজকে ডিগ্রি স্তরে উন্নীত করে এমপিওভুক্ত করতে ৭১৭ কোটি ৩৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ টাকা লাগবে। ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করতে বছরে লাগবে ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জন্য লাগবে ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা, আর নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য লাগবে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ টাকা।

    শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ (বিদ্যালয়) এ বিষয়ে বলেন, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণে আমরা প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের আশ্বাসে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

    তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির নীতিমালা সংশোধন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত হয়ে আসলে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।

    শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান বলেন, নতুন এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত মাউশি থেকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে সারাদেশে এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করে অপেক্ষমাণ পাঁচ হাজার ২৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোতে কর্মরত এমপিওভুক্তির যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৭৫ হাজার। তাদের সবাইকে এক অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্ত করা কঠিন। এ জন্য পর্যায়ক্রমে যোগ্য সবাইকে এমপিওভুক্ত করা হবে।

    তিনি বলেন, এ মুহূর্তে থোক বরাদ্দ পেলে দুই থেকে আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারে। ছয় মাস পর ২০১৮-২০১৯ সালের বাজেটে আরও আড়াই হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

    মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া সংশোধিত নীতিমালার খসড়ায় জনসংখ্যা অনুপাতে সংশ্নিষ্ট এলাকায় এমপিওর প্রাপ্যতা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কয়েকটি শর্তজুড়ে দেয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত হতে চাইলে সংশ্নিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি থাকতে হবে। ভাড়া ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।

    তবে নীতিমালা অনুসারে প্রাপ্য না হলেও দেশের পিছিয়ে পড়া এলাকা, চা-বাগান, হাওর, পার্বত্য এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। প্রত্যেক উপজেলায় কমপক্ষে একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে।

    মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামছুল হুদা বলেন, ২০১০ সালের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার সময় এমপিওভুক্ত না করার অঙ্গীকারনামা নেয়া হয়। সে অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি কোনো এমপিও বা অনুদান পাওয়ার কথা না। নিজেদের ব্যয়ে এসব প্রতিষ্ঠান চালানোর কথা ছিল।

    তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অনেক সহনীয়। এ কারণে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দুর্দশার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের এমপিওভুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

    এদিকে, এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীতে টানা আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত চারদিন ধরে তারা আমরণ অনশন পালন করছেন। আর টানা নয়দিন ধরে চলছে তাদের অবস্থান। এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া এই অনশন তারা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

    উল্লেখ্য, সর্বশেষ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ১৮০টি। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি, মাদরাসা সাত হাজার ৬১৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনবাবদ প্রতি মাসে ৯৪১ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার ৭১১ টাকা সরকারের ব্যয় হচ্ছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close